• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

জগৎজয়ী বাংলাদেশি এক নারীর গল্প

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৮ মার্চ ২০২০  

‘তোমাকে দিয়ে এ কাজ হবে না, এটা খুবই কঠিন কাজ’ এ কথাটা প্রতিটি নারীকেই কোনো না কোনো ক্ষেত্রে শুনতে হয়। সে বাঁধাকে অতিক্রম করে কিছু নারী সমাজের বুকে অনন্য দৃষ্টি স্থাপন করেন। তেমনই একজন নাজমুন নাহার; যিনি বাংলাদেশের পতাকাকে বহন করে নিয়ে গেছেন ১৪০টি দেশে। লক্ষ্য তার ২০০টি দেশে লাল-সবুজের পতাকা পৌঁছে দেয়ার। সাহসী এ নারী সর্বাধিক দেশ ভ্রমণকারী প্রথম বাংলাদেশি নারী।

 

অসংখ্য দুর্গম পথ পাড়ি দিতে হয়েছে নাজমুন নাহারকে। মরতে মরতে বেঁচে গিয়েছেন অনেকবার। আঘাত পেতে পেতে উঠে দাঁড়িয়েছন, রক্তাক্ত হয়েছেন। বহমান নদীর স্রোতের সঙ্গে তার যে লড়াই, তা বিয়ার গ্রিলসের চেয়ে কম কিসের! আফ্রিকার জঙ্গলের ভেতর ঘুটঘুটে অন্ধকারে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিয়েছেন। তিনি নারী হয়েও নির্ভয়ে ঘাসের উপর ঘুমিয়ে রাত পার করেছেন। খাবারের যন্ত্রণা তো আছেই, পুড়তে হয়েছে মরুভূমির প্রচন্ড তাপমাত্রায়ও।

 

এত কিছুর পরও নাজমুন নাহার থামেননি। বিচক্ষণ পরিকল্পনার ম্যাপ সাজিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ থেকে দেশান্তরে। তার এ যাত্রার খবরে অনেক পুরুষেরই মনে প্রশ্ন জানে, ছুটছেন তিনি কেমন করে? নাজমুন নাহার বলেন, এ যাত্রা কতটা বিপদসংকুল ছিল তা বলে বুঝানো যাবে না। তবে আমি মনে করি, পৃথিবীতে যা কঠিন তা সুন্দর। পশ্চিম আফ্রিকা ভ্রমণের সময়ও আমি মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। মৃত্যুকে জয় করে আমি বাকি সব দেশ ভ্রমণের স্বপ্ন দেখছি এখনও। দুরহ পথ সাধ্য করেছি। বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা আমার কাছে সবচেয়ে বড় শক্তি।

 

নাজমুন নাহার জানান, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের অনেক কঠিন সীমান্ত থেকেও কঠিনতর সীমান্ত এলাকা ছিল এই ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো। সড়ক পথের অবস্থা ভালো থাকলেও এখানে অনেক ধরনের ছিনতাই, খুন, কিডন্যাপ, মাদক চালান হওয়ার কারণে সেখানকার দেশগুলো সফর অতটা সহজ ছিল না। গুয়াতেমালার শহরে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসেছেন তিনি।

 

মহাপর্বত, মহাপ্রলয়, মহাসমুদ্রের বাঁধা; নগর-বন্দর-শহরের দীর্ঘপথ আর মানবসৃষ্ট অনেক সমস্যা অতিক্রম করে স্বদেশের পতাকা হাতে দেশে দেশে গিয়েছেন নাজমুন নাহার। গত ২০ বছর অভিযাত্রা করছেন ১৪০ টি দেশে। এ পরিব্রাজক জানান, পরবর্তী অভিযাত্রার ম্যাপ করেছেন আফগানিস্তান, পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, উজবেকিস্তান এবং কিরগিজস্তান পর্যন্ত। খুব দ্রুতই তিনি ১৫০ তম দেশ ভ্রমণের মাইলফলকে পৌঁছাবেন।

 

নাজমুন নাহার ১৯৭৯ সালের ১২ ডিসেম্বর লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার গঙ্গাপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই নাজমুন নাহার মেধাবী এবং বিনয়ী হিসাবে সবার কাছে পরিচিত। নন্দনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশের পর কৃতিত্বের সঙ্গে জেলা বৃত্তি নিয়ে উত্তীর্ণ হন।

 

দালালবাজার নবীন কিশোর (এনকে) উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এসএসসি এবং লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজ থেকে ১৯৯৬ সালে এইচএসসি পাশ করেন এ নারী পরিব্রাজক। এরপর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ২০০৬ সালে শিক্ষাবৃত্তি নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার জন্য সুইডেনে যান। সুইডেনের লুন্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এশিয়ান স্টাডিজ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর