• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

মধুপুরে জলাবদ্ধতা মুক্ত অর্ধলাখ মানুষ,চাষাবাদে আওতায় ১৫শত একর জমি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৯ মে ২০২২  

টাঙ্গাইলে মধুপুরে বিএডিসি’র আওতাধীন ১ হাজার ৫০০ একর আবাদি জমির পাশে ছিল সাড়ে ৯ অংশজুড়ে কিলোমিটার দুই খিরাই ও গুজা খাল। এ দুই খালটি দীর্ঘ দিন জলাবদ্ধতায় গলার কাটা হয়েছিল মানুষের। এ খাল সংস্কার ও পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় বৃষ্টি ও বর্ষা মৌসুমে পানিতে আবাদি জমিতে ধান চাষাবাসহ নানা ফসল উৎপাদনে চরম ভোগান্তিতে পড়তো কৃষকরা।

শুধু তাই নয়, এতে করে ইরি ও বোরো মৌসুমে ক্ষতিগ্রস্ত হতো ধান। বিপাকে পড়তেন কৃষকরা। এমন ভোগান্তিতে খাল দুটি সংস্কারের জোর দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। সংস্থারের দাবির প্রেক্ষিতে ভোগান্তি কমাতে খাল খননের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)। পরে দুই খাল খনন করেন বিএডিসি কর্তৃপক্ষ।

উপজেলার অরণখোলা, কুড়াগাছা ও আউশনারা ইউনিয়নের ১ হাজার ৫০০ একর কৃষি জমি আবাদযোগ্য জমিতে ফসল উৎপাদন করতে ও অর্ধলাখ মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পেয়েছে খিরাই খাল ও গুজা খাল এলাকার লোকজন। খাল খনন করায় টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মো. ড. আব্দুর রাজ্জাকে ধন্যবাদ জানিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী।

মধুপুর বিএডিসি সূত্রে জানা গেছে, খাল ২ দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ভরাট হয়ে গিয়ে ছিল। যার কারণে কোন কোন স্থানে দৃশ্যমানই ছিল না ফলে এ খাল ২টি পাশে ১ হাজার ৫০০ একর জমির পানি পাশের হাওদা বিলে নিষ্কাশিত হতে পারতো না।

এর কারণে ভারী বৃষ্টি ও বর্ষায় এসব আবাদি জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হত এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হতো। তাছাড়া জমিগুলো জলাবদ্ধ থাকার কারণে রোপা আমণ আবাদ করতে পারতো না কৃষকরা।

কৃষকদের দাবি পরিপ্রেক্ষিতে চলতি অর্থবছরে বিএডিসি’র চলমান ‘ময়মনসিংহ বিভাগ ও ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলার ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্পের’ আওতায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে সাড়ে ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ খিরাই খাল ও ৭০ লাখ টাকা ব্যায়ে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ গুজা খাল পুনঃখনন করা হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মজিবুর রহমান বলেন, খাল খননের ফলে খালের গভীরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বিস্তীর্ণ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের পাশাপাশি রোপা আমন ও বোরো মৌসুমে খালে পর্যাপ্ত পানি প্রবাহমান থাকবে। শুকনো মৌসুমে এ পানি এলাকার কৃষক সেচ কাজে ব্যবহার করতে পারবে। উৎপাদন খরচও কম হবে।

ভুক্তভোগি কৃষক আলী আকবর ও আব্দুস ছাত্তার আকন্দসহ আরো অনেকে বলেন, দীর্ঘদিন নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল খিরাই ও গুজা খাল। এতে করে আমরা জমিতে চাষাবাদ করতে পারতাম না। এখন খাল ২টি খনন করায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধাতা থেকে মুক্তি পেয়েছি আমরা এলাবাসী। এতে কৃষি জমি চাষাবাদের আর সমস্যা হবে না।

বিএডিসি’র (ক্ষুদ্র সেচ) প্রকল্পের টাঙ্গাইল জোনের সহকারী প্রকৌশলী আশিক জামান বলেন, খাল খননে বিস্তীর্ণ কৃষি জমির যোগাযোগ সহজ হয়েছে। খালের ২ পাড়ের জমির পানি নির্গমনের জন্য ইউপিভিসি পাইপ দিয়ে খালের প্রয়োজনীয় স্থানে আউটলেট নির্মাণ করা হয়েছে। এতে হাওদা বিলের অনেক দিনের জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিএডিসি’র ‘ময়মনসিংহ বিভাগ ও ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইল ও কিশোরগঞ্জ জেলার ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্প’ এর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মুহাম্মদ বদরুল আলম বলেন, ‘কৃষিমন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে খিরাই ও গুজা খাল পুন:খননের উদ্যোগ নিয়ে খাল পরিদর্শন করে খনন করা হয়েছে। খাল পাড়ের জমির জলাবদ্ধতা আর থাকবে না এবং বোরো মৌসুমে খালের জমাকৃত পানি কৃষকরা সেচ কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।’

এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল-১ (মধুপুর-ধনবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে খাল খননে এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল। দাবির প্রেক্ষিতে মধুপুরে খিরাই ও গুজা খাল খননে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিএডিসিকে নির্দেশ দেয়া হয়।

তিনি আরও জানান, খননের ফলে খালের গভীরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফসল আনা নেওয়া ও পারাপারের জন্য একটি ফুটব্রীজ নির্মাণে দাবি করেছে এলাকাবাসী। ফুটব্রীজ নির্মাণের কাজ দ্রুত করা হবে।’

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর