• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

মানবতা বিরোধী অপরাধে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মজিদ মাদারীপুরে গ্রেফতার

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি  রাজাকার মো. আব্দুল মজিদকে (৮০) মাদারীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।
গ্রেফতারকৃত আব্দুল মজিদ নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানার পূর্ব মৌদাম এলাকার মৃত মিরাজ আলীর পুত্র।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার (অধিনায়ক) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ এসব তথ্য জানান। 
সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর  সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) ফারজানা হকসহ র‌্যাবের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে  র‌্যাব-৩ এর একটি দল বুধবার দিবাগত রাতে মাদারীপুর জেলার সদর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেফতার করে।
র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার জানান, গ্রেফতারকৃত মজিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতা বিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭০ সালে গঠিত জামায়াত ইসলামীর কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষিত তালিকা মোতাবেক গ্রেফতারকৃত আসামি মজিদ নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানা জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক সম্পাদক ছিল। 
র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরও জানান, মজিদ রাজাকারদের প্রধান বাহিনী আল-বদর পুর্বধলা রামপুর থানা কমিটির প্রধান ছিল। পুর্বধলা রামপুর মৌদাম গ্রামে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকসহ তার আপন দুই ভাই এবং পাঁচজন চাচাতো ভাই মিলে একই বাড়িতে মোট সাতজন মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণের পাশাপাশি এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করত। এজন্য আল-বদর কমিটির প্রধান আব্দুল মজিদের আক্রমনের শীকার হন তারা। ১৯৭১ সালে ২১ আগস্ট দুপুরে আব্দুল মজিদ তার দলবল নিয়ে বাড়হা গ্রামের আব্দুল খালেকের বাড়িতে আক্রমন করে। সে সময় বাড়িতে অবস্থানরত আব্দুল খালেকসহ মুক্তিবাহিনীর সকলকে মজিদ ও তার সহযোগিরা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। হত্যার পর বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেকের লাশটি পাশ্ববর্তী কংস নদীতে ফেলে দেয় তারা এবং অপরাপর মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ কোকখালী নদীতে বস্তাবন্দি করে ফেলে দিয়ে আসে। এই হত্যাকান্ডের পাশাপাশি তারা আব্দুল খালেকের বাড়িতে লুটপাট চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে। এ ঘটনায় মৃত আব্দুল খালেকের ভাই আব্দুল কাদের বাড়ি থেকে পালিয়ে কোন রকমে প্রাণ বাঁচায়। এঘটনার পর আব্দুল কাদের ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে ঘাতক আব্দুল মজিদসহ ৪ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে। পরবর্তীতে মামলার তদন্তে আরও তিন জনের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত সাতটি অভিযোগই প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমাণিত হলে ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সাতজন আসামীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করে। এটি মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতা বিরোধী অপরাধ তথা যুদ্ধাপরাধের মামলায় ৩৬তম রায়। বিচার চলাকালে এই মামলার দুই জন আসামি (আহম্মদ আলী ও আব্দুর রহমান) মারা যায় এবং রায় হওয়ার পর পলাতক অবস্থায় মারা যায় আরও দুই আসামি (রদ্দিন মিয়া ও আব্দুস সালাম বেগ)।  এ মামলার আরও দুই জন আসামি (আব্দুল খালেক তালুকদার ও কবির খাঁ) বর্তমানে পলাতক রয়েছে।
র‌্যাব জানিয়েছে, ২০১৫ সালে আব্দুল মজিদ তার নিজ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসে এবং ফকিরাপুল এলাকায় কিছুদিন আত্মগোপনে থাকে। এরপর তার আত্মীয়ের সহযোগিতায় মাদারীপুরে গিয়ে আত্মগোপন করে একটি কামিল মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে পলাতক জীবন শুরু করে। ২০১৫ সাল থেকে মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন সে কখনই আদালতে হাজিরা দেয়নি।
র‌্যাব সূত্র জানান, গ্রেফতারকৃত মজিদ ১৯৬৮ সাল থেকে জামায়াত ইসলামের সাথে ওঁতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। ১৯৭০ সালে ঘোষিত কমিটিতে সে নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা থানা জামায়াত ইসলামের সাংগঠনিক সম্পাদক হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পূর্বধলা আল-বদর থানা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করে। একাত্তরে সে ওই এলাকায় অসংখ্য বাড়িতে হামলা চালিয়ে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতা বিরোধী কার্যক্রম চালায়। মজিদ ও তার দলের অত্যাচারে পূর্বধলা থানার মুক্তিবাহিনী অতিষ্ট ছিল। এভাবেই সে ১৯৭১ সালে ২১ আগস্ট আব্দুল খালেকের বাড়িতেও হামলা চালিয়ে নৃশংসভাবে গুলি করে আব্দুল খালেক ও তার সহযোগী ৯ জন মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করে। 
আত্মগোপনে থাকাকালে সে সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলত।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর