• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

স্বপ্ন বাস্তবায়নে অটিস্টিকদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন ডা. জাহাঙ্গীর

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২৩  

স্বপ্ন বাস্তবায়নে অটিস্টিকদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম। তিনি শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক (শিশু বিভাগ)। তার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সহযোগিতা করে যাচ্ছেন সহধর্মীনি ডা. জাহিদা বেগম সুইটি। তিনি একই হাসপাতালের প্রভাষক (এনাটমি বিভাগ)। তাদের স্বপ্ন পূরণ হিসেবে টাঙ্গাইলে যাত্রা শুরু করে ‘প্রত্যাশা স্পেশাল স্কুল এন্ড থেরাপি সেন্টার’। সেখানে অটিস্টিক শিশুদের চিকিৎসা দেয়া হয়।
ব্যয়বহুল এই চিকিৎসা নিতে অনেকেই ছুটে যান ঢাকা। অনেকেই আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে চিকিৎসা করাতে পারেন না। এসব চিন্তা ও সন্তানের শারিরিক সমস্যা দেখে স্বপ্ন জাগে টাঙ্গাইলে একটি প্রতিষ্ঠান করার। সেই লক্ষে ২০১৭ সালে টাঙ্গাইল শহরের সাবালিয়াতে নিজের বাসায় শুরু করেন। নাম দেন ‘প্রত্যাশা স্পেশাল স্কুল এন্ড থেরাপি সেন্টার’। ২০১৮ সালে এটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে রেজিস্ট্রেশন পায়।
ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলমের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ‘প্রত্যাশা স্পেশাল স্কুল এন্ড থেরাপি সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার গল্প।
২০১১ সালের ১১ ডিসেম্বর দুপুর ১২টা। তার স্ত্রী প্রথম সন্তান প্রসব করেন। সন্তানের নাম রাখেন জাইদি। সন্তানকে নিয়ে হাসি-খেলার মধ্যদিয়ে তাদের সময় কাটতে থাকে। দেখতে দেখতে দেড় বছর কেটে যায়। তিনি লক্ষ্য করেন, জাইদি অতিরিক্ত ভয় পায়। সব কাজে অতিরিক্ত সচেতন, ওর খেলনার সামগ্রী জুতা, পাতিল, চামিচ। সময় চলে যায় কিন্তু সে কথা বলে না। সবাই বলেন অনেকে দেরিতে কথা বলে। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। শুরু হয় জাইদিকে নিয়ে যুদ্ধ। এই ডাক্তার, সেই ডাক্তার দেখানো, চিকিৎসার জন্য অনেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সবাই বললেন ঠিক হয়ে যাবে। কিছু কমন কথা এবং প্রচুর ওষুধ। কিছুতেই কিছু হলো না। জাতীয় মানসিক সাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগি অধ্যাপক ডাক্তার হেলাল আহমেদ প্রথম বললেন, আপনার ছেলে সবার থেকে একটু আলাদা, ওকে ঢাকা নিয়ে যান। টাঙ্গাইলে এর চিকিৎসা হবে না। তারপর তিনি বললেন, আপনার ছেলে অটিস্টিক। এ কথা শুনে আঘাত পেলেও তারা স্বামী-স্ত্রী কেউ ভেঙে পড়েননি।
সেদিনই ঢাকা চলে গেলেন। বিভিন্ন সেন্টারে যোগাযোগ করলেন। অবশেষে জাইদির চিকিৎসা শুরু হলো। মিরপুর crp তে জাইদিকে occupational এবং speech therapy দেওয়া শুরু হলো। ভর্তি করা হলো ঢাকা প্রয়াশ স্কুলে। অনেক কঠিন যুদ্ধ। ঢাকা আসা-যাওয়া, থাকা, প্রচুর অর্থ খরচ। ঢাকাতে তিনটা বছর কাটে।
এদিকে নিজেদের চাকরি, সংসার, ছোট বাচ্চা, সব মিলিয়ে হাঁপিয়ে উঠেন তারা। ফিরে আসেন টাঙ্গাইল। কিন্তু এখানে কোন special school speech therapy এবং occupational therapy নেই। তিনি শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হওয়ায় প্রায় লক্ষ্য করতেন, তার ছেলের মতো টাঙ্গাইলে আরো অনেক শিশু রয়েছে। তাদের অভিভাবক সন্তানের চিকিৎসা ঠিকভাবে করাতে পারছে না। ঢাকায় নিয়মিত চিকিৎসা করানো অনেকের জন্য কঠিন। তাছাড়া এ চিকিৎসা ব্যয়বহুলও। এ অবস্থায় তার মাথায় একটি স্বপ্ন বাসা বাধে- টাঙ্গাইলে এরকম একটা theraty center হবে। যার মাধ্যমে তার সন্তানের সাথে সাথে অন্যদের সন্তান চিকিৎসা পাবে। শুরু করে দেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের কাজ।
ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের দেশে occupational এবং speech therapist এর সংখ্যা খুবই কম। অনেক কষ্টে therapist পেয়ে গেলাম। তারপর আল্লাহর অশেষ রহমতে একজন স্পেশাল এডুকেশন শিক্ষক পেলাম। আস্তে আস্তে এগিয়ে যেতে থাকে প্রত্যাশা। বর্তমানে ঢাকা থেকে ছয়জন প্রশিক্ষিত থেরাপিস্ট আসছেন। তাদের পাশাপাশি লোকাল চারজন কাজ করছেন।
বর্তমানে সাবালিয়াতেই একটি বাসা ভাড়া নিয়ে সেন্টারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে তার নিজস্ব জায়গায় প্রত্যাশা স্পেশাল স্কুল এন্ড থেরাপি সেন্টারের পরিকল্পিত ভবন নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন।
বিশেষ শিশু যারা ঠিকমত কথা বলতে পারেনা, অস্বাভাবিক আচারণ করে, ঠিকমত হাটা-চলা করতে পারেনা, অনুভূতির সমস্যা, অতিরিক্ত ভয় পাওয়া, অতিরিক্ত অস্থির প্রকৃতির- তাদেরকে অতি যত্ন সহকারে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞ থেরাপিস্ট দ্বারা থেরাপি দেওয়া হয় প্রত্যাশা স্পেশাল স্কুল এন্ড থেরাপি সেন্টারে। গড়ে ৮০ জন শিশু এখানে চিকিৎসা নিচ্ছে বলে জানান সেন্টার কর্তৃপক্ষ।
ডা. মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, বিশেষ শিশুটিকে আড়ালে না রেখে প্রকাশ করুন, বিকশিত হবেই।’ এটাই আমাদের শ্লোগান এবং এই মূল মন্ত্রটিকে ধারণ করেই আমাদের অগ্রযাত্রা। শারীরিক প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সাহায্য করা।’

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর