• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

৫০ হাজার টাকা বিনিময়ে ভাগ্নিকে খুন, গ্রেফতার ৪

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৩০ মে ২০২৩  

মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে অন্তঃসত্ত্বা ভাগ্নিকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের ৫ বছর পর রহস্য উদঘাটন করেছে সিরাজগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পাশাপাশি খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত চারজনকে আটক করা হয়েছে।
হত্যাকাণ্ডের শিকার অন্তঃসত্ত্বা নারী বিউটি খাতুন সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রামের সাচ্চু মিয়ার মেয়ে।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রামের স্বপন ব্যাপারী, মমিন, মমিনের স্ত্রী আনু বেগম ও ওমর ফারুক ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে গ্রেফতার হন।

সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. রেজাউল করিম এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১৩ মে রাতে বিউটি খাতুন তার নিজ ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। রাতে বিউটির মা কোমেলা খাতুন প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে দেখেন তার মেয়ের ঘরের দরজা খোলা। সে সময় বিউটিকে নাম ধরে ডাকলে বিউটি কোন সাড়া-শব্দ না পায় না। পরে চিৎকার দিলে বিউটির পরিবারের সদস্যরা ঘরের আলো জ্বালিয়ে বিউটিকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন।

সংবাদ পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত করেন। এ ঘটনায় সাচ্চু মিয়া বাদী ২০১৮ সালের ১৪ মে এনায়েতপুর থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ দিন তদন্তের এক পর্যায়ে গত ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে ওমর ফারুককেকে গ্রেফতার করা হয়। ফারুকের দেওয়া তথ্য মতে ও প্রযুক্তিগত সহায়তায় চলতি বছরের ২৩ ও ২৫ মে রাতে সন্দেহভাজন ৩ জনকে আটক করা হয়। পরে গ্রেফতারকৃতরা হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে আসামিরা উল্লেখ করেছেন, ২০১৪ সালে এনায়েতপুরের কোচগাঁও গ্রামের আব্দুল্লাহের সঙ্গে বিউটি খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের ৩ বছর পরে স্বামীর সঙ্গে তালাক হয়। বিউটি বাবার বাড়িতে থাকাবস্থায় প্রতিবেশী ওমর ফারুকের সঙ্গে মোবাইলে কথা হতো। এক পর্যায়ে ফারুক বিয়ের প্রস্তাব দিলে বিউটি না করেন।

একই সময়ের মধ্যে বিউটির আরেক ছোট বোন আলোমতির স্বামীর পরিবারের সঙ্গে ঝামেলা হয়। পরে বিউটির বাবা সাচ্চু মিয়া তাদের পার্শ্ববর্তী খোকশাবাড়ি গ্রামের স্বপন ব্যাপারীকে বিষয়টি সমাধান করার জন্য অনুরোধ করেন। স্বপনের মাধ্যমে বিউটির ছোট বোন আলোমতির স্বামীর বাড়ির সমস্যার সমাধান হওয়ায় বিউটির পরিবারের সঙ্গে স্বপনের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। বিউটির ছোট খালা আন্না মাদক ব্যবসা করায় তিনি বিউটির মোবাইল দিয়ে স্বপনের সঙ্গে মাঝে মধ্যেই কথা বলতেন।

অপরদিকে, স্বপন মাদক সেবী হওয়ায় মাঝে মধ্যে স্বপন আন্নার বাড়িতে যাওয়া আসা করতেন এবং মাদকসেবন করতেন। সেই সুবাদে বিউটির সঙ্গেও স্বপনের দেখা সাক্ষাৎ হতো এবং মোবাইলে কথাবার্তা হতো। এমতাবস্থায় বিউটির বাবা অর্থাৎ বাদী সাচ্চু মিয়া স্বপনকে বলেন- তার প্রতিবেশী ওমর ফারুক বিউটিকে ডিস্টার্ব করে তাকে একটু শাসন করে দিতে হবে।

স্বপন এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তিনি ওমর ফারুককে শাসন করেন। এতে সম্পর্ক আরো ভাল হয়। এক পর্যায়ে স্বপন, বিউটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করতেন। কিন্তু স্বপন সরাসরি বিউটিকে প্রস্তাব দিতে না পেরে আন্নাকে জানান। পরবর্তীতে স্বপন আন্নার মাধ্যমে বিউটির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করেন।

বিউটির ছোট খালার বাড়িতে স্বপন নিয়মিত বিউটির সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতেন। বিউটির সঙ্গে স্বপনের অনুমান ২ মাস সম্পর্ক চলার পরে বিউটিকে বিয়ে করার জন্য স্বপনকে চাপ দেন। স্বপন বিবাহিত হওয়ায় বিউটিকে বিয়ে করতে রাজি না হলে বিউটি স্বপনকে জানান তিনি অন্তঃসত্ত্বা। 

পরবর্তীতে বিউটি স্বপনের ওপর আরো বেশি চাপ সৃষ্টি করলে স্বপন কী করবে তা ভেবে না পেয়ে ঘটনার ১০-১২ দিন আগে প্রতিবেশী ওমর ফারুককে ডেকে বিষয়টি বিউটিকে হত্যা করা নিয়ে আলোচনা করেন। কিন্তু ওমর ফারুক রাজি না হলে স্বপন ওমর ফারুককে ভয়-ভীতি দেখান।

স্বপন বিউটির সঙ্গে ওমর ফারুকের পূর্বের সম্পর্কের বিষয় দিয়ে ব্লাকমেইল করে হত্যার পরিকল্পনায় সঙ্গে নেন। পরে স্বপন বিউটির ছোট খালা আন্নার কাছে বিউটিকে হত্যা করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু আন্না তার নিজের ভাগ্নিকে হত্যা করতে রাজি না হলে স্বপন তাকে টাকার লোভ দেখিয়ে রাজি করান।

তাৎক্ষণিক স্বপন ২০ হাজার ওমর ফারুক আর ৩০ হাজার টাকা দেন আন্নাকে। তখন বিউটির ছোট খালা তার আপন মেজো বোন আনু বেগমকে ২০ হাজার টাকা দিয়ে বিউটিকে হত্যা করতে সহায়তা করতে বলেন। আনু বেগম তার স্বামী মোমিনের সঙ্গে কথা বলে তাকে রাজি করান। 

তাদের পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক গত ১৩ মে ২০১৮ সালে রাত সাড়ে ১১টার দিকে বিউটিদের বাড়ির পাশে সবাই একত্র হন। পরে স্বপন, ওমর ফারুক, আনু, আন্না ও মোমিন বিউটির ঘরে ঢুকে ঘুমন্ত অবস্থায় বিউটিকে হাত-পা ও মাথা চেপে ধরে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে কৌশলে পালিয়ে যান তারা।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর