• রোববার ০৬ অক্টোবর ২০২৪ ||

  • আশ্বিন ২০ ১৪৩১

  • || ০১ রবিউস সানি ১৪৪৬

ধর্ষণের দায়ে সশ্রম যাবজ্জীবন, দিতে হবে ধর্ষিতার আজীবন ভরণপোষণ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪  

বিয়ের আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণে সন্তান পেটে আসলে অস্বীকার এমন অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় এক আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে হাইকোর্ট।
বিচারপতি মোঃ রেজাউল হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চের দেয়া ১১ পৃষ্ঠার রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। 
বিচারিক আদালতে আসামি খালাস পেলেও দমে যাননি ভিকটিম। রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আইনি লড়াই চালিয়ে গেছেন।
বিয়ের কথা বলে ভিকটিমকে হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের টিলাগাঁও এলাকার ছিদ্দিক আলীর ছেলে কাছুম আলী একাধিকবার ধর্ষণ করে। ২০০৫ সালের ৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ সেন্ট্রাল হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান তিনি। এতে গর্ভে সন্তান থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন। গর্ভধারণের পর কাছুম আলী তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করেন। আসামির পরিবারের সাথে ভিকটিম যোগাযোগ করলেও তারা বিষয়টি সুরাহা করেননি। এরপর ২০০৬ সালের ২১ জুলাই কাছুম আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তিনি। এর মধ্যে ভিকটিম একটি সন্তানের জন্ম দেন। 
ওই মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০২১ সালের ২০ জানুয়ারি হবিগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ আসামিকে খালাস দিয়ে রায় দেয়। এ রায় বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন ভিকটিম। ওই মামলার পর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিল। বিষয়টি চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি ও ২০ ফেব্রুয়ারী শুনানি শেষে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি সেই রুল মঞ্জুর (এ্যাবসিলিউট) ঘোষণা করে রায় দেয় উচ্চ আদালত। উচ্চ আদালত রায়ে বিচারিক আদালতের দেয়া রায় রদ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়। 
রায়ে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত কাছুম আলীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীত ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হলো। তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ১ লক্ষ টাকা জরিমানা যা ভিকটিমকে দিতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এ জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাকে আরো ৬ মাস কারাদ- ভোগ করতে হবে। আসামিকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। 
রায়ে আরো বলা হয়েছে, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৩ ধারা অনুযায়ী ধর্ষিতার আজীবন ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ধর্ষকের ওপর বর্তাবে। রায়ে বলা হয়, সন্তানের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে বিধায় আইনের ১৩(১)(গ) ধারায় বিধান কার্যকর করতে এ রায় ও আদেশের অনুলিপি সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক বরাবর পাঠাতে হবে। জেলা প্রশাসক এই বিষয়ে ১৩(২) ধারায় প্রদেয় অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করবেন এবং সেটি প্রদানের যথাযথ নির্দেশ দেবেন ও তা বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। প্রয়োজনে তিনি উচ্চ আদালতের সাহায্য নেবেন। আর সন্তানটি তার মায়ের নিকট বা মাতৃকুলের আত্মীয়ের কাছে থাকতে পারে বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। 

দৈনিক জামালপুর