• শুক্রবার ০১ ডিসেম্বর ২০২৩ ||

  • অগ্রহায়ণ ১৬ ১৪৩০

  • || ১৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

অবশেষে ক্লাস করার অনুমতি পেল শিক্ষার্থী নাঈম

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৯ নভেম্বর ২০২৩  

অবশেষে শিক্ষা কার্যক্রমে ফিরেছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার দি বাডস্ রেসিডেনসিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি মিডিয়ামের নার্সারি শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈম উর রহমান। মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) সকালে প্রায় ১৪ মাস পর সে তার ক্লাসে ফিরেছে। 

দীর্ঘ দিন পর সে ক্লাস করতে পারবে, এই খুশিতে উৎফুল্ল হয়ে উঠে নাঈম। তার বাবা আব্দুর রহমানের চোখে-মুখেও ছিল আনন্দের ঝিলিক। এদিন সকাল ১০টায় শিশু নাঈম স্কুলের অধ্যক্ষ মো. জাহাঙ্গীর আলমের হাত ধরে শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে। সঙ্গে সঙ্গে সহপাঠীরা তাকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানায়। 

এর আগে সোমবার নাঈমকে স্কুলে পাঠাতে তার পরিবারকে চিঠি দেন বিদ্যালয় প্রধান মো. জাহাঙ্গীর আলম। ১৩ নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি'র এক বিশেষ সভার এই সিদ্ধান্তক্রমে নাঈমের মা ডা. নাদিরা খানমকে দেওয়া চিঠিতে বলা হয়, আপনার ছেলে নাঈম উর রহমানকে ১৪ নভেম্বর থেকে শ্রেণি কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করার অনুমোদন দেওয়া হলো। শ্রেণি কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য আপনার ছেলেকে ১৪ নভেম্বর স্কুলে পাঠনোর অনুরোধ করা হলো।

২০২২ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ‘স্কুলের উপযোগী নয়, কথা বলতে পারে না, পেন্সিল ধরতে পারে না, পড়াশোনায় মনোযোগী না এবং তার দুষ্টুমির কারণে অন্য শিশুদের পড়ালেখায় ব্যাঘাত ঘটে’- নানা অজুহাতে শিশু নাঈমকে শ্রেণিকক্ষ থেকে বের করে দেওয়া হয়। 

নাঈম ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে স্কুলের পোশাক পরে স্কুল ব্যাগ নিয়ে যমজ ভাইয়ের সঙ্গে স্কুলের গেট পর্যন্ত যায়। কিন্তু নাঈমের প্রবেশাধিকার না থাকায় বিষণ্ন মনে ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে স্কুলের প্রধান গেটে। ফলে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বারবার শিশুটির অভিভাবক স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাননি। বাধ্য হয়ে নাঈমের বাবা আব্দুর রহমান চলতি বছরের ৫ মে স্কুল কর্তৃপক্ষকে আইনি নোটিস পাঠান। স্কুল কর্তৃপক্ষ ২২ মে নোটিসের জবাব দেয়।

পরে শিশুটির বাবা আব্দুর রহমান ২৬ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ১ অক্টোবর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও ২ অক্টোবর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর লিখিত আবেদন করেন। 

গত ৮ নভেম্বর শিশু শিক্ষার্থী নাঈম উর রহমানকে ক্লাসে ফিরিয়ে নিতে ও তার ওপর চলমান মানসিক নিপীড়ন বন্ধ করতে সুপ্রিম কোর্টের ১১ জন সিনিয়র আইনজীবী শিক্ষা সচিব, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্টদের আইনি নোটিস পাঠান। নোটিস পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে শিশু নাঈমের ওপর চলমান অমানবিক ও মানসিক নিপীড়ন বন্ধ করতে এবং তাকে ক্লাসে ফিরিয়ে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। অন্যথায় নোটিসদাতারা উচ্চ আদালতের দারস্থ হবেন বলে উল্লেখ করেন। 

গত রবিবার (১২ নভেম্বর) শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিষয়টি নিয়ে দি বাডস্ রেসিডেনসিয়্যাল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে শোকজ করা হয়। শোকজে তিন কার্যদিবসের মধ্যে সন্তোষজনক জবাব না দিলে অধ্যক্ষর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়।

এ নিয়ে সোমবার স্কুলে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ সভা। সভায় শিশু নাঈমকে শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর