• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিন আজ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১  

বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যৈষ্ঠ কন্যা ও স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫ তম জন্মদিন আজ।

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের মধুমতি নদী তীরের প্রত্যন্ত পাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন বাংলাদেশ উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  

বাংলাদেশ উন্নয়নের জননী শেখ হাসিনা বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান। তার শৈশব কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গীপাড়ায় বাঙালির চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে, দাদা-দাদির কোলে-পিঠে। 

পিতা শেখ মুজিবুর রহমান তখন জেলে বন্দি, রাজরোষ আর জেল-জুলুম ছিল তার নিত্য সহচর। রাজনৈতিক আন্দোলন এবং রাজনীতি নিয়েই শেখ মুজিবুর রহমানের দিন-রাত্রি, যাপিত জীবন।

 বাঙালির মুক্তি আন্দোলনে ব্যস্ত পিতা মুজিবের দেখা পেতেন কদাচিৎ।

টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায় শুরু হয় শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর তার পরিবারকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। 

তিনি পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে তিনি যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হন। 

আবাস স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে, ১৯৫৬ সাল। শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলির নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। 

এভাবেই শুরু হয় তার শহর জীবনের পালা। ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাড়িটির দারোদ্ঘাটন হয়। 

পরবর্তীতে যা পরিণত হয় বাঙালির তীর্থভূমিতে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার এই বাড়িতেই ছিলেন।

১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশীবাজারের পূর্বতন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। 

সে বছরই ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই তার রাজনীতিতে পদচারণা। 

স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধু উত্থাপিত ৬ দফা দাবিতে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে এক অভূতপূর্ব জাতীয় জাগরণ সৃষ্টি হয়। শাসকগোষ্ঠী ভীত-সন্তস্ত্র হয়ে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। 

শুরু হয় প্রচন্ড দমন-নির্যাতন। আটক থাকা অবস্থায়ই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী দায়ের করে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা। 

তার জীবন ও পরিবারের ওপর নেমে আসে বিপদ ও দুঃসহ দুঃখ-কষ্ট। 

এই ঝড়ো দিনগুলোতেই কারাবন্দি পিতা বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে শেখ হাসিনার বিয়ে হয় ১৯৬৮ সালে।

১৯৭১ সালের ২৭ জুলাই শেখ হাসিনা গৃহবন্দী অবস্থায় তার প্রথম সন্তান ‘জয়’-এর মা হন। ১৯৭২ সালের ৯ ডিসেম্বর কন্যাসন্তান পুতুলের জন্ম হয়।

বিয়ের কিছুদিন পর শুরু হয় ১১ দফা আন্দোলন ও ‘৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান। শেখ হাসিনা ছাত্রলীগ নেত্রী হিসেবে তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি। 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দেশ-মাতৃকার হাল ধরার। 

সামরিক শাসকদের রক্তচক্ষু ও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। 

এরপর দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে সামরিক জান্তা ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা অকুতোভয় সংগ্রাম। 

জেল-জুলুম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাকে তার পথ থেকে টলাতে পারেনি একবিন্দু।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। 

এ মেয়াদে খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ক্রীড়াসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার প্রথমবারের (১৯৯৬-২০০১) শাসনকাল চিহ্নিত হয় স্বর্ণযুগ হিসেবে।

২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠন করে। ২০০৪ সালের একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটে। 

শেখ হাসিনাকে হত্যা করাই ছিল মূল লক্ষ্য। গুরুতরভাবে আহত হলেও অলৌকিকভাবে প্রাণে বেঁচে যান তিনি। তবে এ হামলায় আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত হন। 

চিরতরে পঙ্গু হন অসংখ্য নেতাকর্মী। বাংলাদেশ পরিণত হয় মৃত্যু উপত্যকায়।

২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনের অবসান হলে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীন আহমেদ নিজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার পদে আসীন হন। 

গর্জে উঠে বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। শুরু হয় গণআন্দোলন। বাতিল হয় পাতানো নির্বাচন। প্রধান উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়ান ইয়াজউদ্দিন। 

ঘোষিত হয় জরুরি অবস্থা। ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত হয় নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

১/১১-এর পর শুরু হয় নতুন ষড়যন্ত্র। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য হাজির করা হয় ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা। 

শেখ হাসিনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে আসার সময় নিষেধাজ্ঞা জারি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। 

কিন্তু সাহসী শেখ হাসিনা সরকারি নিষেধাজ্ঞা, ষড়যন্ত্র ও মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ২০০৭ সালের ৭ মে ফিরে আসেন প্রিয় স্বদেশভূমে।

এর মাত্র দু’মাস পর ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই নিজ বাসভবন সুধাসদন থেকে শেখ হাসিনাকে দানবীয় কায়দায় গ্রেফতার করা হয়। 

জাতীয় সংসদ এলাকায় একটি অস্থায়ী কারাগারে তাকে বন্দি করে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় একের পর এক মিথ্যা মামলা। 

কারাগারে তার জীবননাশের ষড়যন্ত্র চলে। তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। জীবন-মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য করে চলতে থাকে গণসংগ্রাম ও আইনি লড়াই। 

আওয়াজ ওঠে শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে কোনো নির্বাচন নয়। বদলে যায় দৃশ্যপট। 

শেখ হাসিনাসহ রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অর্জিত হয় ঐতিহাসিক বিজয়। এককভাবে আওয়ামী লীগই লাভ করে তিন-চতুর্থাংশের বেশি আসন। 

২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। গঠিত হয় মহাজোট সরকার। 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন দেশে সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা এবং শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার সফলতার সঙ্গে তৃতীয় মেয়াদ পূর্ণ করে ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে দেশের ইতিহাসে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী’র দায়িত্ব পালন করছেন। 

উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করেছেন তলাহীন ঝুঁড়ির বাংলাদেশ। 

বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জোট সরকারের টানা শাসনকালে কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো উন্নয়নসহ আর্থ-সামাজিক সকল খাতে বাংলাদেশ অর্জন করেছে বিস্ময়কর অগ্রগতি। 

আর্থ-সামাজিক সকল সূচকে বাংলাদেশ অনেকক্ষেত্রে তার দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশিদের ছাড়িয়ে গেছে। 

যে বাংলাদেশের পরিচিতি ছিল বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ আর হাড্ডি-কঙ্কালসার মানুষের দেশ হিসেবে, সেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের ‘বিস্ময়’ হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান আজ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান-কি মুন অনেক আগেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে বর্তমান মহাসচিব এন্টিনিও গুটেরাস বাংলাদেশ সম্পর্কে একই অভিধার পুনরাবৃত্তি করেছেন। 

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১৫ সালে নিজ পিতৃভূমি কেনিয়া সফরকালে সে দেশের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের উন্নয়ন মডেলকে অনুসরণ করার পরামর্শ দেন। 

সম্প্রতি পাকিস্তানের একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সে দেশের উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ মডেল অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন।

বাংলাদেশের এই অভূতপূর্ব অগ্রগতি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব, অকৃত্রিম দেশপ্রেম, সাধারণ মানুষের প্রতি ভালবাসা ও মমত্ববোধ এবং কঠোর পরিশ্রমের ফলে।

এরই মধ্যে তিনি শান্তি, গণতন্ত্র, স্বাস্থ্য ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার, দারিদ্র্য বিমোচন, উন্নয়ন এবং দেশে দেশে জাতিতে জাতিতে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার জন্য ভূষিত হয়েছেন মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য পদক, পুরস্কার আর স্বীকৃতিতে। করোনার মহামারিকালে পেয়েছেন ‘ভ্যাকসিন হিরো’ উপাধি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা নব পর্যায়ের বাংলাদেশের ইতিহাসের নির্মাতা। হিমাদ্রী শিখর সফলতার মূর্ত-স্মারক, উন্নয়নের কান্ডারি। উন্নত সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার। বাঙালির আশা-আকাঙ্খার একান্ত বিশ্বস্ত ঠিকানা, বাঙালির বিশ্বজয়ের স্বপ্ন-সারথী।

আর্থিক খাতের কয়েকটি মাইলফলক অর্জন

১. নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশের মর্যাদা অর্জন:  ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়।

২. স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ: স্বাধীনতা লাভের ৪৭ বছর পর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) শ্রেণি থেকে বের হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

৩. পদ্মা সেতু: সকল দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহসী নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে ৬.১৫ কি.মি. দীর্ঘ পদ্মা সেতুর কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।

৪. মেট্রোরেল: ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় মেট্টোরেল চালু হয়েছে।

৫. মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ: ২০১৮ সালের ১২ মে রাত ২টা ১৫ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে দেশের প্রথম যোগাযোগ উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করা হয়। ফলে কৃত্রিম উপগ্রহের অধিকারী বিশ্বের ৫৭তম দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। মার্কিন কোম্পানি স্পেসএক্স-এর সর্বাধুনিক রকেট ফ্যালকন-৯ যুক্তরাষ্ট্রের কেপ ক্যানাভেরাল উৎক্ষেপণ মঞ্চ থেকে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপন করা হয়। গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়ার ২টি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে।বঙ্গবন্ধু-১ এর মাধ্যমে ডাইরেক্ট-টু-হোম (ডিটিএইচ) ভিডিও সার্ভিস, ই-লার্নিং, টেলি-মেডিসিন, পরিবার পরিকল্পনা, কৃষি খাতসহ দুর্যোগ উদ্ধারে ভয়েস সার্ভিসের জন্য সেলুলার নেটওয়ার্কের কার্যক্রম এবং এসসিএডিএ, এওএইচও এর ডাটা সার্ভিসের পাশাপাশি বিজনেস-টু-বিজনেস (ভিসেট) পরিচালনায় আরও সহজ হবে।

৬. রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প: পাবনা জেলার ঈশ্বরদীর রূপপুরে এক হাজার ৬২ একর জমির ওপরে দেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র’র নির্মাণ হচ্ছে। মোট ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্রটি দু’টি ইউনিট ভাগ করে নির্মিত হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রথম ইউনিটের কাজ যেভাবে এগিয়ে চলছে তাতে ২০২৩ সালের মাঝামাঝি শেষ করা যাবে। এরই মধ্যে প্রকল্পের মোট ৩৫ ভাগ শেষ হয়েছে। আর তাতে এ পর্যন্ত কাজে ব্যয় হয়েছে ৩৯ হাজার ৭৪১ কোটি ২৪ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। আশা করা যায় ২০২৩ সালে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হবে।

৭. ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (বিমানবন্দর-কুতুবখালী): হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জ কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৭ কি.মি. সবচেয়ে দীর্ঘ ও চার-লেন বিশিষ্ট প্রথম ঢাকা এলিভেটড এক্সপ্রেসওয়ে তিনটি পর্বে তৈরি হচ্ছে। আট হাজার নয়শ চল্লিশ কোটি আঠারো লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন প্রায় ২০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালীতে মিলিত হবে।

৮. ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল: সমতার ভিত্তিতে সব অঞ্চলের টেকসই উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজ সরকার হাতে নিয়েছে।

৯. কর্নফুলী টানেল: ৮,৪৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দিয়ে চার-লেনের ৩.৫ কি.মি. টানেল নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। এ টানেলটি ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এশিয়ান হাইওয়ে হয়ে ভারত ও মিয়ানমারকে সংযুক্তির মাধ্যমে রিজিওনাল কানেক্টিভিটি তৈরি করবে। এ টানেলের নির্মিত হলে চট্টগ্রাম-কক্সবাজারের মধ্যে দূরুত্ব হ্রাস পাবে। এ টানেলের দুই পাশে ৬ কি.মি. অ্যাপ্রোচ রোড থাকবে। এ টানেল তৈরির ফলে দেশের পূর্বাঞ্চলে নতুন শিল্পকারাখানা গড়ে উঠবে। অনেক লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

১০. হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল: ‘হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ কাজের ৬.৪ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কাজের উদ্বোধন করেন। ২০২৩ সালের জুনের মধ্যেই তৃতীয় টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে তা যাত্রীদের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করা সম্ভব হবে।’

উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশের আরও অর্জনগুলো:

ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ ইতোমধ্যে সারা বিশ্বের নিকট প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র দূরীকরণে তার ভূমিকা, জনবহুল দেশে নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছ ও সুষ্ঠুতা আনয়ন, বৃক্ষরোপণ, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রভৃতি ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে জন্ম নেওয়া এই বাংলাদেশকে আজকের অবস্থানে আসতে অতিক্রম করতে হয়েছে হাজারো প্রতিবন্ধকতা। 

যুদ্ধ বিধ্বস্ত, প্রায় সর্বক্ষেত্রে অবকাঠামোবিহীন সেদিনের সেই সদ্যজাত জাতির ৪৩ বছরের অর্জনের পরিসংখ্যানও নিতান্ত অপ্রতুল নয়। 

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ৮টি লক্ষ্যের মধ্যে শিক্ষা, শিশুমৃত্যুহার কমানো এবং দারিদ্র হ্রাসকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য উন্নতি প্রদর্শন করতে সক্ষম হয়েছে। 

নোবেল বিজয়ী ভারতীয় অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের করা মন্তব্য এক্ষেত্রে প্রণিধানযোগ্য। তাঁর মতে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বকে চমকে দেবার মতো সাফল্য আছে বাংলাদেশের। 

বিশেষত শিক্ষা সুবিধা, নারীর ক্ষমতায়ন, মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার ও জন্মহার কমানো, গরিব মানুষের জন্য শৌচাগার ও স্বাস্থ্য সুবিধা প্রদান এবং শিশুদের টিকাদান কার্যক্রম অন্যতম। 

উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে শিক্ষাখাতে অর্জন

শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেবার জন্য বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো- শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। 

নারী শিক্ষাকে এগিয়ে নেবার জন্য প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি ব্যবস্থা। 

উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষকের চাকরি সরকারীকরণ করা হয়েছে। ১৯৯০ সালে বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিশুর শতকরা হার ছিল ৬১, বর্তমানে তা উন্নীত হয়েছে শতকরা ৯৭.৭ ভাগে। শিক্ষার সুবিধাবঞ্চিত গরিব ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১২ প্রণয়ন করা হয়েছে, গঠন করা হয়েছে "শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট”।

 

উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার - জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় সাফল্য

শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির সাফল্যের জন্য এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম আদর্শ দেশ হিসেবে তার স্থান করে নিয়েছে। স্বাস্থ্যখাতকে যুগোপযোগী করতে প্রণয়ন করা হয়েছে “জাতীয় স্বাস্থ্য নীতিমালা-২০১১”। 

তৃণমূল পর্যায়ের দরিদ্র মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে গড়ে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৭৭৯টি(১) কমিউনিটি ক্লিনিক। ৩১২টি(২) উপজেলা হাসপাতালকে উন্নীত করা হয়েছে ৫০ শয্যায়। মেডিকেল কলেজ ও জেলা হাসপতালগুলোতে ২ হাজার শয্যা সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যুহার এবং জন্মহার হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। 

১৯৯০ সালে নবজাতক মৃত্যুর হার ১৪৯ থেকে নেমে বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ৫৩তে(৩)। স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেবার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নির্মাণ করা হয়েছে নতুন ১২টি(৪) মেডিকেল কলেজ, নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪৭ হাজারেও বেশি জনশক্তি।

উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার - দেশের নারী ও শিশু উন্নয়নে অর্জন

নারীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে “জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা-২০১১”। নারী শিক্ষাকে উৎসাহিত করতে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত চালু করা হয়েছে উপবৃত্তি কার্যক্রম। সমাজের প্রতিটি স্তরে নারী অংশগ্রহণকে নিশ্চিত করতে গৃহীত হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। 

প্রযুক্তি জগতে নারীদের প্রবেশকে সহজ করতে ইউনিয়ন ডিজিটাল কেন্দ্রের মতো ইউনিয়ন ভিত্তিক তথ্যসেবায় উদ্যোক্তা হিসেবে একজন পুরুষের পাশাপাশি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে একজন নারী উদ্যোক্তাকেও।

 “জাতীয় শিশু নীতি-২০১১” প্রণয়নের মাধ্যমে সুরক্ষিত করা হয়েছে শিশুদের সার্বিক অধিকারকে। দেশের ৪০টি জেলার সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে স্থাপন করা হয়েছে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল। 

দুঃস্থ্, এতিম, অসহায় পথ-শিশুদের সার্বিক বিকাশের জন্য স্থাপন করা হয়েছে ১৫টি শিশু বিকাশ কেন্দ্র। 

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের নারী ও শিশুর উন্নয়নে ভূমিকা রাখার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভূষিত করা হয়েছে জাতিসংঘের সাউথ–সাউথ এওয়ার্ডে। 

উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ও নারীর ক্ষমতায়নে অর্জন

নারী বঞ্চনার তিক্ত অতীত পেরিয়ে বাংলাদেশ নারীর ক্ষমতায়নে অনেকদূর এগিয়েছে। পোশাকশিল্পে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ দেশ। আর এই শিল্পের সিংহভাগ কর্মী হচ্ছে নারী। 

ক্ষুদ্রঋণ বাংলাদেশে গ্রামীণ উন্নয়নে ও নারীর ক্ষমতায়নে অভূতপূর্ব অবদান রেখেছে। আর ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে ৮০% এর উপর নারী। 

বাংলাদেশ সরকার নানাভাবে নারী উদ্যোক্তাদের অনুপ্রেরণা দিয়ে এসেছে। 

উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন

ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দিতে বাংলাদেশ সরকার নিয়েছে যুগান্তকারী সব পদক্ষেপ। দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারি সেবা পৌঁছে দেবার অভিপ্রায়ে দেশের ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে স্থাপন করা হয়েছে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। 

তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বিশাল ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত এ পোর্টালের সংখ্যা প্রায় ২৫০০০। দেশের সবক’টি উপজেলাকে আনা হয়েছে ইন্টারনেটের আওতায়।  

টেলিযোগাযোগের ক্ষেত্রে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ১২ কোটি  ৩৭ লক্ষ(১) এবং ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা ৪ কোটি ৪৬ লক্ষে(২) উন্নীত হয়েছে। সেবা প্রদান প্রক্রিয়া সহজ ও স্বচ্ছ করতে চালু করা হয়েছে ই-পেমেন্ট ও মোবাইল ব্যাংকিং। 

সরকারী ক্রয় প্রক্রিয়া অনলাইনে সম্পাদন করার বিষয়টিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। ৩-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্কের বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। 

উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার - কৃষিতে কৃতিত্ব এবং খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন

কৃষিখাতে অভূতপূর্ব কিছু সাফল্যের জন্য বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ বারবার আলোচিত হয়েছে।প্রায় ১৬ কোটি জনগোষ্ঠীর বাংলাদেশ বর্তমানে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশে ধানের উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫০ লক্ষ মেট্রিক টন। 

প্রধানমন্ত্রী ও কৃষিমন্ত্রীর সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশের বিজ্ঞানী ড. মাকসুদুল আলম আবিষ্কার করেছেন পাটের জিনোম সিকুয়েন্সিং। 

সারা বিশ্বে আজ পর্যন্ত মাত্র ১৭ টি উদ্ভিদের জিনোম সিকুয়েন্সিং হয়েছে, তার মধ্যে ড. মাকসুদ  করেছেন ৩টা। তাঁর এই অনন্য অর্জন বাংলাদেশের মানুষকে করেছে গর্বিত। 

উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার - প্রবাসী শ্রমিকদের উন্নয়নে অর্জন

বর্তমানে বিশ্বের ১৫৭টি দেশে বাংলাদেশের ৮৬ লক্ষেরও অধিক শ্রমিক কর্মরত আছে। বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ স্থাপন করেছে অনন্য দৃষ্টান্ত। স্বল্প সুদে অভিবাসন ঋণ প্রদানের লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক স্থাপন করে দেশের ৭টি বিভাগীয় শহরে এর শাখা স্থাপন করা হয়েছে। 

এই ব্যাংকের মাধ্যমে এপ্রিল ২০১৪ পর্যন্ত ২০ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা অভিবাসন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে বিদেশ গমনেচ্ছু জনগণকে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণকেও এ সেবা গ্রহণের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে হয়রানি ছাড়াই স্বল্প ব্যয়ে মালয়েশিয়াসহ অন্যান্য দেশগুলোতে শ্রমিকগণ যেতে পেরেছে। 

উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার - জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বাংলাদেশ

১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘ শান্তি মিশনে যোগদানের পর এ পর্যন্ত বিশ্বের ৩৯টি দেশের ৬৪ শান্তি মিশনে খ্যাতি ও সফলতার সাথে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। এ যাবৎকালে জাতিসংঘ শান্তি মিশনে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী ১১৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বাগ্রে। 

বিদ্যুৎখাত উন্নয়নে শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য

‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে সবার জন্য নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণকল্পে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যার সুফল মানুষ ইতোমধ্যে পেতে শুরু করেছে। ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ১৮ হাজার ৫৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়েছে। ফলে বিদ্যুতের স্থাপিত ক্ষমতা ক্যাপটিভসহ ২৪ হাজার ৯৮২ মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে এবং বিদ্যুতের সুবিধাভোগী জনসংখ্যা ৪৭ থেকে ৯৯ ভাগে উন্নীত হয়েছে।

তাছাড়া ১৪ হাজার ১১৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৮টি বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প নির্মাণাধীন, ২ হাজার ৯৬১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি স্বাক্ষর প্রক্রিয়াধীন (LOI এবং NOA প্রদান করা হয়েছে) যেগুলো খুব শিগগিরই কার্যক্রম শুরু করবে। তাছাড়া ৬৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার ছয়টি বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে আরও ১৫ হাজার ১৯ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পুরাতন বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সংরক্ষণ, মেরামত বৃদ্ধির মাধ্যমে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

শিল্প ও বাণিজ্য খাতে শেখ হাসিনা সরকারের অর্জন

বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের পাশাপাশি প্রসার ঘটেছে আবাসন, জাহাজ, ঔষুধ, ও প্রক্রিয়াজাতকরণ খাদ্য শিল্পের। বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকায় যোগ হয়েছে জাহাজ, ঔষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। বাংলাদেশের আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম কুড়িয়েছে। সম্প্রতি ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের আইটি শিল্প ১০ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় ছাড়িয়ে গেছে। 

উন্নয়নের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার - সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশের অর্জন

হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনি বিস্তৃত করতে বয়স্ক, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্ত ও দুঃস্থ মহিলা ভাতা, অস্বচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃকালীন ভাতাসহ ভাতার হার ও আওতা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০০৮-২০০৯ সালে এই খাতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, বর্তমানে এ কার্যক্রমে বরাদ্দের পরিমাণ ২৫ হাজার ৩৭১ কোটি(১) টাকা। খানা আয়-ব্যয় জরিপ, ২০১০ এর সমীক্ষায় দেখা গেছে মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৪.৫% সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনির আওতাভুক্ত হয়েছে। 

ভূমি ব্যবস্থাপনায় শেখ হাসিনা সরকারের অর্জন

ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আধুনিকায়ন করতে ৫৫টি জেলায় বিদ্যমান মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান কম্পিউটারাইজেশনের কাজ সম্পন্ন করার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ভূমির পরিকল্পিত ও সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে মোট ২১টি জেলার ১৫২টি উপজেলায় ডিজিটাল ল্যান্ড জোনিং ম্যাপ সম্বলিত প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রণীত হয়েছে “কৃষি জমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন, ২০১২ এর খসড়া”। 

মন্দা মোকাবেলায় শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য

মন্দার প্রকোপে বৈশ্বিক অর্থনীতি যখন বিপর্যস্ত ছিল বাংলাদেশ তখন বিভিন্ন উপযু্ক্ত প্রণোদনা প্যাকেজ ও নীতি সহায়তার মাধ্যমে মন্দা মোকাবেলায় সক্ষমই শুধু হয়নি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার গড়ে ৬ শতাংশের বেশি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথ ধারার বিপরীতে আমদানি-রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি বাড়ার পাশাপাশি বেড়েছে রেমিট্যান্সের পরিমাণ। ঋণ পরিশোধে সক্ষমতার মানদণ্ডে ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনামের সমকক্ষতা অর্জিত হয়েছে।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিনে বিভিন্ন কর্মসূচি:

সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা, স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৫ সাল পরবর্তী সময়ে ইতিহাসের সবচেয়ে সফল রাষ্ট্রনায়ক, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পালন করবে আওয়ামী লীগ। 

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে দলটি। এছাড়াও ২৮ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহার (মেরুল বাড্ডা), ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রহরে (২৭ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাত ১২.০১ মিনিটে) খ্রিস্টান এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস চার্চ (২৯ সেনপাড়া, পর্বতা, মিরপুর-১০), সকাল ৬টায় তেজগাঁও জকমালা রাণীর গীর্জা এবং বিকাল ৫টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

এসব কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। একই দিনে ঢাকাসহ সারাদেশে সকল সহযোগী সংগঠন আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে।  

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে আলোচনা সভা, সারাদেশের সকল মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল এবং সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

একই সঙ্গে তিনি আওয়ামী লীগের সকল জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন, ওয়ার্ডসহ সমস্ত শাখার নেতৃবৃন্দকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে অনুরূপ কর্মসূচি গ্রহণ করে দিবসটি পালন করার অনুরোধ জানিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর মধুমতি নদী বিধৌত গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান এবং আওয়ামী লীগের সভাপতি তিনি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর