• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

বাংলাদেশ শেখ হাসিনার দেশ, মাহিন্দা রাজাপাকসে’র নয়!

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২২  

বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক তুলনায় একটা বিষয় স্পষ্ট যে অর্থনৈতিক সক্ষমতার সব সূচকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নেতৃত্বে ও প্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপে বাংলাদেশ এগিয়ে রয়েছে। 

অপরদিকে শ্রীলঙ্কার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে সরকারের বিভিন্ন ভুল পরিকল্পনায় শ্রীলংকা ৭৪ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে জটিল অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে নিয়মিত হিমশিম খাচ্ছে।

শ্রীলঙ্কার এই অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে গত ১৫ বছরে দেশটির সরকারের নেয়া কিছু অপ্রয়োজনীয়, অপরিকল্পিত, অলাভজনক, অতি ব্যয়বহুল (শ্বেতহস্তী) মেগা প্রকল্প এবং সরকারের অদূরদর্শী সিদ্ধান্ত। 

এসব মেগা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে সমুদ্রবন্দর, বিমানবন্দর, রাস্তাসহ নানা ধরনের প্রকল্প। এসব অধিকাংশ প্রকল্পই করা হচ্ছে বিভিন্ন দেশ ও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে। এছাড়া সরকার হঠাৎ কৃষিক্ষেত্রে অর্গানিক চলে যাওয়ায় ফলে কৃষি উৎপাদন প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমে আসছে।

২০০৬ সালে গৃহযুদ্ধের সমাপ্তির পর শ্রীলঙ্কার মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি ২০১২ সাল পর্যন্ত ঠিকঠাকই ছিল। সে সময় মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৪৩৬ ডলার থেকে সম্প্রতি তা দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮১৯ ডলারে, যা দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। দেশটি ২০১৯ সালে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশেও পরিণত হয়েছিল। কিন্তু কোনো অর্জনই ধরে রাখতে পারেনি। প্রবৃদ্ধি কমতে থাকলে পরের বছরেই বিশ্বব্যাংক তাদের নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে নামিয়ে দেয়। এরপর রপ্তানি কমে যাওয়ায় চলতি হিসাবে দেখা দেয় বড় ভারসাম্যহীনতা। শ্রীলঙ্কার রপ্তানি পণ্য মূলত তিনটি—তৈরি পোশাক, চা ও রাবার। এই তিন পণ্যেই আয় কমছিল, কিন্তু বড় ধস নেমেছে মূলত গত দুই বছরে, করোনার সময়ে।

পর্যটকদের ভ্রমণ বন্ধ থাকায় কার্যত এই খাত থেকে দেশটির আয় হয়নি। শিল্প উৎপাদনে ধস নেমেছে, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সও পৌঁছেছে তলানিতে। পাশাপাশি কর ও ভ্যাট কমানোর কারণে উৎপাদনের ঘাটতি।

২০১৯ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশে অর্গানিক কৃষি চালু করেন। তিনি কৃষিতে রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন।

এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশটিতে। চালের উৎপাদন কমে যায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত। চাল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ শ্রীলঙ্কা তখন প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ডলারের চাল আমদানি করতে বাধ্য হয়। এর প্রভাবে ব্যাপকভাবে বেড়ে যায় পণ্যটির দাম। অর্গানিক কৃষির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশটির চা উৎপাদনেও। এই পণ্যটি রফতানিতেও দেখা দেয় নেতিবাচক প্রভাব।

শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের পর অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছে বাংলাদেশর অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হতে পারে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশ কখনোই শ্রীলঙ্কা হবে না’। জননেত্রীর এ কথার যৌক্তিকতা আমরা বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক তুলনা করলে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে পারি:

শ্রীলঙ্কার মোট ঋণ ৩৩ বিলিয়ন ডলার। মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ২০ লাখ, সে হিসেবে শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু ঋণ ১ হাজার ৬৫০ মার্কিন ডলার। অপরদিকে বাংলাদেশের মোট ঋণ ৪৯.৪৫ বিলিয়ন ডলার এবং জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯৩ লাখ হিসেবে মাথাপিছু ঋণ ২৯২.১১ ডলার। বাংলাদেশের চেয়ে শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু ঋণ ৬ গুণ বেশি।

শ্রীলঙ্কা বৈদেশিক ঋণ- জিডিপির অনুপাত ৬১ শতাংশের বেশি, সেখানে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের হার জিডিপির ১৩ শতাংশ (আইএমএফের হিসেবে তা ৫০ শতাংশের উপরে উঠলে বিপদজনক বলে ধরা হয়)।

শ্রীলঙ্কার মোট বৈদেশিক ঋণের ১০ শতাংশ চীন থেকে নেয়া, অপরদিকে বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণের মাত্র ৭ শতাংশ চীন থেকে নেয়া।

শ্রীলঙ্কাকে প্রতি বছর ৭.৫ বিলিয়ন শোধ করতে হয়। অপরদিকে বাংলাদেশকে ২.৫ বিলিয়ন শোধ করতে হয়।

শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণের সুদের হার ৮ শতাংশ সেখানে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সুদের হার ১ দশমিক ৮ শতাংশ।

বৈদেশিক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার সময় ৫ বছর হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা ৩০ বছর পর্যন্ত। এছাড়াও বাংলাদেশের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রেস পিরিয়ড থাকে, ফলে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ দীর্ঘ হয়।

শ্রীলঙ্কার বেশিরভাগ ঋণ বাণিজ্যিক ও সার্বভৌম বন্ড ইস্যু থেকে নেয়া। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন বাণিজ্যিক ও সাবভৌম বন্ড নেই। ঋণের বড় অংশই বহুপাক্ষিক সংস্থা থেকে নেয়া।

মার্চ ২০২২ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার রির্জাভের পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলার, সেখানে বাংলাদেশের রির্জাভ ৪৪.৪ বিলিয়ন ডলার। রির্জাভের পরিমাণ শ্রীলঙ্কার চেয়ে ২২ গুণ বেশি।

শ্রীলঙ্কার রপ্তানী আয় ৮.৫ বিলিয়ন ডলার, সেখানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩৭.৭৫ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের রপ্তানি আয় শ্রীলঙ্কার চেয়ে ৫ গুণ বেশি।

বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৬.১৭ শতাংশ সেখানে শ্রীলঙ্কায় মূল্যস্ফীতি প্রায় ৩০ শতাংশের কাছাকাছি এবং বাংলাদেশি টাকায় ১ ডলার সমান ৮৬.৪৫ টাকা আর শ্রীলঙ্কায় সেটা ১ ডলার সমান ৩২৬ রুপিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে।

অর্গানিক প্রক্রিয়া চালু করার ফলে শ্রীলঙ্কা কৃষিজ উৎপাদন কমেছে প্রায় অর্ধেকের কাছাকাছি কিন্তু বাংলাদেশ ক্রমেই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে।

আমাদের রপ্তানি, প্রবাসী আয়, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের আয় ও ব্যয় বাড়ার সুযোগে বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা, এমনকি বিদেশি সাহায্যের পাইপলাইনের অবস্থা এখন পর্যন্ত ভালো হওয়ায় বাংলাদেশের নিঃসন্দেহে শ্রীলঙ্কা পরিস্থিতি হওয়ার সুযোগ নেই।

বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেসব মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে তা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শুধু পদ্মা সেতুই দেশের জিডিপিতে ১.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে আসবে (বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন)। অন্যান্য প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মেট্রো রেল প্রকল্প, রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ নির্মাণ প্রকল্প, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ অন্য প্রকল্পগুলো চালু হলে দেশের সার্বিক চিত্র পাল্টে যাবে এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে। তাই একথা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, ‘যতদিন থাকবে শেখ হাসিনার হাতে দেশ, পথ হারাবেনা বাংলাদেশ’।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর