• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

নাটোরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি কাঁচাগোল্লাকে জিআই পণ্য করার উদ্যোগ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ ২০২৩  

ঐতিহ্যবাহী নাটোরের মিষ্টি কাঁচাগোল্লা জিআই পণ্য হচ্ছে। বাংলাদেশে নতুন করে আরও একটি পণ্য জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিফিকেশন (জিআই) বা ভৌগোলিক নির্দেশক হিসেবে নিবন্ধিত হয়ে ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে নাটোরের ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি কাঁচাগোল্লা নিবন্ধনের জন্য জেলা প্রশাসন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। বুধবার দুপুরে জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ অ্যাফিডেভিটটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির হাতে হস্তান্তর করেন। এ সময় নাটোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নাদিম সারোয়ার, বারের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মালেক শেখ ও নোটারি পাবলিকের অ্যাডভোকেট জামাল শেখসহ সাংবাদিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 

জেলা প্রশাসক শামিম আহমেদ জানান, যেহেতু কাঁচাগোল্লার সঙ্গে আমাদের আবেগ জড়িত। এ কারণে আমার বিদায়ের পূর্বে আমি কাজটি শুরু করেছি। আশা করি অল্প দিনের মধ্যে জিআই পণ্য হিসেবে কাঁচাগোল্লা অন্তর্ভুক্ত হবে। 

সুপ্রাচীনকাল থেকেই কাঁচাগোল্লা জনপ্রিয় মিষ্টি হিসেবে পরিচিত। ১৭৫৭ সাল থেকে এই মিষ্টি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। চিনির রসে ডোবানোর আগে ছানাকে কিছুই করতে হয় না। অর্থাৎ কাঁচা ছানাই চিনির রসে ঢালা হয়। কিন্তু রসগোল্লার ছানাকে তেলে ভেজে চিনির রসে ডোবানো হয়। তাই তার নামকরণ হয় রসগোল্লা।
নাটোরের রানী ভবানী মিষ্টি অনেক পছন্দ করতেন। তার রাজপ্রাসাদে নিয়মিত মিষ্টি সরবরাহ করতেন লালবাজারের মিষ্টি বিক্রেতা মধুসূদন পাল। একদিন মধুসূদন পালের ২০ জন কর্মচারীর সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েন। দোকানে ২ মণ ছানা রাখা ছিল। ছানাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে মধুসূদন ছানার ওপর চিনির সিরা দিয়ে ভিজিয়ে দেন। এরপর দেখেন এগুলোর স্বাদ হয়েছে অপূর্ব। 

অন্যদিকে রানী ভবানীর পাঠানো লোক মিষ্টি নিতে এলে তিনি সিরা দেওয়া ছানাগুলো পাঠিয়ে দেন। রানী ভবানী এই মিষ্টি খেয়ে অনেক প্রশংসা করেন এবং এর নাম জানতে চান। মধুসূদন পাল তখন কাঁচা ছানা থেকে তৈরি বলে এর নাম দেন কাঁচাগোল্লা। এটিই কাঁচাগোল্লার ইতিহাস। এই গল্প এখনও নাটোরের সবার মুখে মুখে ফিরে। নাম গোল্লা হলেও এটি দেখতে গোল নয়। ছানা, চিনি ও এলাচ দিয়ে এই কাঁচাগোল্লা তৈরি করা হয়। এই কাঁচাগোল্লার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নাটোরবাসীর আবেগ। ২৫০ বছর আগে কাঁচাগোল্লা আবিষ্কৃত হয়ে আজও তার সুনাম বজায় রেখেছে। নাটোরের বিয়ে এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং অতিথি আপ্যায়নে এই কাঁচাগোল্লা যেন একটি অপরিহার্য উপাদান।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে অন্য নিবন্ধিত জিআই পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে-রাজশাহী সিল্ক, রংপুরের শতরঞ্জি, কালিজিরা চাল, দিনাজপুরের কাটারিভোগ চাল এবং নেত্রকোনার সাদামাটি। এর আগে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো জিআই পণ্য হিসেবে ২০১৬ সালে স্বীকৃতি পেয়েছিল জামদানি। এরপর ২০১৭ সালে ইলিশ, ২০১৯ সালে খিরসাপাতি আম, ২০২০ সালে ঢাকাই মসলিন এবং চলতি বছর ওই ৫টি পণ্যকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর