• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

প্রথমবারের মতো টাকায় বিদেশি ঋণ পরিশোধ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৮ জুন ২০২৩  

দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদেশি ঋণে নির্মীয়মাণ কোনো প্রকল্পের বিল টাকায় পরিশোধ করা হয়েছে। সম্প্রতি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের বিলের একটি অংশ টাকায় দেওয়া হয়। প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ১৫ শতাংশ পরিশোধ করা হবে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভকে আরো ভালোভাবে সংরক্ষণের আরেকটি পদ্ধতির সূচনা হলো।


একে বিকল্প মুদ্রায় লেনদেনে নতুন মাইলফলক হিসেবে দেখছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয় গত বছরের শেষ দিকে। প্রকল্পটি নির্মাণে ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ ধরা হয়েছে। টাকায় এই অঙ্ক দাঁড়ায় প্রায় ১৭ হাজার ৬৫৩ কোটি।


চীন ২ শতাংশ সুদে পুরো প্রকল্পের মোট খরচের ৮৫ শতাংশ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে, যা ২০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করা যাবে। প্রকল্পের বাকি ১৫ শতাংশ খরচ বহন করছে সরকার।
প্রকল্প পরিচালক শাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘আমরা টাকার মাধ্যমে বিলটি গ্রহণ করতে তাদের (ঠিকাদার) রাজি করিয়েছি। কারণ বাংলাদেশে তাদের কিছু খরচ করতে হবে।


বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় তারা আমাদের প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। প্রকৌশলী, কর্মীসহ ২৫০ জনের বেশি চীনা নাগরিক এবং এক হাজার বাংলাদেশি বর্তমানে এই প্রকল্পে কাজ করছেন।’
গত অক্টোবরে এই প্রকল্পের প্রথম কিস্তি বাবদ ১৩০ মিলিয়ন ডলার বা এক হাজার ৩৩৯ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এর মধ্যে সরকারের অংশের পরিমাণ ৩৪ কোটি টাকা।

গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ সাত হাজার ৫৬০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করে।


তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫.৫৯ শতাংশ অথবা এক হাজার ৯৩৫ কোটি ডলারের পণ্যই আমদানি করা হয়েছে চীন থেকে। এর পরই ভারতের অবস্থান। দেশটি থেকে আমদানি করা হয়েছে এক হাজার ৩৬৯ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট আমদানির ১৮ শতাংশ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাংলাদেশের মোট আমদানির ৪৩ শতাংশই আসে ভারত ও চীন থেকে। বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের ক্ষুদ্র একটি অংশও যদি ডলার বাদে অন্য মুদ্রায় করা যায়, তা হবে বাংলাদেশের জন্য বড় ব্যাপার।

ডলার সংকটের এই সময়ে চীন ও ভারতের সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনের সুপারিশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের সংগঠন এমসিসিআই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবও জমা দিয়েছিল। ব্যবসায়ীরা জানান, ডলার সংকটে ব্যাংকগুলোতে প্রয়োজনীয় ঋণপত্র (এলসি) খোলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় টাকায় লেনদেন করা গেলে ডলারের ওপর চাপ কমবে।

বিসিসিআইয়ের যুগ্ম মহাসচিব আল মামুন মৃধা কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার চীনের মুদ্রায় আমদানি-রপ্তানি ব্যয় মেটানো গেলে অনেক বেশি ডলার সাশ্রয় হতো। এতে দুই দেশই উপকৃত হবে। বর্তমান লেনদেনের ক্ষেত্রে টাকা থেকে ডলার এবং ডলার থেকে আরএমবিতে রূপান্তর করতে হয় ব্যবসায়ীদের।

জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, টাকায় বিল পরিশোধের সুবিধা-অসুবিধা দুটিই রয়েছে। সুবিধা হলো, অর্থনীতির এই সংকটময় মুহূর্তে ডলারের ওপর চাপ কমবে। আর অসুবিধা হলো, এখন যদি সরকার বাজারের ডলারের রেট অনুযায়ী বিল পরিশোধ করতে থাকে, তাহলে সামনের দিনে ঝুঁকি হতে পারে। কারণ যদি হুট করে ডলারের দাম বাড়ে তখন আরো বেশি টাকা দিতে হবে। সুতরাং আগে চুক্তির সংশোধন করে তারপর লেনদেনে মুদ্রার ধরন পাল্টানো উচিত।

২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চালু হলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সঙ্গে নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের আবদুল্লাপুর, আশুলিয়া, বাইপাইল ও ইপিজেডকে যুক্ত করবে।

টাকা-রুপিতেও শুরু হচ্ছে লেনদেন : দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে নিজ নিজ মুদ্রা ব্যবহার করে লেনদেন নিষ্পত্তি করতে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ ও ভারত। তৃতীয় কোনো মুদ্রার সংশ্লিষ্টতা ছাড়া সরাসরি টাকা ও রুপি ব্যবহার করে আমদানি-রপ্তানির মূল্য বিনিময় করবে দুই দেশ। এতে দুই দেশের লেনদেনের অংশবিশেষে ডলারের ওপর চাপ কমবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানির পরিমাণ প্রায় দুই বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ভারত থেকে পণ্য আমদানি করেছে ১৩.৬৯ বিলিয়ন ডলারের। দুই বিলিয়ন ডলারের যে রপ্তানি করছে বাংলাদেশ, সে পরিমাণ বাণিজ্য ভারতীয় মুদ্রায় করার কথা ভাবা হচ্ছে।

ইউয়ানে ঋণ দিতে চায় চীন : চীনা সরকারি অর্থায়নে দেশে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে মার্কিন ডলারের পরিবর্তে ইউয়ানে (চীনা মুদ্রা) অর্থায়ন করতে চায় চীনা এক্সিম ব্যাংক। ডলারের একচ্ছত্র আধিপাত্য রোধে সম্প্রতি বাংলাদেশকে এই প্রস্তাব দিয়েছে অর্থায়নকারী ব্যাংক। বৈদেশিক মুদ্রার ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ইউয়ানে এলসি খোলার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সম্প্রতি এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক অব চীনের উপমহাব্যবস্থাপক লি কিনজি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) পাঠানো চিঠিতে বলেছেন, ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিনিময়হার বর্তমানে অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করছে। ফলে প্রকল্প ব্যয় ও বিনিময় হার চীন-বাংলাদেশের জন্য অধিক ঝুঁকি বহন করছে। ডলারের ঘাটতি দুই দেশের সহযোগিতার জন্য প্রতিকূল হয়ে উঠেছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর