• বৃহস্পতিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ২০ ১৪৩০

  • || ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

তারুণ্যের জনসমুদ্র

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩  

স্মরণকালের বৃহৎ তারুণ্যের জনসমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) নির্বাচন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ইলেকশন (নির্বাচন) তাদের কথা (লক্ষ্য) নয়, ওরা (বিএনপি) ভোট করতে আসে না, ভোট চায় না, ভোট পাবেও না। নির্বাচন নয়, তারা জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আবারও ছিনিমিনি খেলতে চায়। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করতে চায়। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে আমরা চলি, আমার কোনো ভয় নেই। দেশের মানুষকে ভালোবাসি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আর কেউ বাধা দিতে পারবে না। দেশের অগ্রযাত্রা যাতে কেউ নস্যাৎ করতে না পারে, সেজন্য ছাত্রলীগকে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার একটাই লক্ষ্য, এ বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করব। কবির ভাষায়, ‘এই বিশ্বকে বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার অঙ্গীকার।’ আমার কোনো ভয় নেই। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা কেউ যাতে নস্যাৎ করতে না পারে, তোমাদের (ছাত্রলীগ) অতন্দ্র প্রহরীর মতো ভূমিকা পালন করতে হবে। পাশাপাশি তোমাদের বলব, শিক্ষাগ্রহণ করতে হবে। শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি, ছাত্রলীগের মূলনীতি। এই নীতি মেনেই ছাত্রলীগকে চলতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে শুক্রবার রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত এই বিশাল ছাত্র সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় বিশাল এই ছাত্র সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ওবায়দুল কাদের ।

প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানে লাখ লাখ ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত সামনে বাড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়ার শপথ গ্রহণ করেন। শপথবাক্য পাঠ করান কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হলে লাখো শিক্ষার্থীদের গগনবিদারী স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।

জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে শুরু হওয়া সমাবেশের শুরুতেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্টের সকল শহীদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। প্রথমে মাতৃভূমি সাংস্কৃতিক সংগঠনের পরিবেশনায় ছাত্রলীগের থিম সং পরিবেশন করা হয়। ‘পিতার জন্য গান’ শীর্ষক একটি প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয়। ছাত্রলীগের প্রকাশনা মাতৃভূমির মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ প্রধানমন্ত্রীকে দলীয় প্রতীক নৌকা সদৃশ স্মারক উপহার দেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানান।

ছাত্র সমাবেশকে কেন্দ্র করে শুক্রবার সারাদেশ থেকে রাজধানী ঢাকায় তারুণ্যের ঢল নামে। যে ঢলের শুরু আছে, যেন শেষ নেই। সকাল থেকেই ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বাদ্য-বাজনার তালে তালে নানা রং-বেরঙের গেঞ্জি, টুপি ও সংগঠনের পতাকা হাতে নিয়ে প্রবেশ করতে থাকে সমাবেশে। এরই মধ্যে দুপুরে শুরু হয় বৃষ্টি। সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে কাকভেজা হয়ে ঢাকাসহ সারাদেশ থেকে সমাবেশে আসেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে মূল মঞ্চে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর কাদের, গণফোরামের সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমেদসহ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকরা উপবিষ্ট ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হওয়ার আগে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাপিয়ে শাহবাগ, টিএসসি, দোয়েল চত্বর, মৎস্যভবন, হাইকোর্ট ভবনের সামনে দিয়ে প্রেস ক্লাব পর্যন্ত লাখ লাখ নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে সমাবেশটি রীতিমত তারুণ্যের মহাসমাবেশে পরিণত হয়। আয়োজক ছাত্রলীগের দাবি, সারাদেশ থেকে পাঁচ লাখ শিক্ষার্থী ছাত্র সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। জমায়েত ছাড়াও দেশের পাঁচ কোটি শিক্ষার্থী তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে এই সমাবেশে যুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী লাখো তারুণ্যের প্রতিনিধিদের উদ্দেশে যা বললেন ॥ বিশাল এই ছাত্র সমাবেশে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াতের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে ছাত্রলীগসহ সব সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সতর্ক থাকার পাশাপাশি তাদের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, দেশের জনগণকে মনে করিয়ে দেবে ওরা (বিএনপি) ভোট করতে আসে না। ভোট পায় না। ভোট চায় না। ভোট পাবে না। কারণ ওরা তো লুটেরা, সন্ত্রাস। মানুষের শান্তি কেড়ে নেয়। মানুষের সম্পদ ঘরবাড়ি কেড়ে নেয়। লুটেরা সন্ত্রাস আর জঙ্গিতে বিশ্বাসী। ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি। এরা কখনো মানুষের কল্যাণ করতে পারে না।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, ইলেকশন তাদের কথা নয়। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে আবারও তারা ছিনিমিনি খেলতে চায়। কারণ তাদের জন্ম হয়েছে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীর হাতে। তারা গণতন্ত্রেও বিশ্বাস করে না। তারা নাকি এখন গণতন্ত্র উদ্ধার করবে। যাদের জন্ম মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে; জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতায় এসেছে- সেই ক্ষমতা দখলকারীদের হাতে তৈরি ওই বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধীরা এদেশের কল্যাণ কখনো চাইতে পারে না। তারা দেশকে ধ্বংস করতে চায়।

ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের যেকোনো স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ মাঠে নেমেছে। ছাত্রলীগ হচ্ছে সেই শক্তি। এই তারুণ্যের শক্তি এগিয়ে নিয়ে যাবে দেশকে। আজকের বাংলাদেশ বদলে যাওয়ার বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ আমরা গড়তে পেরেছি। প্রতিটি কাজ আমরা দেশের উন্নয়নে করতে পেরেছি। তার পেছনে ছাত্রলীগের ভূমিকা রয়েছে। যেকোনো দুর্বিপাকে তারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়া ছাত্রদলের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিল। বলেছিল, ছাত্রদল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে যথেষ্ট। আর আমি ছাত্রলীগকে দিয়েছিলাম খাতা আর কলম। বলেছিলাম পড়াশোনা করতে হবে। লেখাপড়া করে মানুষের মতো মানুষ না হলে কোনো আদর্শ বাস্তবায়ন করা যায় না। অশিক্ষিত মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে তার অগ্রযাত্রা হতে পারে না।

১৯৮১ সালে অনেক বাধা অতিক্রম করে দেশে ফিরেছেন উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধাপরাধী ও আমার বাবা-মায়ের খুনিরা তখন ক্ষমতায়। কোনো বাধা আমাকে আটকে রাখতে পারেনি। আজকে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা দেখি মানবাধিবারের কথা বলেন। সেই ১৫ আগস্ট মা-বাবা হারানোর পর তো বিচার চাইতে আমরা পারিনি। আমাদের বিচার চাওয়ার কোনো অধিকার ছিল না।

স্বাধীনতার পরপরই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়েছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পরপরই চক্রান্ত ষড়যন্ত্র শুরু হয়। স্ব^াধীনতা যাতে নস্যাৎ হয় সেই চেষ্টা করেছিল কিছু লোক। স্বাধীনতার পর তারা সময় দেয়নি। বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ছিলেন তখন দেখেছি এক শ্রেণি ধ্বংসাত্মক কাজ করে গেছে। পাটের গুদামে আগুন লাগিয়েছে। থানা লুট, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে হত্যা করা। তারা স্বাধীনতাকে ধ্বংস করতে চেয়েছিল। যে চক্রান্ত স্বাধীনতার পরপর শুরু হয়েছিল সেটা তো এখনো শেষ হয়ে যায়নি।

বঙ্গবন্ধুর বাকশাল গঠনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) ঘুণে ধরা সমাজ ভেঙে নতুন সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে চেয়েছিলেন। জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন যাতে এই সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দেশ এগিয়ে যেতে পারে। তার সুফল কিন্তু মানুষ পেতে শুরু করেছিলেন। দুর্ভাগ্য আগস্ট মাসে তাকে হত্যা করা হলো। হত্যা করে আবার সেই বাংলাদেশে মিলিটারি ডিকটেটর। এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগ্রাম আমরা করেছি। জনগণের ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে বন্দি করা হয়েছিল। আমরা জনগণের ক্ষমতা ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের করে এনে জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি।

ছাত্রলীগের বিভিন্ন সময়কার সামাজিক কর্মকান্ডের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকে ছাত্রলীগ কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিটি দুর্যোগে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। গর্বে আমার বুক ভরে যায়। এভাবে তারা এগিয়ে গেলে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ বন্ধ করতে পারবে না। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে।

পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে আমাদের ওপর অপবাদ চাপাতে চেয়েছে। কিন্তু দেশের মানুষের ভাগ্য গড়তে এসেছি, নিজের ভাগ্য নয়। রাষ্ট্রপতির মেয়ে ছিলাম। প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে ছিলাম। নিজেও আরও তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। কই নিজের জন্য তো কিছু করার চিন্তা করিনি বা আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্যও নয়। তাদের শিক্ষা দিয়েছি। তারা সেটা নিজেরা কষ্ট করে পড়াশোনা করেছে। লোন নিয়ে পড়াশোনা করেছে। ওদের জন্য বেশি কিছু করতে পারিনি। শিক্ষাটাই তাদের একমাত্র সম্পদ, সেটাই দিয়েছি।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কারণে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ হয়েছিল জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, বদনাম দিয়েছিল। কেন দিয়েছিল? একটি ব্যাংকের এমডি পদের জন্য। তিনি ১০ বছর বেআইনিভাবে ব্যাংকটি চালিয়ে আবারও সেখানে থাকতে হবে। সেই লোভে। বারবার আমাদের ওপর চাপ। একটি বড় দেশ বারবার চাপ দিত। কী বলত! এমডি পদে না রাখলে নাকি পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে দেবে।

তিনি বলেন, আমাদের বিরুদ্ধে, সরকারের বিরুদ্ধে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে সেই ভদ্রলোক (ড. ইউনূস) মামলাও করেছিল। কিন্তু আদালত তো তার বয়স কমাতে পারে না। মামলায় হেরে যায়। অর্থায়ন বন্ধ এটা বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে হয়নি। ওই হিলারী ক্লিনটন নিজে অর্ডার দিয়ে তখন বিশ্বব্যাংকের চেয়ারম্যানকে দিয়ে পদ্মা সেতুর টাকা বন্ধ করে। তখন বলেছিলাম নিজের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। কারও কাছে হাত পেতে না। আমরা সেটা করেছি। পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বকে দেখিয়েছি বাংলাদেশও পারে। বাংলাদেশের মানুষ পারে। চাইলে আমরা নিজের টাকায় করতে পারি। এর পর কিন্তু বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বদলে গেছে।

সরকারের উন্নয়নের নানা সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসব উন্নয়ন অনেকের ভালো লাগে না। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য দেশের আরও উন্নত করা। অনেকের কোনোকিছুই ভালো লাগে না। কিছুই তারা চোখে দেখে না যে দেশের উন্নতি হচ্ছে। চোখ থাকতেও তারা অন্ধ। আমি অত্যন্ত আধুনিক চক্ষু ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। আন্তর্জাতিকমানের প্রতিষ্ঠা করেছি, আমিও নিজে সেখানে চোখ দেখাতে যাই। ১০ টাকার টিকিট কাটলে সেখানে চোখ দেখানো যায়। যারা উন্নয়ন  দেখে না তাদের বলব সেখানে গিয়ে চোখটা দেখিয়ে আসতে। আসলে তাদের মনের দরজাই অন্ধকার। আর পরাজিত শক্তির পদলেহনকারী। সেজন্য মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন তারা দেখে না। হাওয়া ভবন খুলে খাওয়া খেতে পারছে না বলে তাদের যত দুঃখ।

ছাত্রলীগকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিষ্ঠান বলে নয়, যে কোনো প্রতিষ্ঠান চালাতে গেলে সঠিক নেতৃত্ব দরকার। আশা করি ছাত্রলীগের নেতারা নিজেদের সেই নেতৃত্ব হিসেবে গড়ে তুলবেন। যেখানে থাকবে সেখানে ছাত্রলীগ নেতৃত্ব দেবেন- সেটাই আমরা চাই। তিনি বলেন, মুদ্রস্ফীতির কারণে ফিক্সড ইনকামের মানুষের কষ্ট হয়। প্রত্যেকে উৎপাদনে নজর দিলে কারও প্রতি হাত পাততে হবে না। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে নিজের নগদ টাকায় কেনা খাদ্যশস্য আসতে দেয়নি কৃত্রিম উপায়ে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিল। সেই কথা মাথায় রেখে আমাদের প্রচেষ্টা, আমাদের খাদ্য আমরা উৎপাদন করব। আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করেছি। বিএনপির কিছু নেতা বলছেন এটা নাকি আমাদের নির্বাচনী ফান্ড  তৈরি করার জন্য! এর থেকে লজ্জার আর কী হতে পারে। ক্ষমতায় থেকে নিজেরা কিছু করতে পারেনি। মানুষকে কিছু দিতে পারেনি। মানুষের ভালোর জন্য যখন আমরা কিছু করি তখন বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এই বিভ্রান্তিতে কেউ যেন কান না দেন। ছাত্রলীগকে বলব নিজের এলাকায় গিয়ে এই বিষয়ে মানুষকে সচেতন করতে হবে।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে চলি। আমার কোনো ভয় নেই। দেশের মানুষকে ভালোবাসি। স্বাধীনতার চেতনায় বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। ছাত্রলীগের ছেলেমেয়েরা একচল্লিশের স্মার্ট বাংলাদেশের কা-ারি হবে। সেটাই আমি চাই। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ হবে- স্মার্ট জনগোষ্ঠী, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় আর কেউ বাধা দিতে পারবে না। অতন্দ্র প্রহরীর মতো ছাত্রলীগকে সব সময় সজাগ থাকতে হবে। পাশাপাশি উপযুক্ত শিক্ষায় নিজেদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে।

বক্তব্যে ছাত্রলীগের দীর্ঘ গৌরবময় ইতিহাস তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্যই ছাত্রলীগের জন্ম। ছাত্রলীগ সব সময় আন্দোলন-সংগ্রামে গৌরবজনক ভূমিকা পালন করেছে। বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ছেষট্টির ছয়দফা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধেও সর্বাগ্রে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ছাত্রলীগ।

প্রধানমন্ত্রী  বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর প্রতিবাদও করেছে ছাত্রলীগই। পঁচাত্তরের পর তিনি ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা ছিলেন দেশের বাইরে, নির্বাসনে। সেখান থেকে তাদের ফিরিয়ে আনার দাবিও ছাত্রলীগই প্রথম তুলেছিল। যখন ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল, তখনই এই দাবি তাঁরা প্রথমে করে।

আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, অশিক্ষিত-মূর্খদের হাতে দেশ পড়লে সেই দেশের অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যেতে পারে না। পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা দেশকে কী দিয়েছে? বাঙালি ছিল একটি বিজয়ী জাতি। তারা সেই বিজয়ের ইতিহাস মুছে ফেলেছিল। তারা শেখ মুজিবের নাম মুছে ফেলেছিল। তারা ৭ মার্চের  ভাষণ ও যে জয় বাংলা স্লোগান ধরে স্বাধীনতা এসেছে- সেই স্লোগান বাজানো তারা নিষিদ্ধ করেছিল। দেশকে পুরো অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। দেশের মানুষ আর সেই অন্ধকারের যুগে ফিরে যাবে না।

অস্বাভাবিক কোনো সরকার হতে দেব না- কাদের ॥ ছাত্রলীগের সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ওয়ান/ইলেভেনের মত অস্বাভাবিক সরকার আনার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে অভিযোগ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ওয়ান/ইলেভেন আমরা ভুলি নাই। আবারো অস্বাভাবিক সরকার। সেই অস্বাভাবিক সরকার বাংলার মাটিতে আমরা হতে দেব না।

তিনি বলেন, আজকে দেশে বিদেশে কত ষড়যন্ত্র! কত চক্রান্তের খেলা। তারা জানে এই দেশে ৭০ ভাগ মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে। নির্বাচনে তাকে হারাতে পারবে না। যেই জন্য ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা থেকে হটানোর চক্রান্ত করছে। নিষেধাজ্ঞা, ভিসানীতি প্রয়োগ করতে চাইছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত ১৫ বছরে দেশের ব্যাপক দূর্নীতি হয়েছে। আজকে সেই কীর্তি তারা মুছে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। পদ্মা সেতু থেকে বিশ্বব্যাংক চোর অপবাধ দিয়ে সরে গেছে। কিন্তু নিজের টাকা পদ্মা সেতু করে আমরা প্রমাণ করেছি- ‘ইয়েস উই ক্যান ডু (হ্যাঁ, আমরা করতে পারি)’।

বিএনপির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, জ্বালারে জ্বালা’ অন্তর্জ¡ালা। অন্তর্জ্বালায় জ্বলছে বিএনপি। জ্বলছে তারেক জিয়া। কী করে হলো পদ্মা সেতু। অন্তর্জ্বালা। ঢাকায় মেট্রোরেল। তাদের অন্তর্জ্বালা তো থাকবে। শেখ হাসিনা করছে এটা তাদের অন্তর্জ্বালা । মানুষ খুশি। আর এই দলটি অখুশি। শেখ হাসিনার অর্জনে মানুষ কেন খুশি এ জন্য ব্যথার বিষজ্বালায় তারা মরছে। সেজন্য শেখ হাসিনাকে তারা চায় না। বিদেশী মুরব্বিদের ডাকছে হটাও শেখ হাসিনাকে। দরকার হলে আবার তত্ত্বাবধায়ক। আদালতের আদেশে যে তত্ত্বাবধায়ক মরে গেছে সেটাকে আবার জীবিত করতে চাচ্ছে। এটা কী হবে? শেখ হাসিনা রিজাইন করবে? সংসদ ভেঙে যাবে? এই সরকার পদত্যাগ করবে? বাংলার মানুষ যেটা চায় না তারা কেন তা করতে চায়।

ছাত্রসমাজকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আজকের তারুণ্যের যে ঢেউ নেমেছে তা আবেগ ও চেতনা দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। শেখ হাসিনার নেতত্বে আমরা মাতৃভূমিকে রক্ষা করব। গণতন্ত্রকে বাঁচাব। খেলা হবে। গণতন্ত্র, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার শত্রুদের রুখতে খেলা হবে।  তৈরি হয়ে যান। প্রস্তুত হয়ে যান। নির্বাচনের আর বেশি সময় নেই। ছাত্র রাজনীতিকে আকর্ষণীয় করবেন নিজেদের আচরণে। এটা হলে নেত্রীর সুনাম আরও বাড়বে।

বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, এরা হাত-পা ধুয়ে শুয়ে গেছেন। কোথায় আন্দোলন? ১০ ডিসেম্বরের আন্দোলন গোলাপবাগের গরুর হাটে গিয়ে হোঁচট খেল। গর্তে পড়ে গেল। এখন আর পদযাত্রায় কাজ হয় না। তাই এখন শোক যাত্রা। বিএনপি এখন শোক মিছিল শুরু করেছে। বিজয় আমাদের হবেই। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব আছে আমাদের ভয় নেই।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর