• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

জামালপুরে কুয়াশা আজ সফল উদ্যোক্তা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৭ মে ২০২১  

সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়ার মাঝের সময়টাতে অনেক মাকেই বাইরে বসে গল্প-আড্ডায় সময় কাটাতে দেখা যায়। কিন্তু জামালপুরের কুয়াশার এভাবে সময় নষ্ট করতে ভাল লাগতো না। তিনি স্কুলের অভিভাবকের আড্ডার ফাঁকে দেখতে পান অভিভাবকদের মধ্যে কেউ কুশি সেলাই, কেউ হাতের কাজ, কেউ আবার পুতির কাজ করছেন।

ছেলের স্কুলের সেই সময়টা কাজে লাগানোর ইচ্ছে থেকেই শুরু হয়ে গেল উদ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা। ছেলের গিফটের মাত্র ১০ হাজার টাকা পুঁজি ও ১২ জন কর্মী নিয়ে শুরু হয় তার পথচলা। তবে এটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ততটাই কঠিন ছিল তার জন্য।

পরিবারের সবার প্রতি খেয়াল রেখে এবং নিজের লেখাপড়া চালিয়ে ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে সময় পারি দিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার লড়াইয়ে টিকে থাকতে হয়েছে তাকে।

অদম্য মনোবলের কারণেই ঘরে বসেই তিনি ব্যবহার করেছেন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। সুঁই-সুতার ছন্দে হাতের নিপুণতায় ঘরে তৈরি নানা ধরনের কাপড়ের হস্তশিল্প নিয়েই তার স্বপ্নের পথযাত্রা।

কুয়াশা ও তার কর্মীদের তৈরি ওয়ান পিস, টু-পিস ও থ্রি-পিস এর মতো হাতের সুনিপুণ কারুকাজের এসব পণ্য এখন দেশের গন্ডি পেরিয়ে আমেরিকা, লন্ডন, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, জাপান ও কুয়েতসহ বাইরের ৯টি দেশের গ্রাহকের কাছে যাচ্ছে।

কুয়াশা বলেন, ২০১৫ সালে ছোট ভাই আলমগীর হোসেনের সার্বিক সহযোগিতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অনলাইন বিজনেস প্ল্যাটফর্মের সাথে যুক্ত হন। এছাড়াও অনলাইনের খুঁটিনাটি বিষয় শিখতে থাকেন।

নিজেকে আরও যোগ্য করে তোলার জন্য সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। পণ্যের বাজার তৈরি সংক্রান্ত একাধিক প্রশিক্ষণও নিয়েছেন অনলাইনের মাধ্যমে।

‘কুয়াশা হস্তশিল্প জামালপুর’ নামে নিজের ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের গ্রুপের মাধ্যমে তিনি পণ্যের অর্ডার পান। যুক্ত হন ওমেন এ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) নামে একটি গ্রুপে।

শুরুতে মাত্র ১২ জন কর্মীকে নিয়ে সুঁই সুতার ছন্দে বিভিন্ন নকশি পণ্য তৈরি ও বিক্রি শুরু করেছিলেন তিনি।

অর্ডার পাওয়ার পর কর্মীদের সকল কাজ বুঝিয়ে দেন কুয়াশা। পণ্যের মান ও ভিন্নতার দিকে নজর রাখেন সবসময়। নিজে কাজ করার সঙ্গে কর্মীদের কাজের মান প্রতিনিয়ত তদারকি করেন তিনি। কুয়াশা বলেন, আমাকে দেখে আমার ৫৫ বছর বয়সী মা উদ্যোক্তা হয়েছেন।

অনেক সহপাঠী ও জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের অনেক নারী উদ্যোক্তারাও তার অনুপ্রেরণায় কাজ শুরু করছেন। তার হাতের কাজের ওয়ান পিস, টু-পিস ও থ্রি-পিসসহ আরও আন্যান্য পণ্য যাচ্ছে ৯টি দেশে।

পর্যায়ক্রমে কুয়াশা হস্তশিল্প জামালপুর ও দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ব্যাপক সুনাম অর্জন করে চলছে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যক্তি পর্যায় ও ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান থেকে ছোট বা বড় আকারে এসব অর্ডার আসছে।

কুয়াশা হস্তশিল্প ১২ জন কর্মী থেকে তার এখন কর্মী সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে।

উদ্যোগের লভ্যাংশের বড় অংশ ব্যয় করতে চান অসহায় মানুষের কল্যাণে।

কুয়াশা জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। তার এক ছেলে আবরার মাহবুব সত্য। সে পঞ্চম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। স্বামী মাহবুব এ খোদা মনি। তিনি একজন সমাজ সেবক এবং জামালপুর রিলেশন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রের স্বত্ত্বাধিকারী। শ্বশুর মো. সুলাইমান। তিনি জামালপুর জিলা স্কুলের সাবেক প্রধান শিক্ষক। শাশুড়ি সালেহা খাতুন। তিনি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রয়াত সাবেক প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন।

কুয়াশা ওমেন এ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) নামে গ্রুপে যুক্ত হন তার এক গ্রাহকের মাধ্যমে। গ্রুপটি শুধুমাত্র দেশীয় পণ্য নিয়ে কাজ করে। অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে এই গ্রুপের সদস্য সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১ লাখ ৫০ হাজার। সদস্যদের বেশির ভাগই নারী উদ্যোক্তা।

(উই) গ্রুপে ৭ মে ২০২০ ইং থেকে এপ্রিল ২০২১ ইং পর্যন্ত সেল হয়েছে ২৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। মূলত ‘কুয়াশা হস্তশিল্প জামালপুর’ প্রতিষ্ঠানটি একটি পাইকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান।

(উই) গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হলেন নাসিমা আক্তার নিশা নামের এক সফল নারী উদ্যোক্তা।

কুয়াশা বলেন, এই ওমেন এ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) গ্রুপে আজ আমাকে এড না করলে আমি এত বড় একটি অনলাইন বিজনেসে আসতে পারতাম না। আমি উই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা নাসিমা আক্তার ও এ্যাডভাইজার রাজিব আহমেদ এর কথা কোন দিনও ভুলবো না।

এর পৃষ্ঠপোষক হলেন টেক জায়ান্ট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পুরোধা ফেসবুকের ‘কমিউনিটি লিডারশিপ প্রোগ্রাম’ এর আওতায় বিশ্বের মাত্র একশত জন ফেলো ব্যক্তির মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশের ফেসবুক কমিউনিটি লিডার রাজিব আহমেদ। যিনি ছিলেন বাংলাদেশের ই-কমার্স এসোসিয়েশন ই-ক্যাব (e-CAB)-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এই অনন্য মহান ব্যক্তির কাছে কুয়াশা হস্তশিল্প এবং এর ২ হাজার কর্মীসহ বিশাল পরিবার ও সকল শুভানুধ্যায়ী বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর