• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

অসহায়দের পাশে প্রিয় সানন্দবাড়ী সেচ্ছাসেবী সংগঠন মানবতার দেয়াল

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৩ জানুয়ারি ২০২৩  

প্রিয় সানন্দবাড়ী ফেসবুক গ্রুপ কর্তৃক ব্যবস্থাপনায় গ্রুপের এডমিন প্যানেল এই মহান উদ্যোগ গ্রহণ করেন। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সানন্দবাড়ী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বাউন্ডারি দেয়ালে মানবতার প্রথম দেয়াল হিসাবে উদ্বোধন করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন লেখক,সাহিত্যিক, গবেষক ও সানন্দবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের (অবঃ) প্রধান শিক্ষক আলহাজ্ব  এম. এ বারী আকন্দ, সানন্দবাড়ী বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের (অবঃ) সহকারী শিক্ষক, কবি আলহাজ্ব আজিজুর রহমান, প্রিয় সানন্দবাড়ী ফেসবুক গ্রুপের এডমিন প্যানেল এর সদস্য মোঃ রাশেদ আকন্দ, মেহেদী মিরাজ, নাজমুল হাসান, ফরিদুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম, রোকনুজ্জামান সহ এলাকার সচেতন মহল।

হত দরিদ্র শীতার্ত, ফুটপাতে বসবাস রত, ভাস্যমান সহ অসহায়দের উপকারে আসে এমন ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাদের অপ্রয়োজনীয় কাপড় রয়েছে তারা সেখানে রেখে যাবেন এবং যাদের প্রয়োজন তারা সেখান থেকে কাপড় নিয়ে যাবেন। মানবতার দেয়াল থাকবে চরআমখাওয়া ইউনিয়নের সানন্দবাড়ী উত্তর বাজার, মধ্য বাজার, দক্ষিণ বাজার,
মিতালী বাজার, লংকার চর বাজার, মৌলভীরচর বাজার,  ডাংধরা ইউনিয়নের কাউনিয়ারচর বাজার, বাঘারচর বাজার, পাথরেরচর  সহ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে।

এম.এ বারী আকন্দ বলেন – এমন মহান উদ্যোগ নেওয়ার জন্য প্রিয় সানন্দবাড়ী ফেসবুক গ্রুপের এডমিন প্যানেলের সকল সদস্যদের  আমার অন্তর থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সেই সাথে তাদের এই মানবিক কাজের সাধুবাদ জানাচ্ছি।

ষড়ঋতুর বাংলাদেশে পৌষ ও মাঘ এ দুমাস শীতকাল। শীতকাল কারো কারো জন্য আনন্দের বিষয়। শীত মানেই কুয়াশা-মোড়ানো ভোরে চুলোর পাশে বসে পিঠা খাওয়া। ঝড়া পাতা জড়ো করে জালিয়ে আগুন তাপানো। গল্পের আসরে বসে ধুমায়িত চা-কফির উষ্ণ স্বাদ। দীর্ঘ রাতে লেপ-কম্বলের ওম লাভের আনন্দ। কিন্তু যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয় তাদের জন্য শীত মানে ভয়াবহ দুঃসংবাদ। শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এক টুকরো শীতের কাপড় তাদের জন্য যেন শত আরাধনার ধন। দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের অনেক মানুষের প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রও নেই শীতের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য। 

তাই মানুষের মনে হাসি ফোটাতে অসহায়ের পাশে থাকার আশা নিয়ে আপনাদের মাঝে যুক্ত হয়েছে আপনাদের বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম  প্রিয় সানন্দাবাড়ী ফেসবুক গ্রুপ।

আমাদের আশপাশেও এমন মানুষের সংখ্যা কম নয়। সড়কের পাশে, বাস ও ট্রেন স্টেশনে, বাজার-ঘাটে রাতের বেলা এমন অনেক অসহায় মানুষকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আমরা যখন লেপ-কম্বল গায়ে জড়িয়ে দীর্ঘ রাত সুখ নিদ্রায় বিভোর তখন তাদের রাত কাটে নির্ঘুম অবস্থায় শীতের প্রকোপে যবুথবু হয়ে। যার পেটে ভাত নেই তার গায়ে গরম কাপড় জুটবে কোত্থেকে! আমরা কি পারি না তাদের সাহায্যে একটু এগিয়ে আসতে?

সমাজের অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলেরই নৈতিক দায়িত্ব। অসহায়দের সাহায্যে এগিয়ে আসার মাধ্যমেই রচিত হবে মানবিক সেতুবন্ধন। আমাদের সামান্য সহযোগিতা তাদের জীবনে এনে দিতে পারে এক টুকরো সুখ। কনকনে শীতে ঠকঠক করে কাঁপা মানুষের গায়ে শীতবস্ত্র জড়িয়ে তার মুখে হাসি ফোটানোর চেয়ে আনন্দের আর কী হতে পারে। এর মাধ্যমে প্রকাশ পায় মানুষের প্রতি আমাদের মমত্ব ও ভালোবাসার। আমরা চাইলেই এসকল দুঃখী মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারি। এর জন্য কি অঢেল বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়া প্রয়োজন?

মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকেরাও করতে পারেন অনেক কিছু। এসকল অসহায়দের প্রতি তাদেরও রয়েছে কিছু নৈতিক দায়িত্ব। আমাদের উপার্জিত অর্থের সামান্য পরিমাণও যদি এসকল অসহায়দের জন্য আমরা বরাদ্দ করি তাহলে বিন্দু বিন্দু সে দান শীতার্তদের কষ্ট লাঘবে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে। 

বড় অংকের অর্থ দান করা জরুরি নয়। আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সাথে অল্প দানও অনেক মূল্যবান। তাছাড়া আমাদের অতিরিক্ত  সোয়েটার, জ্যাকেট, কম্বল ইত্যাদি শীতবস্ত্র দান করার মাধ্যমেও আমরা তাদের পাশে দাঁড়াতে পারি।

ইদানীং অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ‘মানবতার দেয়াল’ নামে একটি উদ্যোগ সকলের নজর কেড়েছে।

আপনার বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম প্রিয় সানন্দবাড়ী ফেসবুক গ্রুপও কোন অংশে পিছিয়ে নেই, প্রিয় গ্রুপটির পক্ষ থেকেও এমন  সুব্যবস্থা ও মানবিক দেওয়াল প্রস্তুত করে আপনাদের মাঝে তুলে ধরেছেন, আপনিও চাইলে সে দেওয়ালে আপনার ঘরের কোনে পড়ে থাকা নতুন-পুরাতন কাপড় ও শীতবস্ত্র গুলো এই মানবিক দেয়ালে গরীব অসহায়দের জন্য রাখতে পারেন। 

মানবিক দেওয়াল গুলোর ব্যাপারে আপনি নিশ্চয়ই যানেন,

এ সকল দেয়ালে মানুষের প্রয়োজনীয় কাপড় ও শীতবস্ত্র থাকে। যাদের অতিরিক্ত কাপড় আছে তারা সে দেয়ালে তা রেখে যায়। সেখান থেকে যে কেউ তার প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে যেতে পারে। এটা ইতিবাচক একটি উদ্যোগ। সামজিক উদ্যোগে এ ব্যবস্থাটি আরো সুন্দর করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে এ বিষয়ে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেছেন-

مَنْ كَانَ مَعَهُ فَضْلُ ظَهْرٍ، فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لَا ظَهْرَ لَهُ، وَمَنْ كَانَ لَهُ فَضْلٌ مِنْ زَادٍ، فَلْيَعُدْ بِهِ عَلَى مَنْ لَا زَادَ لَهُ، قَالَ: فَذَكَرَ مِنْ أَصْنَافِ الْمَالِ مَا ذَكَرَ حَتّى رَأَيْنَا أَنّهُ لَا حَقّ لِأَحَدٍ مِنّا فِي فَضْلٍ.

যে ব্যক্তির অতিরিক্ত বাহনজন্তু বা বাহনের খালি জায়গা আছে সে যেন বাহনহীন ব্যক্তিকে তা দিয়ে সাহায্য করে। কোনো ব্যক্তির যদি অতিরিক্ত পাথেয় থাকে তাহলে সে যেন পাথেয়হীন ব্যক্তিকে তা দিয়ে সাহায্য করে। বর্ণনাকারী বলেন, নবীজী এভাবে আরো অনেক ধরনের সম্পদের কথা বললেন। তাতে আমাদের মনে হতে লাগল যে প্রয়োজনঅতিরিক্ত সম্পদে আমাদের কোন অধিকার নেই। সহীহ মুসলিম, হাদিস নং ১৭২৮/

কিছু মানুষের একটি ব্যতিক্রমধর্মী উদ্যোগও ভালো লেগেছে। শীতবস্ত্র বিতরণের ক্ষেত্রে দিনের বেলায় বিতরণ করলে তুলনামূলক সচ্ছল মানুষও শীতবস্ত্র নিয়ে যায়। এতে প্রকৃত অসহায়রা বঞ্চিত হয়ে যায়। তাই তারা রাতে এগারটা-বারটার দিকে বিভিন্ন স্টেশনে অসহায় মানুষেদের থাকার জায়গায় ঘুরে ঘুরে শীতে কষ্ট করা মানুষদের শীতবস্ত্র বিতরণ করেন। যেন প্রকৃত হকদাররাই এ দানে উপকৃত হন। তাদেরকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন। এ জাতীয় উদ্যোগ ব্যক্তিগত ভাবেও গ্রহণ করা যেতে পারে।

 কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান থেকেও এধরনের মহতি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। সাধ্য ও সামর্থ্য অনুসারে আমরা তাদের সাথেও শরিক হতে পারি।

অসহায়ের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে এ বিষয়টিও বিবেচ্য যে, উপযুক্ত পাত্রের হাত পর্যন্ত তা পৌঁছাচ্ছে কি না। তাই স্বাভাবিকভাবে এদিক-ওদিক দেওয়ার চেয়ে খুঁজে খুঁজে যথাস্থানে অনুদান পৌঁছে দেওয়ার বিষয়টিও খেয়াল করার মত। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-

لَيْسَ المِسْكِينُ الَّذِي تَرُدّهُ الأُكْلَةَ وَالأُكْلَتَانِ، وَلَكِنِ المِسْكِينُ الّذِي لَيْسَ لَهُ غِنًى، وَيَسْتَحْيِي أَوْ لاَ يَسْأَلُ النّاسَ إِلْحَافًا.

প্রকৃত অভাবী সে নয়, যে এক-দু লোকমার জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ফেরে বরং প্রকৃত অভাবী তো সেই, যার সামর্থ্য নেই অথচ (সে মানুষের কাছে মুখ ফুটে চাইতে) লজ্জাবোধ করে। অথবা (তিনি বলেছেন) মানুষের কাছে গায়ে পড়ে চায় না।

প্রিয় সানন্দবাড়ী ফেসবুক গ্রুপের এডমিন রাশেদ আকন্দ বলেন- আমি সুধী সমাজের  সকলের নিকট অনুরোধ করছি আপনার অপ্রয়োজনীয় কাপড় এখানে রেখে যাবেন এবং যাদের প্রয়োজন তারা প্রয়োজনীয় কাপড় এখান থেকে নিয়ে যাবেন। এতেই আমাদের গ্রুপের সার্থকতা।

চরআমখাওয়া  ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম জিয়া মুঠোফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, আমি  জরুরী কাজে দূরে থাকায় এ সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকতে পারিনি। 
তবে  এমন মহান উদ্যোগ গ্রহণ করায় প্রিয়- সানন্দবাড়ি সেচ্ছাসেবী সংগঠন  গ্রুপের সকল সদস্যকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর