• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

তায়াম্মুম সম্পাদনে ভূল যত: মো. বাকী বিল্লাহ খান পলাশ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৩ জুন ২০২২  


মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের জন্য যেসকল বিশেষ অনুগ্রহ দান করেছেন। তায়াম্মুম তার মধ্যে অন্যতম একটি। মূলত তায়াম্মুম অর্থ ‘সংকল্প করা’। আর পারিভাষিক অর্থে ‘পানি না পাওয়া গেলে ওযূ বা গোসলের পরিবর্তে পাক মাটি দ্বারা পবিত্রতা অর্জনের ইসলামী পদ্ধতিকে তায়াম্মুম বলে১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যদি তোমরা পীড়িত হও কিংবা সফরে থাক অথবা পায়খানা থেকে আস কিংবা স্ত্রী স্পর্শ করে থাক, অতঃপর পানি না পাও, তাহ’লে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম কর ও তা দ্বারা তোমাদের  মুখমন্ডল ও হস্তদ্বয় মাসাহ কর’ (সূরা মায়েদাহ, ৫/৬)। কিন্তু তায়াম্মুম করতে গিয়ে আমরা যে ভূলগুলি করি তা হলো।

১.    দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করা : 
পবিত্র হওয়ার জন্য মনে মনে নিয়্যত করে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে মাটিতে দুই হাত একবার মেরে, তারপর ফুঁক দিয়ে ঝেড়ে ফেলে প্রথমে মুখ, তারপর দু’হাত কব্জি পর্যন্ত একবার মাসাহ করতে হবে। তায়াম্মুম করতে গিয়ে রাসূল (ছা.) আপন দুই হাতের তালু মাটির উপর মারলেন এবং উভয় হাতে ফুঁ দিলেন। তারপর দ্ইু হাত দিয়ে মুখ মাসাহ  করলেন, তারপর দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত মাসাহ করলেন (ছহীহ বুখারী, হাদীস নং. : ৩৩৮, মিশকাত, হাদীস নং, ৫২৮)২। সুতরাং তায়াম্মুম করতে গিয়ে দুইবার হাত মারা ও কনুই পর্যন্ত মাসাহ করা সম্পর্কে যে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তা ক্রটিপূর্ণ৩। উপরন্তু ইবনে ওমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছা.) বলেন, ‘তায়াম্মুমে দুই বার হাত মারতে হবে। একবার মুখমন্ডলের জন্য এবং আরেকবার কনুই পর্যন্ত উভয় হাত মাসাহ্্র জন্য’ (মু‘জামুল কাবীর, হাদীস নং. : ১৩৩৬৬)। মূলত হাদীছটি যঈফ ( সিলসিলা যঈফাহ, হাদীস নং. : ৩৪২৭, ৭/৪৩৩) বলে উল্লেখ করা হয়েছে আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ রচিত রাসূল (ছা.) - এর ছালাত বনাম প্রচলিত ছালাত গ্রন্থের ৪৫ পৃষ্ঠায়।

২.    মোজাইক, প্লাস্টার, টাইল্সে তায়াম্মুম করা :
যদি পাক পানি না পাওয়া যায়, পানি ব্যবহারে যদি রোগ বৃদ্ধির আশংকা থাকে, পানি পেতে গেলে যদি ছালাত ক্বাযা হওয়ার ভয় থাকে, যদি কোন বিপদ বা জীবনের ঝুঁকি থাকে উপরি-উক্ত কারণে ওযু বা ফরয গোসলের পরিবর্তে  দীর্ঘদিন যাবৎ একটানা তায়াম্মুম করা যাবে (মিশকাত, হাদীস নং. : ৫২৭, বুখারী, হাদীস নং. : ৩৪৪)। তবে তার জন্য দুর থেকে মাটি বহন করে নিয়ে যাওয়ার কোন ইতিহাস পাওয়া যায় না। ভূ-পৃষ্ঠের মাটি, বালি বা পাথুরে মাটি ইত্যাদি দিয়ে তায়াম্মুম হয়ে যাবে। তবে ধুলা-মাটিহীন স্বচ্ছ পাথর, কয়লা, কাঠ, লোহা, চুন, মোজাইক, প্লাষ্টার, টাইল্্স দ্বারা তায়াম্মুম হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব রচিত ছালাতুর রাসূল (ছা.) গ্রন্থের ৬৭ পৃষ্টায়। যদিও ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ১/২১৮ এর উদৃতি উল্লেখ করে আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী তার রচিত স্বালাতে মুবাশশির গ্রন্থের ৫১ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ধুলাযুক্ত মাটি না পাওয়া গেলে ধুলাহীন পাথর বা বালিতে তায়াম্মুম বৈধ হবে। 

৩.    তায়াম্মুম শুধুই ওয়ুর পরিপূরক : 
পানি অতিরিক্ত ঠান্ডা হলে এবং তাতে ওযু-গোসল করাতে অসুখ হবে বলে দৃঢ় আশঙ্কা হলে, পরন্তু পানি গরম করার সুযোগ বা ব্যবস্থা না থাকলে তায়াম্মুম করা বৈধ৪। যেসকল কারণে ওয়ুর বিকল্প হিসাবে তায়াম্মুম করা যায় তদ্রæপ যদি গোসল ফরয হয় তবে এবং পানি ব্যবহার করা সম্ভব না হয়, তাহলে শুধু তায়াম্মুমই গোসলের বিকল্প হিসাবে কাজ করবে (ছহীহ বুখারী, হাদীস নং. : ৩৩৮, মিশকাত, হাদীস নং. : ৫২৮)। আর  ওযুর মাধ্যমে যেসকল কাজ করা যাবে তায়াম্মুম দিয়েও একই কাজ করা যাবে। পাশাপাশি  যেসকল কারণে ওযু ভঙ্গ হবে সেসকল কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়ে যাবে। তবে মাটি বা পানি না পাওয়া গেলেও ছালাত ছেড়ে দেয়া যাবে না কেননা বর্ণিত হয়েছে ‘যদি মাটি বা পানি কিছুই না পাওয়া যায়, তাহ’লে বিনা ওযুতেই ছালাত আদায় করবে (বুখারী, হাদীস নং. : ৩৩৬ - ছালাতুর রাসূল (ছা.) - মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ 

মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সত্য ও সঠিকটি জানার ও তা আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।

সহায়ক গ্রন্থ সমূহ : 
১.    ছালাতুর রাসূল (ছা.) - মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব, পৃষ্ঠা নং. : ৬৫।
২.    রাসূল (ছা.) - এর ছালাত বনাম প্রচলিত ছালাত - আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ, পৃষ্ঠা নং. : ৪৪-৪৫।
৩.    ড. মুযাফফর বিন মুহসিন -  জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছা.)-এর ছালাত। প্ষ্ঠৃা নং. : ৬৪ ।
৪.    স্বালাতে মুবাশ্শির (ছা.) - আব্দুল হামীদ ফাইযী আল-মাদানী, পৃষ্ঠা নং. : ৫০। 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর