• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ই-কমার্সে শৃঙ্খলা ফেরাতে আসছে নতুন নির্দেশনা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৫ জানুয়ারি ২০২২  

নতুন বছরে ই-কমার্স খাত পুরোপুরি শৃঙ্খলায় ফিরিয়ে আনতে ডিজিটাল কমার্স নীতিমালায় বেশ কিছু সংশোধনী আনতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে একটি সুপারিশমালা তৈরি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কর্তৃক গঠিত দুটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। সেই সুপারিশের আলোকে ই-কমার্স খাত কীভাবে পরিচালিত হবে, সে সংক্রান্ত সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। শিগগির এ সংক্রান্ত একটি ঘোষণা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

ই-কমার্স খাতের জন্য করোনা মহামারী একটা বড় সুযোগ হিসেবে হাজির হয়। কিন্তু অতিলোভ ও নীতির অভাবে সেই সুযোগের সৎ ব্যবহার করা যায়নি। ই-কমার্স ও এ খাতের উদ্যোক্তাদের এখন নানা সমালোচনার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে। অনলাইনে পণ্য বিক্রির পদ্ধতি ও ধরন নিয়ে যে সমালোচনা চলছে, তা এক সময়ের আলোচিত এমএলএম কেলেঙ্কারির কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। বড় অঙ্কের ক্যাশব্যাক, অফারের নামে ক্রেতাকে সময়মতো পণ্য না দেওয়া ও বিক্রেতা


 
প্রতিষ্ঠানের অর্থ না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগে গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি। ইভ্যালিকা- পুরো ই-কমার্স খাতকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে। শুধু ইভ্যালিই নয়, অন্তত ১০টি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের সঙ্গে বড় ধরনের প্রতারণা করেছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের চেক দিয়েছে। কিন্তু ব্যাংক হিসাবে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় চেক ‘বাউন্স’ হচ্ছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে একে একে সম্পর্ক ছিন্ন করছে পণ্য সরবরাহকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান (মার্চেন্ট)।

মহামারীতে অনলাইনে কেনাকাটা বাড়িয়েছেন নগরবাসী। অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও। তবে ই-কমার্সের নামে ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, রিংআইডি কিংবা আলেশামার্টের মতো কোনো প্রতিষ্ঠান ভবিষ্যতে যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম করতে না পারে, সেদিকে নজর বাড়ানো হবে। নিয়ম-নীতি ও দেশের প্রচলিত আইনের মধ্য দিয়ে বাড়ানো হবে ই-কমার্স খাতের সম্প্রসারণ। গ্রাহক প্রতারিত হতে পারেন- এ ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান আর ই-কমার্সের নিবন্ধন পাবে না।

জানা গেছে, এলডিসি উত্তরণে পণ্য ও জনশক্তি রপ্তানি বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া অভ্যন্তরীণ চাহিদা তৈরি এবং কৃষি-শিল্প পণ্য উৎপাদন বাড়ানো হবে। ভুটানের মতো বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য এবং অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করা হবে। এতে এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের পরও শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা আদায় করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোতে জিএসপি প্লাস সুবিধা আদায়ে জোর চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া করোনা মহামারীর ধকল কাটাতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরে বেশ কিছু চমক রাখা হবে। কর্মসংস্থান বাড়াতে বিনিয়োগ ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নে গুরুত্ব দিচ্ছে অর্থ বিভাগ। এজন্য কর ও ভ্যাট না বাড়িয়ে এর আওতা বাড়িয়ে সরকারের আয় বাড়ানোর কর্মসূচি নিতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। এ জন্য ধারাবাহিকভাবে আগামী বাজেটের আকার বাড়ানো হবে। বর্তমান সরকারের মেয়াদের শেষ অর্থবছরে সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সদস্য দেড় হাজারের বেশি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের তালিকায়ও আছে এক হাজার প্রতিষ্ঠানের নাম। গবেষণা সংস্থা লাইটক্যাসল পার্টনার্সের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের ই-কমার্সের বাজার দাঁড়াবে ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় সাড়ে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো। অথচ ৫ বছর আগেও, অর্থাৎ ২০১৬ সালে দেশে এ খাতের বাজার ছিল ৫৬০ কোটি টাকার। এ খাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫০ হাজারের বেশি। গত কয়েক বছরে সব মিলিয়ে ই-কমার্স খাতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১ লাখ ৫০ হাজার মানুষের।

বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির গবেষণায় বলা হয়েছে, কোভিডের প্রভাবে জিডিপির ক্ষতি হয়েছে ৪ লাখ ৫৮ হাজার ২৬ কোটি টাকা, যা প্রায় ৬৫ দশমিক ২ শতাংশ। সব খাতের জিডিপি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সেবা খাতে ৫৬.৯ ও শিল্প খাতের ৩৪.২ শতাংশ ক্ষতি হয়েছে। লকডাউনে বহুমাত্রিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে অনানুষ্ঠানিক খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য। বিশেষভাবে চা বিক্রেতা, ফেরিওয়ালা, খুদে দোকানি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের শিল্প খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। দেশে এ ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৮৬ লাখের ওপর। লকডাউনের সময় এদের মধ্যে ৬৫ লাখ সম্পূর্ণ নিঃস্ব হয়ে নবদরিদ্র গ্রুপে যেতে বাধ্য হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে অর্থনীতি সমিতির এই গবেষণা সম্পর্কে এখনো কোনো মন্তব্য করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে এটা সত্য। তবে অর্থনীতির সমিতির তথ্য পুরোপুরি সঠিক নয়। এজন্য আরেকটি গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন জানান, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতারণামূলক আচরণের এজন্য এ খাত বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। যার নেতিবাচক প্রভাব দেশের অর্থনীতির অন্যান্য ক্ষেত্রেও পড়বে। এই অবস্থায় বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান সংশোধন করা উচিত এবং প্রতারক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সেগুলো যথাযথভাবে প্রয়োগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর