• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ভার্চুয়াল র‍্যাম: শুধুই গ্রাহক টানার স্ট্যান্টবাজি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩  

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বর্তমানে আলোচনার তুঙ্গে রয়েছে এক্সটেন্ডেড র‍্যাম বা ভার্চুয়াল র‌্যাম বা র‍্যাম প্লাস। বিশেষ করে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের মধ্যে এ নিয়ে জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই। স্মার্টফোন উৎপাদন ও বাজারজাতকারী বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর চটকদার বিজ্ঞাপনে গ্রাহকদের মনে দেখা দিয়েছে সংশয়। প্রশ্ন উঠেছে ভার্চুয়াল র‌্যাম কি আদৌ কার্যকর নাকি শুধুই গ্রাহক টানার স্ট্যান্টবাজি?
অভিযোগ পাওয়া উঠেছে- ভার্চুয়াল র‌্যাম ব্যবহার করার নামে গ্রাহক ঠকাচ্ছে টেকনো, ভিভো, ইনফিনিক্স, শাওমি, স্যামসাং, অপোসহ বেশ কয়েকটি বিদেশি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান ভার্চুয়াল র‍্যামের লোভ দেখিয়ে কিছু সুনির্দিষ্ট মডেলের হ্যান্ডসেট গছিয়ে দিচ্ছে গ্রাহকদের। এতে ঠকছেন গ্রাহকরা, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভার্চুয়াল র‌্যাম বাড়ানোর ফলে উন্নত গেমিং পারফরম্যান্স পাওয়া যাবে বলে বাজারে প্রচারণা চালাচ্ছে হংকংভিত্তিক ট্রানশান হোল্ডিংসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা টেকনো। এই প্রচারণায় লোভে পড়ে তাদের ফোন কিনে প্রতারিত হচ্ছেন গেমিং লাভার গ্রাহকরা।

সূত্র বলছে, টেকনো তাদের স্পার্ক ৮ প্রো এবং স্পার্ক ৮ সি মডেলের ফোনে ভার্চুয়াল র‍্যামের সুবিধা দিচ্ছে। যেমন টেকনো স্পার্ক ৮ প্রো-এর র‌্যাম আসলে ৬ জিবি। কিন্তু টেকনো সরাসরি উল্লেখ না করলেও তাদের বিজ্ঞাপনে দেখাচ্ছে ৯ জিবি র‌্যাম। তাই গ্রাহকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে ৯ জিবি র‍্যাম হয়? স্মাটফোন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভার্চুয়াল র‍্যাম আসলে রম বা ইন্টারনাল স্টোরেজ ব্যবহার করে। স্টোরেজ যতই ফাস্ট হোক, তা কখনোই ফিজিক্যাল র‌্যামের মতো পারফর্ম্যান্স দিতে পারবে না। এছাড়া ভার্চুয়াল র‌্যামের রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা। অ্যান্ড্রোয়েড ফোনের যেই স্টোরেজ আছে সেগুলোর লিমিটেড লাইফস্প্যান থাকে। অর্থাৎ রাইট/রি-রাইট করার হার নির্দিষ্ট থাকে। ফলে দেখা গেছে, এক্সটেন্ডেড র‍্যাম বা ভার্চুয়াল র‌্যাম বা র‍্যাম প্লাস কাজে না এলেও বেশি ব্যবহারের কারণে অতিরিক্ত সোয়াপিং এবং রাইট/রি-রাইটের মাধ্যমে ফোনের স্টোরেজ লাইফস্প্যান কমিয়ে দেয়।

এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি ফোন কেনার সময় জানতে পারি আমার ফোনে ৮ জিবি র‌্যামের সঙ্গে আরো ৫ জিবি ভার্চুয়াল র‌্যাম রয়েছে যা ফোনকে অনেক ফাস্ট করে। কিন্ত এখন মাত্র ৮ জিবি র‌্যাম ব্যবহার করতে পারছি। অতিরিক্ত ৫ জিবি র‌্যাম কোথায় আছে খুঁজেই পাচ্ছি না।

এছাড়া বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, তারা মূলত গেম খেলার জন্য ভার্চুয়াল র‍্যাম এন্যাবল্ড ফোন কিনেছিলেন। কিন্ত গেম খেলতে গিয়ে এর কোনো সুবিধা পাচ্ছি না। ফোনের এক্সটেন্ডেড ৩ জিবি র‌্যাম কোনো কাজই করে না।

তারা আরো জানান, এটা পুরোদমে প্রতারণা। ফোন কোম্পানিগুলো পণ্যের বিক্রি বাড়াতে গ্রাহকদের সঙ্গে এ ধরনের প্রতারণা করছে।

এ বিষয়ে ট্রানশান বাংলাদেশ লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) রেজওয়ানুল হক বলেন, আমরা কখনোই ভার্চুয়াল র‍্যামের নামে গ্রাহকদের ঠকাই না। পুরো বিষয়টি বুঝিয়ে বলি। এরপর কেউ চাইলে টেকনো ফোন কিনবেন, না কিনলেও আমরা জোর জবরদস্তি করি না।

যদিও টেকনো’র বিভিন্ন আউটলেট ও রিটেইলার শপ ঘুরে তার কথার সত্যতা পাওয়া যায়নি।

এদিকে ভার্চুয়াল র‍্যামের নামে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় স্মার্টফোন ব্র্যান্ড স্যামসাংয়ের বিরুদ্ধেও। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছে এর নাম দিয়েছে ‘র‍্যাম প্লাস’। ভার্চুয়াল র‍্যামের সঙ্গে গেমিংকে মিলিয়ে গ্রাহকদের ঠকানোর অভিযোগ উঠেছে ভিভোর বিরুদ্ধেও। চীনা স্মার্টফোন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অপোও তাদের ফোনে ‘ভার্চুয়াল র‍্যাম’ সুবিধার কথা বলে প্রতারণা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ তালিকায় রয়েছে ইনফিনিক্স-শাওমির মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানও।

স্মাটফোন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রাহকরা ফোনের ভার্চুয়াল র‍্যামকে কখনোই ফিজিক্যাল র‍্যামের মতো ব্যবহার করতে পারবেন না। বর্তমান সময়ে ভার্চুয়াল র‍্যাম ব্যবহার করে ফোনের গেম বা হাই রেজুলেশনের কোনো অ্যাপের পারফরমেন্স ইমপ্রুভ করা উদ্ভট কল্পনা। ফিজিক্যাল র‍্যাম ফুল হয়ে গেলে সিস্টেম যেন ক্রাশ না করে, তাই একটা স্লো সেকেন্ডারি মেমোরি দিয়ে কোনো রকম ব্যাকআপ দেওয়ার মাধ্যমই হলো ভার্চুয়াল র‍্যাম। ভার্চুয়াল র‌্যাম নিয়ে কোম্পানিগুলো গ্রাহকদের যা বোঝাচ্ছে তা আদৌ কার্যকর নয়। এটা শুধুই গ্রাহক টানার স্ট্যান্টবাজি।
 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর