• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ফিফা: বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সারথী

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২২ মে ২০২৩  

মাঠের দুই প্রান্তে গোল পোস্ট, এর নিচেই দাঁড়িয়ে থাকেন দুই দলের গোলরক্ষক। আর মধ্যমাঠের সীমারেখার দুই পাশে বাকি দশজন করে খেলোয়াড় বিভিন্ন পজিশনে অবস্থান নেন। রেফারির বাঁশি বেজে ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় দু’দলের তুমুল লড়াই। বলছি ফুটবলের কথা।
আধুনিক সময়ে ফুটবলের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। অবশ্য গত কয়েক দশক আগেও ফুটবলের চাহিদা ছিল, তবে এই সময়ের মতো নয়। ফুটবলকে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত করতে ও ক্রীড়াপ্রেমীদের দুয়ারে পৌঁছে দিতে বিশেষ একটি সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার রয়েছে। সেটি হলো ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল দ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ফিফা)। আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে যা ফিফা হিসেবেই বেশি পরিচিত।

ফুটবলের মাধ্যমে গোটা বিশ্বকে এক কাতারে মিলিত করতে গিয়ে অসম্ভবকে প্রায় সম্ভব করেছে ফিফা। কেননা ফিফার উদ্যোগেই বিশ্বব্যাপী নানা সময়ে বিভিন্ন টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। যার মধ্য দিয়ে সমাজে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছে এই ক্রীড়া সংগঠনটি।

১৯০৪ সালের আজকের এই দিনে (২১ মে) সংগঠিত হয়েছিল ফেডারেশন ইন্টারন্যাশনাল দ্য ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (ফিফা)। এই সংগঠনের সদরদপ্তর সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। বর্তমানে এর সদস্য সংখ্যা ২১১টি দেশ।

ফিফা সংগঠিত হওয়ার ২৬ পর বিশ্বকাপ ফুটবল আসরের আয়োজন করা হয়। ১৯৩০ সালে উরুগুয়ের মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজন করে সংগঠনটি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত ২২টি বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়েছে। যার মধ্যে সর্বোচ্চ পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ব্রাজিল। বিশ্বমঞ্চের সেরার লড়াইয়ে চারটি করে ইতালি ও জার্মানি, আর্জেন্টিনা তিনটি, ফ্রান্স ও উরুগুয়ে দু’টি এবং একটি করে বিশ্বকাপ জিতেছে ইংল্যান্ড ও স্পেন।

১৯৩০ সালের বিশ্বকাপটি ঘরের তুলে স্বাগতিক উরুগুয়ে; সবশেষ ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তকমা পেয়েছে আর্জেন্টিনা। যার মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩৬ বছরের আক্ষেপ ঘুঁচে আলবিসেলেস্তাদের। 

আগামী ২০২৬ সালের বিশ্বকাপের আয়োজনের দায়িত্ব পেয়েছে যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো। বিশ্বকাপের পর্দা উঠতে এখনো অনেক সময় বাকি। তবে এরই মধ্যে আগামী বিশ্বকাপের লোগো উন্মোচন করেছে ফিফা।

এদিকে সারাবিশ্বে ফিফার সহযোগিতায় পুরুষদের ফুটবলে ৮টি টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এ তালিকা রয়েছে- ফিফা কনফেডারেশন্স কাপ, পুরুষদের অলিম্পিক ফুটবল টুর্নামেন্ট, ফিফা অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ, ফিফা অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, ফিফা ফুটসাল বিশ্বকাপ, ফিফা আরব কাপ। এছাড়াও মেয়েদের জন্য ফিফা মহিলা বিশ্বকাপ ও মহিলাদের অলিম্পিক ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করে আসছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

বিশ্ব ফুটবলকে সুসংগঠিত করতে নানা সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়ে থাকে ফিফা নির্বাহী পরিষদ। ১৯০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সংগঠনটির প্রধানের চেয়ারে বসেছেন দশজন ফুটবল সংগঠক। এর মধ্যে শুরুর দুই বছরের দায়িত্ব পেয়েছিলেন ফ্রান্সের রবার্ট গুইরিন। এরপর ১৯০৬ থেকে ১৯১৮ সাল পর্যন্ত একটানা বারো বছর দায়িত্ব পালন করেন ইংল্যান্ডের ড্যানিয়েল বার্লি ওলফল। তার মৃত্যুর পর দায়িত্ব পান হন জুলে রীমে।

মূলত জুলে রীমে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ফুটবল সারা বিশ্বের কাছে নতুনভাবে পরিচিতি পেতে থাকে। বিভিন্ন দেশের ফুটবল সংস্থার সাথে বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতা আয়োজন ও আর্থিক বিষয়াদি নিয়ে প্রচণ্ড পরিশ্রম করেন তিনি। এরই প্রেক্ষাপটে পরিশ্রমলব্ধ ফসল হিসেবে ১৯৩০ সালে উরুগুয়েতে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা আয়োজনের ব্যবস্থা করেন তিনি। 

বিভিন্ন দেশের জাতীয় ফুটবল সংস্থাগুলোর সঙ্গে পরবর্তী বিশ্বকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্যে তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখেন জুলে রীমে । এর ফলে ১৯৩৪ সালে ইতালি ও ১৯৩৮ সালে ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপগুলো বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। যার দুটিতেই চ্যাম্পিয়নের গৌরব অর্জন করে ইতালি। কিন্তু ২য় বিশ্বযুদ্ধের ফলে প্রতিযোগিতাটির মুখ থুবড়ে পড়ে। এতে পূর্ব নির্ধারিত চার বছর অন্তর অন্তর প্রতিযোগিতাটি আয়োজনে বাধাগ্রস্থ হয় সংগঠনটি।

বিশ্বযুদ্ধ শুরুর পর হিটলার ইতালি দখলে নেয়। এরপর তখনকার দুইবারের বিশ্বজয়ী ইতালির জুলে রিমে ট্রফিটির উপর নজর পড়ে নাৎসী বাহিনীর। তারা একরকম হন্য হয়ে খুঁজতে থেকে ওই ট্রফিটি। তখন সেটি তৎকালীন ফিফা সহ সভাপতি অত্তেরিনো বারোসির হেফাজতে ছিল। একটি জুতার বাক্সে ট্রফিটি খাটের নিচে রেখে দেন তিনি। আর আশ্চর্যজকভাবে তাতেই  নাৎসি বাহিনীর শকুনের চোখ থেকে বিশ্বকাপ ট্রফিটি রক্ষা পেয়ে যায়। 

এরপর কেটে যায় প্রায় ২০ বছর। জুলে রিমে ট্রফি নিয়ে সবচেয়ে বেশি তোলপাড় হয় ১৯৬৬ সালে অনুষ্ঠিত ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে। টুর্নামেন্ট শুরুর মাসখানেক আগে ওয়েস্ট মিনিস্টারে হলে একটি ডাকটিকিট প্রদর্শনীতে রাখা হয় কাপটিকে। সেখান থেকেই বেমালুম হয়ে যায় মহামূল্যবান এই ট্রফিটি। ঘটনাটি নিয়ে সারা বিশ্বে হৈচৈ পড়ে যায়। লন্ডনের তৎকালিন সবচেয়ে প্রশিক্ষিত গোয়েন্দা বাহিনী সপ্তাহখানেক অনুসন্ধান করেও এর হদিস পায়নি। মূলত ওই ঘটনার পরই সোনালি বিশ্বকাপ ট্রফি দিয়ে শুরু হয় শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই।

এরপর ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন মেয়াদে রোডোল্ফ সীলড্রয়ার্স, আর্থার ড্রিউরি, স্ট্যানলী রোস, জোয়াও হ্যাভেল্যাঞ্জ ও সেপ ব্লাটার ফিফা নির্বাহী পরিষদের দায়িত্ব পালন করেন। একুশ শতকে সবশেষ ২০১৬ সালে ফিফার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন সুইস বংশোদ্ভুদ জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। চলতি বছরের মার্চে আবারো ফিফার ৭৩তম সভাপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তিনিই।

ঊনিশ শতকে ফিফা সংগঠিত হয়েছিল বলেই বিশ্ব ফুটবল পেয়েছে পেলে, ডিয়েগো ম্যারাডোনা, জোয়ান ক্রুইফ, রোনালডো ও লিওনেল মেসির কিংবদন্তিদের। পৃথিবীতে যতদিন ফুটবল থাকবে ততদিন উচ্চারিত হবে ফিফার জয়গান।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর