• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য আরো বিস্তৃত হবে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২০ জুন ২০২২  

দেশের অন্যতম স্থলবন্দর বেনাপোল। আমদানি-রপ্তানি পণ্যের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ আনা-নেওয়া করা হয় যশোরের এই বন্দর দিয়ে। কিন্তু বেনাপোল থেকে রাজধানী ঢাকায় পণ্য পরিবহনে এত দিন ফেরিঘাট ব্যবহার করতে হতো কিংবা দীর্ঘ পথ ঘুরে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যেতে হতো। এতে সময় যেমন বেশি লাগত, তেমনি পরিবহন খরচও হতো বেশি।

পদ্মা সেতু উদ্বোধন হলে পণ্য পরিবহনে ব্যয় ও সময় কমবে। তাই পদ্মা সেতু উদ্বোধনের অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরিঘাট হয়ে ঢাকা থেকে যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল স্থলবন্দরের দূরত্ব প্রায় ২৫০ কিলোমিটার। আর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরিঘাট হয়ে দূরত্ব ২৮০ কিলোমিটারের বেশি। কিন্তু ফেরিতে পদ্মা নদী পার হতে এসব ঘাটে পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে প্রায়ই কয়েক দিন করে অপেক্ষা করতে হয়। বেনাপোলের ট্রাকচালকরা জানান, ঢাকা শহরে দিনে ট্রাক চলা বন্ধ হওয়ায় প্রায়ই ভোরের দিকে পদ্মা পার হতে পারলেও সারা দিন চালকদের বসে থাকতে হয় রাতের অপেক্ষায়। এতে সময়, খরচ দুটোই বেশি লাগে। আর বেনাপোল, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, সিরাজগঞ্জ, বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে ঢাকার দূরত্ব আরো বেশি। এ পথে খরচও বেশি।

পদ্মা সেতু চালু হলে পাঁচ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে বেনাপোল স্থলবন্দরে পৌঁছানোর আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে মোট আমদানি-রপ্তানির পরিমাণও বাড়তে পারে বলে মনে করেন তাঁরা। এ ছাড়া পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত থাকায় বিবিআইএন চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে যাত্রী, ব্যক্তিগত এবং পণ্যবাহী যান চালু হলে বেনাপোল বন্দরের গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে।

বেনাপোলের ট্রাকচালক জসিম উদ্দিন (৩২) বলেন, ‘সেতু চালু হলে বেঁচে যাই। সব মিলিয়ে ১০-১৫ মিনিটে পদ্মা নদী পার হতে পারব। ঘাটে চার-পাঁচ দিন ধরে বসে থাকতে হবে না। ’ জসিম এখন বেনাপোল থেকে পণ্যভর্তি ট্রাক নিয়ে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার বা পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া পথে পদ্মা পার হন। তিনি বলেন, ‘কখনো নাব্য সংকট, কখনো বেশি স্রোত, কখনো ঘাটে যানজট। সারা বছর একটা না একটা বিপদ লেগেই থাকে। পদ্মা সেতু চালু হলে বেনাপোল বন্দর থেকে ঢাকা বা নারায়ণগঞ্জের কারখানায় একটি পণ্যের চালান পাঁচ ঘণ্টায় পৌঁছে দেওয়া যাবে। এতে পরিবহন শ্রমিক, মালিক, কারখানা মালিক বা আমদানিকারক সবারই লাভ।

রপ্তানি ও আমদানির কাঁচামাল পরিবহন করেন বেনাপোলের ট্রাকচালক শিপন হোসেন। তিনি বলেন, ‘ফেরি হয়ে কাঁচামাল বহন করলে পচে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাই বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে যেতে হয়। এতে আবার পরিবহন খরচ বাড়ে। পদ্মা সেতু চালু হলে পণ্য নিয়ে ঢাকায় গিয়ে আবার দিনে দিনে বেনাপোলে ফিরতে পারব। সময়ও বাঁচবে, খরচও কমবে। ’

পদ্মা সেতু চালু হলে বন্দর থেকে রাজধানীতে মালামাল আনা-নেওয়ার খরচ কমবে বলে মনে করেন বেনাপোল ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আজিম উদ্দিন গাজী। তিনি হিসাব দেখিয়ে বলেন, ‘বন্দর থেকে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট দিয়ে ঢাকায় এক ট্রাক মাল পাঠাতে আমাদের কামারখালী ব্রিজের টোল, ফেরিভাড়া, গাড়ির তেলসহ (৭০ থেকে ৮০ লিটার) ৯ হাজার টাকা খরচ হয়। আর ঘাটে যানজট থাকলে আরো ৫০০ থেকে এক হাজার টাকা বেশি খরচ পড়ে। যমুনায় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে এক ট্রাক মাল পাঠাতে লালন সেতুর টোল, বনপাড়া সড়কের টোল, বঙ্গবন্ধু সেতুর টোল, গাড়ির তেলসহ (১০০ থেকে ১১০ লিটার) খরচ হয় ১১ হাজার টাকা। আর পদ্মা সেতু চালু হলে এ পথে খরচ হবে নড়াইলের কালনা ঘাটের ফেরিভাড়া, ফরিদপুরের ভাঙ্গার মোড় সড়কের টোল, পদ্মা সেতুর টোল, গাড়ির তেলসহ (৫০ থেকে ৫৫ লিটার) সাত হাজার ৬০০ টাকার মতো। ’

পদ্মা সেতু চালু হলে বেনাপোল থেকে রাজধানীতে পণ্য পরিবহনে খরচ ও সময় সাশ্রয় হবে বলে মনে করেন বেনাপোল আমদানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক আনু। তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হলে আমদানি করা পণ্যের ট্রাক ফেরিঘাট কিংবা বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে যাবে না। তখন পদ্মা সেতু হয়ে কম খরচে ও স্বল্প সময়ে এসব আনা-নেওয়া করা যাবে। ’

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর