• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

বিকল্প মুদ্রায় লেনদেন বাড়ছে, যেভাবে রাজত্ব হারাচ্ছে ডলার

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৭ মে ২০২৩  

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বিরোধ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং ওয়াশিংটনে ঋণসীমা বৃদ্ধি নিয়ে অচলাবস্থা ডলারের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুদ্রা হিসেবে ডলার নিজের অবস্থান কতটা ধরে রাখতে পারবে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, কয়েক বছর যাবৎই ডলার বাদ দিয়ে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে স্থানীয় মুদ্রার ব্যবহার বাড়াতে বেশ কিছু দেশ চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। রাশিয়ার ইউক্রেন হামলার পর এই প্রবণতা আরো বেড়ে যায়।

বিশেষত মস্কোর ওপর পশ্চিমা দেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে দেশটি বাণিজ্যে ডলারের বিকল্প হিসেবে স্থানীয় মুদ্রা রুবল ও চীনা মুদ্রা ইউয়ানে লেনদেন বাড়াচ্ছে। এর পাশাপাশি বিশ্ববাজারে ডলারের উচ্চমূল্যের ফলে চীন, ভারতসহ অনেক দেশই স্থানীয় মুদ্রায় লেনদেনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বেশ কিছু যুক্তি দেখানো হয়েছে, যেসব কারণে ডলারের প্রভাব আরো কমছে।

রিজার্ভ মান হারাচ্ছে
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবে ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ডলারের অংশ কমে হয়েছে ৫৮ শতাংশ, যা ২০ বছরে সর্বনিম্ন।
 
ইউরিজন এসএলজে ক্যাপিটাল লিমিটেডের সিইও স্টেফেন জেন বলেন, ‘এই পরিবর্তন খুবই স্পষ্ট। ২০২২ সালে দেখা গেল রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ও বাণিজ্যিক লেনদেনে ডলারের অংশ দ্রুত কমছে। এর একটি বড় কারণ ছিল ইউক্রেন হামলা ঘিরে রাশিয়ার ৬৪০ বিলিয়ন ডলারের সোনা ও বৈদেশিক রিজার্ভের অর্ধেক আটকে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়টি সৌদি আরব, চীন, ভারত ও তুরস্কের মতো দেশগুলোকে তাদের রিজার্ভ ডলারের বিকল্প মুদ্রায় নেওয়ার বিষয়টি ভাবাচ্ছে।

স্থানীয় মুদ্রার ব্যাপক দরপতন
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো বিপদের বন্ধু হিসেবে ডলার রিজার্ভ রাখে। যাতে সংকটের সময় স্থানীয় মুদ্রার দরপতন হলে ডলার কাজে লাগিয়ে এটিকে শক্তিশালী করা যায়। কিন্তু স্থানীয় মুদ্রা যদি ডলারের বিপরীতে অনেক বেশি দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে তা বিপদ আরো বাড়িয়ে তোলে। বিশেষ করে দেশগুলোকে যখন জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্য ডলারে কিনতে হচ্ছে। ডলারের দাম ব্যাপকভাবে বাড়ায় পণ্য ক্রয় ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে, ফলে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় ও মূল্যস্ফীতি বেড়েছে।

এসব কারণে হংকং থেকে শুরু করে শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান অনেক দেশেই ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে।

পণ্যবাজারে নিয়ন্ত্রণ কমছে
জ্বালানি তেল থেকে শুরু করে বৈশ্বিক বিভিন্ন পণ্য ডলারে লেনদেন হয়। এতে রাশিয়া থেকে শুরু করে ভেনিজুয়েলা পর্যন্ত উৎপাদক দেশগুলোর পণ্যবাজারে প্রবেশে বাধা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। চাবি হিসেবে ব্যবহার করা হয় ডলারকে। কিন্তু রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বাণিজ্যের পথ ও মাধ্যম বদলে যাচ্ছে। যেমন : ভারত রাশিয়ার তেল ক্রয় করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) দিরহাম ও রাশিয়ার মুদ্রা রুবলে। চীন নিজস্ব মুদ্রা ইউয়ানে ৮৮ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের রাশিয়ার তেল, কয়লা ও ধাতু ক্রয় করেছে। চীনের জাতীয় তেল কম্পানি সিএনওওসি এবং ফ্রান্সের টোটালএনার্জি গত মার্চে প্রথম ইউয়ানে তাদের এলএনজি বাণিজ্য করেছে। বিএনওয়াই মেলনের বিশ্লেষক জিউফ্রে ইউ বলেন, ‘রাশিয়ার পর এখন মানুষ প্রশ্ন তুলছে, যদি আপনিও নিষেধাজ্ঞায় পড়েন তাহলে কী করবেন?’ ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল সেটলমেন্টের (বিআইএস) তথ্য অনুযায়ী বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনে চীনা মুদ্রা ইউয়ান ১৫ বছর আগের প্রায় শূন্য থেকে এখন ৭ শতাংশে উপনীত হয়েছে।

বৈশ্বিক লেনদেনে একাধিক মুদ্রার উত্থান
বিশ্লেষকরা বলছেন, ডলারের বিপরীতে একটি বিকল্প লেনদেন ব্যবস্থা দাঁড় করানো সহজ বিষয় নয়। এ জন্য রপ্তানিকারক, আমদানিকারক, মুদ্রা ব্যবসায়ী, ঋণ ইস্যুকারী ও ঋণদাতা সবাইকে একটি নেটওয়ার্কে আসতে হবে। তা না হলে ডলারের বিপরীতে একটি শক্তিশালী মুদ্রা দাঁড়াবে না। কারণ বৈশ্বিক লেনদেনে প্রায় ৯০ শতাংশ এখনো ডলারে হচ্ছে। বিআইএসের ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী যার পরিমাণ প্রায় ৬.৬ ট্রিলিয়ন ডলার। সব অফশর ঋণের প্রায় অর্ধেক ডলারে, বৈশ্বিক ইনভয়েস বাণিজ্যের অর্ধেক ডলারে। ফলে ডলারের বিপরীতে একটি মুদ্রা দাঁড়াবে না, বরং একাধিক মুদ্রার উত্থান ঘটতে পারে। এতে বৈশ্বিক লেনদেনে বৈচিত্র্যায়ণ ঘটবে। জিউফ্রে ইউ বলেন, ‘দেশগুলো বুঝতে পারছে যে একটি বা দুটি মুদ্রায় বৈশ্বিক লেনদেন হলে তা যথেষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়।’

টসকাফান্ড হংকংয়ের এমডি মার্ক টিংকার বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াতেই বিকল্প মুদ্রায় বৈশ্বিক লেনদেন বাড়বে, ডলারের ব্যবহার কমে আসবে।’ সূত্র : রয়টার্স।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর