• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ইচ্ছা শক্তিই হাতিয়ার, প্রমাণ করলেন গৃহিণী

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১২ মে ২০২৩  

গৃহিণী পরিচয়ের পাশাপাশি মনে ছিল উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু মনের বাসনা তাড়াতাড়ি পূর্ণ হবে ভাবতেই পারেননি৷ নিজের ইচ্ছা শক্তিকে কাজে লাগিয়ে আর স্বামীর সহযোগিতায় নার্সারি গড়ে তোলার মাধ্যমে সফল উদ্যোক্তা হয়ে অনেকের জন্য করেছেন কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা।
তার নাম জেসমিন আরা। ময়মনসিংহের পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ঘেঁষা গৌরীপুর উপজেলার কাশিয়ারচর এলাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন এই নার্সারি। যেটির নাম দেওয়া হয়েছে- আধুনিক নার্সারি অ্যান্ড হর্টিকালচার ফার্ম।

অনেকে জেসমিনের সফলতা দেখে নার্সারি করে স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেক ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ী তার থেকে চারা সংগ্রহ করে বিক্রি করছেন স্থানীয় হাট-বাজারে। দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়ও বিক্রি হচ্ছে এই নার্সারির বিভিন্ন জাতের চারা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিশালাকৃতির নার্সারিতে বনজ চারা ছাড়াও দেশি-বিদেশি জাতের আম, জাম, কাঠাল, পেয়ারা, বেদানা, কমলা, আমড়া, লেবু, জাম্বুরা, সফেদা, মাল্টা, বড়ই, কামরাঙ্গা, মিষ্টি তেতুল, চালতা, লিচু, বেল, লটকনসহ বিভিন্ন জাতের অসংখ্য চারা রয়েছে। শ্রমিকরা এসব চারা পরিচর্যাসহ নানা কাজ করছেন। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ বুঝিয়ে দিচ্ছেন জেসমিন আরা৷

এ সময় কথা হয় নাসিমা, ফারহানা, নাজমা, হেলেনা ও জোসনা নামের কয়েকজন নারী শ্রমিকদের সঙ্গে। তারা জানান, কেউ অন্যের বাসাবাড়িতে আবার কেউ গৃহিণী হিসেবে নিজের বাড়িতে কাজ করতেন। কিন্তু এ নার্সারিতে কাজ পেয়ে বেতনের টাকা দিয়ে স্বামীর পাশাপাশি তারাও সন্তানদের ভরণপোষণে ভূমিকা রাখছেন। বাড়ির পাশে কাজ পেয়ে অনেকে হয়েছেন স্বচ্ছল।

জানা যায়, আপাদমস্তক একজন গৃহিণী ছিলেন জেসমিন আরা। রান্নাবান্নাসহ বাড়ির কাজ করেই জীবন অতিবাহিত হচ্ছিল তার। কিন্তু কিছু একটা কাজ করার প্রবল ইচ্ছা ছিল তার মনে। এদিকে, তার স্বামী শামছুল আলম মিঠু ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। একপর্যায়ে নার্সারি করার ইচ্ছার কথা জানালে স্বামী বাঁধা দেননি। ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ওই নার্সারি। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সফলতা পাওয়ায় বর্তমানে ১২ একর জায়গাজুড়ে তিনি নার্সারি গড়ে তুলেছেন।

এ জন্য তিনি সরকারিভাবে পেয়েছেন স্বীকৃতি, হয়েছেন সম্মানিত। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের অধিনে বৃক্ষরোপণে বিশেষ অবদান রাখায় প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কারের জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে মনোনীত করা হয়। ১৯৯৩ সাল থেকে চালু হওয়া এই পুরস্কারের প্রতিটি শ্রেণির পুরস্কার প্রাপ্তদের সনদপত্রসহ প্রথম স্থান অধিকারীকে ৩০ হাজার, দ্বিতীয় স্থান অধিকারীকে ২০ হাজার ও তৃতীয় স্থান অধিকারীকে ১৫ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়। গত বছর জেসমিন আরা প্রথম হয়েছেন।

জেসমিন আরা বলেন, শুধুমাত্র একজন গৃহিণী হিসেবে নয়, নিজেকে দেখতে চেয়েছিলাম একজন সফল উদ্যোক্তা হিসেবে। সবসময় স্বামীর পরামর্শে সারাদিন স্বপ্নের নার্সারিতে সময় দিয়েছি। ধীরে ধীরে সফলতা পেয়েছি। বর্তমানে ৩০০ প্রজাতির উন্নতমানের ৪ লক্ষাধিক চারা রয়েছে। এগুলো বিক্রি করা হচ্ছে সারাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে। নিয়মিত ২১ জনসহ ৩৫ জন শ্রমিক এ নার্সারিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

তিনি বলেন, নারীরা চেষ্টা করলেই আত্মনির্ভরশীল হতে পারে। সে জন্য প্রয়োজন নিজের ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম। পাশাপাশি স্বামীর সহযোগিতা, সফল উদ্যোক্তার পরামর্শ কিংবা প্রশিক্ষণ নিলে তা আরো সহজ হয়। সে ক্ষেত্রে আমি সফল হয়েছি। আমার কাছে অনেকে আসে নার্সারি করার জন্য। আমি তাদের সঠিক পরামর্শ দিচ্ছি।

জেসমিন আরার স্বামী ড. শামছুল আলম মিঠু বলেন, প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাচ্ছে, দুর্যোগ-সাইক্লোন হচ্ছে। প্রতিদিন কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এর সমতা আনতে হলে বেশি করে গাছ লাগাতে হবে। কারণ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গাছের অবদান অপরিসীম।

তিনি বলেন, আমার স্ত্রী নার্সারিতে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় দেন৷ আমি দেখি কখনো হেঁটে, কখনো ভ্যানে আবার কখনো রিকশায় চড়ে খুব সকালে চলে আসেন। তার কঠোর মনোবল ও পরিশ্রমের কারণে এ সফলতা এসেছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর