• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

আজ কুষ্ঠ দিবস : উচ্চ ঝুঁকিতে দেশের ১২ জেলা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৬ জানুয়ারি ২০২০  

দেশে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে- এমনটাই বলছেন জাতীয় কুষ্ঠ রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির কর্মকর্তারা। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে, পরিস্থিতি প্রায় একই রকম আছে। একই সঙ্গে এ রোগ সম্পর্কে মানুষের ধারণারও তেমন পরিবর্তন হয়নি। প্রতি বছর প্রায় চার হাজার মানুষ নতুন করে এ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাদের ১০ শতাংশ প্রতিবন্ধিতার শিকার হচ্ছে। দেশের ১২ জেলা এখনও কুষ্ঠ রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। দ্রুত চিকিৎসার আওতায় না আসায় প্রতিবন্ধিতার হার কমানো যাচ্ছে না বলে মনে করছেন সংশ্নিষ্টরা।

 

চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কুষ্ঠ রোগী হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার ভয়ে আক্রান্ত অনেকে চিকিৎসকের কাছে যায় না। কেউ কেউ কবিরাজসহ বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নেয়। এসব কারণে সব রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনতে সময় লাগে। ততদিনে রোগ অনেক দূর ছড়ায়। তাদের কেউ কেউ প্রতিবন্ধিতার শিকার হয়।

 

এমন পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘প্রতিবন্ধিতা ও বৈষম্যহীন স্বদেশ, কুষ্ঠমুক্ত হোক আমাদের বাংলাদেশ।’ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও জানুয়ারি মাসের শেষ রোববার দিবসটি পালন করা হয়। বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

 

জাতীয় কুষ্ঠ রোগ নির্মূল কর্মসূচি দেশের ১২ জেলাকে কুষ্ঠ রোগের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এগুলো হলো- রংপুর বিভাগের রংপুর, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী ও গাইবান্ধা; রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট জেলা; খুলনা বিভাগের মেহেরপুর জেলা; সিলেটের মৌলভীবাজার এবং পার্বত্য তিন জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান। এসব জেলায় প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে পাঁচজন বা তার অধিক কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি লাখে পাঁচজন বা তার অধিক কুষ্ঠ রোগী পাওয়া গেলে তাকে উচ্চ ঝুঁকি বলতে হবে। এ অনুযায়ী এই ১২ জেলা কুষ্ঠ রোগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। রাজধানীর মহাখালীর ৩০ শয্যার কুষ্ঠ হাসপাতালে ১৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

 

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. সোহেল রানা বলেন, কুষ্ঠ রোগ বংশগত নয়। এটি মৃদু সংক্রামক রোগ। শতকরা ৯৯ জন মানুষের এ রোগটি প্রতিরোধের ক্ষমতা থাকে। একশ’ রোগীর মধ্যে ২৯ জন রোগী সংক্রামক। কুষ্ঠ রোগ বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। তবে রোগী চিকিৎসার আওতায় এলে জীবাণু ছড়ায় না। বুকের দুধ খাওয়ানো হলে শিশুর মধ্যে কুষ্ঠ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে। কুষ্ঠ রোগের জীবাণু শরীরের চামড়া ও প্রান্ত স্নায়ুকে আক্রান্ত করে। চিকিৎসা নিতে দেরি হলে রোগীর হাত-পা-চোখসহ বিভিন্ন স্থানে বিকলাঙ্গতা দেখা দেয়। অনুভূতিহীন হালকা ফ্যাকাসে অথবা সাদাটে দাগ, চামড়ায় গুটি বা দানা, কানের লতি মোটা হওয়া- এসব কুষ্ঠ রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।

 

ডা. সোহেল রানা আরও বলেন, ঢাকা ও এর আশপাশের রোগী মহাখালীর এই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়। শীতের সময় রোগী একটু কম থাকে। অন্যান্য সময় রোগী বাড়ে। প্রতিদিন গড়ে ১৮ থেকে ২০ জন রোগী ভর্তি থাকে বলে তিনি জানান।

 

জাতীয় কুষ্ঠ রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৫ সালে ৫২ হাজার ১৬১ জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলেন। তাদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ ছিল প্রতিবন্ধী। ২০১১ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১০ শতাংশে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি ১০ হাজার জনগোষ্ঠীর মধ্যে নথিভুক্ত কুষ্ঠ রোগীর হার একজনের নিচে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করে। কয়েক বছর ধরে দেশে গড়ে প্রায় চার হাজার নতুন কুষ্ঠ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ২০১৮ সালে দেশে তিন হাজার ৭২৯ জন এবং গত বছর তিন হাজার ৬৩০ জন নতুন করে কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। চলতি বছরের আক্রান্তের হিসাব আগামী বছর জানুয়ারিতে পাওয়া যাবে।

 

জাতীয় কুষ্ঠ রোগ নির্মূল কর্মসূচির প্রোগ্রাম ম্যানেজার ও উপ-পরিচালক ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশের ১২ জেলাকে কুষ্ঠ রোগের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ এসব জেলায় চিকিৎসা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিরা যাতে বিনামূল্যে চিকিৎসা পেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে কুষ্ঠমুক্ত করার যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে।

 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর