• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

আজ ৩৩তম বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২০  

আজ ৩৩তম বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ দিবস উপলক্ষে এবারের প্রতিপাদ্য-‘তামাক কোম্পানির কূটচাল রুখে দাও, তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের বাঁচাও’। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৮৭ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস চালু করে। দিবসটি সরকার, জনস্বাস্থ্য সংগঠন, ধূমপায়ী, উৎপাদনকারী, এবং তামাক শিল্পের কাছ থেকে উদ্যম এবং প্রতিরোধ উভয়ের মাধ্যমে বিশ্বজূড়ে পালিত হয়ে আসছে।

 

তামাকের কারণে প্রতিবছর বিশ্বে ৮০ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। এরমধ্যে শুধু বাংলাদেশেই তামাক ব্যবহারজনিত রোগে বছরে ১ লাখ ২৬ হাজার মানুষ মারা যায়। তামাক কোম্পানির কাছে এই মৃত্যুর অর্থ তাদের ভোক্তা হারানো এবং শূন্যতা পূরণে তারা টার্গেট করে শিশু-কিশোর ও তরুণদের। 

 

বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য-“তামাক কোম্পানির কূটচাল রুখে দাও, তামাক ও নিকোটিন থেকে তরুণদের বাঁচাও”। 

 

এ বিষয়ে শনিবার (৩০ মে) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) জানায়, বছরের পর বছর ধরে তামাক এবং অন্যান্য নিকোটিন পণ্যে শিশু-কিশোর-তরুণদের আকৃষ্ট করতে অত্যন্ত কৌশলী ও আগ্রাসী প্রচারণা চালিয়ে আসছে তামাক কোম্পানিগুলো।

 

ইউএস সার্জন জেনারেল রিপোর্ট-২০১৪ অনুযায়ী, প্রায় ৯০ শতাংশ সিগারেট ধূমপায়ী ১৮ বছর বয়সের মধ্যে প্রথমবার ধূমপান করেন। অল্প বয়সে তামাকপণ্যে আসক্ত হয়ে পড়লে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে থাকে এবং বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে ফুসফুসের স্বাভাবিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়। ফুসফুস ক্যান্সার, হৃদরোগ, অকাল বার্ধক্য, মানসিক অস্থিতিশীলতাসহ নানাবিধ রোগ সৃষ্টি হয় তামাকের কারণে।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, যারা কিশোর বয়সে ধূমপানে আসক্ত হয়, তাদের অ্যালকোহলে আসক্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা স্বাভাবিকের তুলনায় তিনগুণ, গাঁজায় আটগুণ এবং কোকেইনের ক্ষেত্রে ২২ গুণ বেশি। অর্থাৎ তামাক ও নিকোটিন কেবল একটি আসক্তিই নয়, এটি তরুণদের আরও অনেক বিধ্বংসী আসক্তির পথে পরিচালিত করে।

 

প্রজ্ঞার নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের বলেন, “বাংলাদেশে বর্তমান মোট জনগোষ্ঠীর ৪৯ শতাংশই তরুণ। তামাক কোম্পানির মূল টার্গেট কীভাবে এই বিশাল তরুণ সমাজকে তামাকে আসক্ত করে ব্যবসা বাড়ানো যায়। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের করণীয় হবে তামাক কোম্পানির ছোবল থেকে তরুণদের সুরক্ষা প্রদান করা। কারণ তামাকাসক্ত অসুস্থ প্রজন্ম দেশের অগ্রগতির হাতিয়ার না হয়ে বরং সমাজ ও অর্থনীতির জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।”

 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, ধূমপান, তামাক ও ভ্যাপিং পণ্য ব্যবহারে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মানুষের জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা ও ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনের পথ সুগমে তামাকপণ্য নিয়ন্ত্রণ এবং তামাক কোম্পানির সব কারসাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

 

এক্ষেত্রে কর ও মূল্য পদক্ষেপের মাধ্যমে তামাকপণ্যের দাম বৃদ্ধি, তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবেলায় খসড়া এফসিটিসি আর্টিক্যাল ৫ দশমিক ৩ নীতিমালা চূড়ান্তকরণ ও বাস্তবায়ন, তামাকপণ্যের মোড়কে আইন অনুযায়ী সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা মুদ্রণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তামাক কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত যেকোনো ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে বিক্রয়স্থলে প্রোডাক্ট ডিসপ্লের মাধ্যমে তামাকপণ্যের প্রচার বন্ধ এবং জনসমাগম ও পরিবহনে “ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান” বিলুপ্ত করতে হবে, যোগ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।

 

গবেষণা প্রতিবেদনে বিড়ির করকাঠামো পরিবর্তনসহ একাধিক সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে:

বিড়ির সম্পূরক শুল্ক বৃদ্ধি করা এবং এখান থেকে অর্জিত বাড়তি রাজস্ব দিয়ে বিড়ি শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করা;

 

বিড়ির ওপর আরোপিত সম্পূরক শুল্ক/এক্সাইজ ট্যাক্স এর একটি অংশ সুনির্দিষ্ট কর আকারে আরোপ করা;

 

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সাথে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এবং এনবিআরের যৌথ সমন্বয়ের মাধ্যমে যেসব জেলায় বিড়ি কারখানা রয়েছে সেখানে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে বিকল্প কর্মসংস্থান অনুসন্ধান করা;

 

বিড়ি শ্রমিকদের ক্ষতিকর পেশা থেকে সরিয়ে নিতে এনজিও, বিড়ি শ্রমিকদের সংগঠন এবং সিভিল সোসাইটি সংগঠনকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে কাজ করা; 

 

এবং নারী, শিশু, বয়স্ক এবং শারীরিকভাবে অক্ষম বিড়ি শ্রমিকদের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে উপযুক্ত শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর