• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ভালো দাম পাওয়ায় খুশি সখীপুরের লেবুচাষিরা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৪ এপ্রিল ২০২১  

বাজারে লেবুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় লেবুচাষিদের মুখে হাসি দেখা দিয়েছে। উপজেলার শতাধিক লেবুচাষি এবার লেবু বিক্রি করে বেশ আয় করছেন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সখীপুরে এবার ১৩০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়েছে। 

উপজেলার শতাধিক ব্যক্তি বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ করেছেন। উপজেলার গজারিয়া, কাঁকড়াজান, বহুরিয়া, হাতীবান্ধা, যাদবপুর, দাড়িয়াপুর ও কালিয়া ইউনিয়নে লেবু চাষ বেশি হয়েছে। এর মধ্যে গজারিয়া গ্রামের মোসলেম, কালিয়ানপাড়ার মারফত আলী, আবদুস সামাদ, জামাল উদ্দিন, শামীম আল মামুন, আলাল উদ্দিন, গিয়াস উদ্দিন, বোখারী, শামসু, জাহাঙ্গীর আলম, রফিকুল ইসলাম, কচুয়া গ্রামের মাইনুল ইসলাম, মহানন্দপুর গ্রামের আবদুল মতিন উল্লেখ্যযোগ্য লেবুচাষি।

গজারিয়া গ্রামের লেবুচাষি মোসলেম উদ্দিন বলেন, তিনি চার একর জমিতে লেবু চাষ করেছেন। প্রতি একরে সাধারণত ৩০০–৩৫০টি চারা রোপণ করা হয়। খরচ পড়ে প্রতি একরে ৭০–৮০ হাজার টাকা। চারা রোপণের তিন বছর পর সাধারণত লেবু বিক্রি শুরু হয়। 

তিনি বলেন, এবার মার্চ মাসে প্রতি বস্তা লেবু (১২০ কেজি) পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৯–১০ হাজার টাকা। খুচরা বিক্রি হয়েছে ৪০–৫০ টাকা হালি। এপ্রিল মাসে লেবুর দাম খানিকটা কমে গেছে। এখন প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে পাঁচ–ছয় হাজার টাকা। খুচরা বিক্রি হচ্ছে ২০–২৫ টাকা হালি। 

মোসলেম উদ্দিন আরও বলেন, তিনি এবার ১০ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন। আগামী এক মাসে আরও পাঁচ লাখ টাকার বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন।

কালিয়ানপাড়া গ্রামের লেবুচাষি মারফত আলী দুই একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষ করেছেন। তাঁর তিনটি বাগান। চার বছর ধরে তিনি লেবু বিক্রি করছেন। দুই বছর আগে তেমন দাম পাননি। গত বছর ও চলতি বছর করোনাভাইরাস এবং রমজানের কারণে লেবুর চাহিদা বাড়ায় এবার পাঁচ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন। 

মারফত আলী বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে লেবু বিক্রিতে দ্বিগুণ মূল্য পেয়েছি। লেবুর কলম করে চারা বিক্রি করেও প্রচুর আয় হয়েছে। এবার ১২ হাজার কলমের চারা বিক্রি করে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি।’

কচুয়া গ্রামের মাইনুল ইসলাম। তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য। তাঁর ভাষ্য, তিন বছর ধরে উপজেলার কচুয়া এলাকায় পাকা সড়কের ধারে দেড় একর জমিতে লেবু চাষ করেছেন। এবার খরচ বাদে তিনি দেড় লাখ টাকা আয় করেছেন। এ বছর বাগান আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে তাঁর।

সারা দেশে লেবুর ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে বলে জানান গাজীপুর থেকে আসা লেবুর পাইকারি ক্রেতা আবদুল খালেক। তিনি বলেন, সখীপুরের বিভিন্ন বাগান থেকে লেবু কিনে ট্রাকে করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠান। এবার লেবুর দাম ভালো থাকায় ব্যবসাও বেশ ভালো হচ্ছে।

উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওবায়দুল হক খান বলেন, এবার লেবু চাষে পাঁচ লাখ টাকা লাভ করেছেন এ রকম চাষির সংখ্যা উপজেলায় কমপক্ষে ২৫ জন। করোনায় বিশ্ব অর্থনীতি চাপের মুখে পড়লেও লেবুচাষিরা দ্বিগুণ মূল্য পাওয়ায় তাঁরা খুশি। অবশ্য এক মাসে লেবুর দাম আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে।

উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা আনিছুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লেবুতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ আছে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় বলে করোনাকালে সবাই লেবু খাচ্ছেন। ফলে অন্য সব বছরের তুলনায় দুই বছর ধরে লেবুর চাহিদা কয়েক গুণ বেড়েছে। এতে সখীপুরের শতাধিক চাষি লেবু বিক্রি করে লাভবান হয়েছেন।

সখীপুরের মাটি লেবু, মাল্টা ও কমলা চাষের জন্য খুবই উপযোগী বলে জানান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, চাষিদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। ফলে চাষিরা লেবু চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। ফলন বেশি হওয়ায় ও ভালো দাম পাওয়ায় চাষিদের মুখে হাসি ফুটেছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর