• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

করতোয়ার ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ ভেঙ্গে ছয় নতুন ৬ টি গ্রাম প্লাবিত

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০  

উজান থেকে নেমে আসা পানির ঢলে ও গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে গাইবান্ধায় করতোয়া, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও ঘাঘটসহ জেলার সবগুলো নদ-নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এদিকে অন্যান্য নদী গুলোর মতো করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পলাশবাড়ী  উপজেলায় কিশোরগাডী ইউনিয়নের টোংরাদহের ২টি পয়েন্টে ৯০ ফুট বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ৬টি গ্রাম আকস্মিকভাবে প্লাবিত হয়। ফলে বসতবাড়ীসহ রোপা আমন ধান ও অন্যান্য ফসল তলিয়ে গেছে।

 

এছাড়া পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী ও হোসেনপুর ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় প্রায় ২০ টি গ্রামে পানি ঢুকে পড়েছে। অসময়ে আকস্মিক এই বন্যার সংশ্লিষ্ট  এলাকায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কিশোরগাড়ী ইউনিয়নের মুল ২ টি রাস্তা ছাড়া ইউনিয়নের বেশির ভাগ রাস্তার উপর দিয়ে পানি রয়েছে এছাড়াও ঘরবাড়ীতে পানি ওঠায় বাড়ীর লোকজন চরম দুর্ভোগের মুখে পড়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বন্যা কবলিত এলাকায় রোপা আমন চাষী ৪ হাজার ৫শত ৫০ টি, সবজ্বি ফসল চাষী ১ হাজার ৩ শত ৯৫ টি,কলা চাষী ৬০ টি পরিবার তার চাষাবাদকৃত ফসল নিয়ে ও  তাদের পালিত গবাদী পশু,গরু,ছাগল,হাস মুরগী,পুকুরের মাছ  নিয়ে বিপদগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। 

 

এছাড়াও পলাশবাড়ীতে কয়েকদিনের অবিরাম ভারী বর্ষণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বীজতলা,পুকুরের মাছ, কাঁচা তরি-তরকারির ফসল,কলার ক্ষেত,ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। । জানা গেছে, গত ৮-১০ দিনের লাগাতার অবিরাম ভারী বর্ষণের ফলে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কিশোরগাড়ী, হোসেনপুর, পলাশবাড়ী, বরিশাল, মহদীপুর, বেতকাপা, পবনাপুর, মনোহরপর ও হরিনাথপুর ইউনিয়নের সকল নিম্নাঞ্চল স্থান সমূহে বৃষ্টির পানি বৃদ্ধি পেয়ে রোপা আমনের ক্ষেত, বীজতলা ও গ্রামীন রাস্তা-ঘাটগুলো পানির নিচে তলিয়ে গেছে।ফলে আগামী চলমান আমন মৌসুমে আমন ধান,সবজি আশানুরুপ ফলনে বঞ্চিত হবে চাষীরা। এছাড়াও সমগ্র উপজেলার অধিকাংশ পুকুরে পানি উপছে চাষ করা মাছ বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে।মাছ চাষীরা মাছ আটকাতে জাল ব্যবহার শুরু করেছেন।এদিকে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল এলাকা সমূহের রোপা আমনের ক্ষেত,বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকেলে উপজেলার ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার চিত্র সরেজমিন পরিদর্শন করেন,গাইবান্ধা কৃষি স¤প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান,অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শস্যা কামরুজ্জামান, পলাশবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আজিজুল ইসলাম,উপ-সহকারী মন্জুর হাসান,শাপলা বেগম।পানি বৃদ্ধির ফলে নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়ে কৃষি ক্ষেতে ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে পলাশবাড়ী কৃষি অধিদপ্তর জানান,রোপা আমন আংশিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমান-১ হাজার হেক্টর দানাদার ফসলি জমি,সবজি ফসলি জমি ক্ষতির পরিমান-৮৫ হেক্টর ,কলা আংশিক জমির ক্ষয়ক্ষতির পরিমান-৫ হেক্টর।

 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ কামরুজ্জামান নয়ন জানান,বাধ ভেঙ্গে পানি ঢুকে নতুন এলাকা  প্লাবিত হলেও এখানে তেমন বড় কোন বন্যার প্রভাব পড়েনি । তবে এ এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে আবাদী জমি গুলো এগুলো পানির নিচে তলিয়ে আছে আশা করা হচ্ছে যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে এবং আগামী ২ তিন দিনে যদি পানি নেমে যায় তাহলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি কম হবে । যে কোন দূর্যোগ মোকাবেলার জন্য অঙ্গিকার করেছেন বর্তমান সরকার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে সরকার আছে এবং থাকবে । তিনি বন্যা কবলিত এলাকার কৃষকদের উদ্দেশ্যে বলেন, হতাশার কিছু নেই, পরিস্থিতির উপর বিবেচনা করে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা মাধ্যমে কৃষি সহায়তার প্রদান করা হবে।

 

অপরদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, নদ-নদীর পানি এখনও বিপদসীমা অতিক্রম না করলেও করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালি পয়েন্টে মঙ্গলবার বিপদসীমার ৮১ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এছাড়া ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমা ছুই ছুই করছে। এদিকে করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার দরবস্ত, শিবপুর, সাপমারা, নাকাই, কাটাবাড়ী, ফুলবাড়ী, হরিরামপুর, মহিমাগঞ্জ, রাখালবুরুজ ও তালুকানুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ীতে পানি ঢুকে পড়েছে। ডুবে গেছে হাজার হাজার একর ফসলী জমি। 

এদিকে জেলা প্রশাসন ইতোমধ্যে প্রাথমিকভাবে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষের মধ্যে বিতরণের জন্য ৫ মে. টন চাল বরাদ্দ দিয়েছে বলে জানা যায়।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর