• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

করোনা পরিস্থিতিতে কোথায় ঠেকেছে মানবিক মূল্যবোধ!

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১ মে ২০২০  

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজ ছাড়া একাকী জীবনযাপন কতটা কষ্টের তার কিছুটা হলেও অনুভব করা যাচ্ছে বর্তমান প্রেক্ষাপটে। এই করোনা পরিস্থিতিতে মানুষের বিবেক, মনুষ্যত্ব ও মূল্যবোধ যেমন হওয়া উচিত কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার উল্টোটা পরিলক্ষিত হচ্ছে বর্তমান সমাজে। মানবিকতার পরিবর্তে সমাজ হয়ে পড়ছে অনেকটাই অমানবিক। 

 

মানুষের সবচেয়ে কাছের মানুষ তার  মা-বাবা। অতি আপনজন সে বাবা-মাকেও যেন ঠাঁই দিচ্ছে না অনেক পাষাণ সন্তান। গত কয়েকদিন আগে টাঙ্গাইল ও সাভারে এ রকম  ঘটনার খবর পাওয়া যায়। করোনার কারণে প্রিয় মাকে জঙ্গলে ফেলে চলে যায়  নিজ সন্তানরা। কতটাই নির্মম! কী পাষাণ সন্তান! এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'মায়ের একটু সর্দি-কাশি, জ্বর হলো দেখে তাকে জঙ্গলে নিয়ে ফেলে আসে ; বাংলাদেশের মানুষেরা তো এরকম অমানবিক হওয়ার কথা না।' 

 

 এদিকে আবার রাজধানীর কাঁঠালবাগানে ভাড়া দিতে না পারায় ঝড়ের রাতে তিন শিশুসহ এক দম্পতিকে বাসা থেকে বের করে দেয় বাড়ির মালিক। দুই মাসের শিশু  সন্তানসহ ভাড়াটিয়াকে রাতটুকু অবস্থান করতে দেয়নি নির্মম বাড়ি ওয়ালা। 

 

এ ক্রান্তিলগ্নে রাস্তায় পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করা মানুষটিকেও দেখা গেছে যাকে দ্রূত চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য কেউ এগিয়ে আসছে না। করোনা হলে প্রিয়জন থেকেও দূরে থাকতে দেখা যায় অনেককে। এমনকি করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিটিকে দাফন-কাফন  বা সৎকারের ব্যবস্থা পর্যন্ত করছেন না স্বজন বা প্রতিবেশিরা। আবার মৃতদেহটি কবরস্থ করতে এলাকাবাসীর আপত্তির খবরও পাওয়া গেছে। 

 

করোনার প্রভাবে নিম্ন আয়ের মানুষদের দুর্বিষহ জীবনযাপন করতে হচ্ছে। তাদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দকৃত ত্রাণ আত্মসাৎ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে কোন কোন জায়গায়। প্রধানমন্ত্রীর কঠোর হুশিয়ারি থাকা সত্ত্বেও ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম করেন কিছু অসাধু ব্যক্তি। ফলে সেসব জায়গায় অনুদান পেতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। 

 

এহেন পরিস্থিতিতে স্থানীয় হাসপাতাল গুলোতেও মিলছে না সুচিকিৎসা। সর্দি-জ্বর বা সাধারণ যেকোন রোগের চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায় অনেক রোগীর কাছ থেকে। আবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত ডাক্তার হাসপাতালে উপস্থিত না হওয়ার কথা উল্লেখ  করেন। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মাঝখান থেকে বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে  সর্বসাধারণকে।

 

কোভিড ১৯ (করোনা) মোকাবেলায় সরকারি নির্দেশনায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন চিকিৎসক, প্রশাসন, পুলিশ, সামরিক বাহিনী, জন প্রতিনিধি, সাংবাদিক এবং সরকারি -বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সদস্যবৃন্দ। দিনরাত কাজ করতে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হয়ে জীবন দিতে হচ্ছে চিকিৎসক, পুলিশ ও সাংবাদিককে।

 

 দেশ যখন করোনার বিরুদ্ধে লড়ছে তখন আবার একদল এটিকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটছে। এ সময় সবারই একটু বেশি মানবিক হওয়ার কথা; অথচ আত্মকেন্দ্রিকতা ভর করছে অনেকের মাঝে। উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে মানবিকতা। 

 

 

মানবিক মূল্যবোধ ফিরে আসুক মানবসত্তায়। সহনশীলতা নিয়ে বেঁচে থাকুক প্রতিটি মানবাত্মা। জনহিতকর কাজে মনোনিবেশ করার মানসিকতা তৈরি হোক সকলের মনে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর