• বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৭ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

কাল থেকে শুরু হবে ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৬ জানুয়ারি ২০২০  

ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বে ময়দানে আসছেন মুসল্লিরা। টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলীগ জামাতের ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফা দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের শীর্ষ মুরুব্বীদের আম বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হবে শুক্রবার।

 

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রায় ৮ হাজার সদস্যরে সমন্বয়ে গঠিত ৫ স্তরের নজিরবিহীন নিরাপত্তায় আলমী শূরার তত্ত্বাবধানে মাওলানা যোবায়ের অনুসারীদের প্রথম দফা ইজতেমা শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে গত রোববার।

 

তারা সোমবার রাতে ময়দান খালি করে চলে যাওয়ার পর দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভী অনুসারী মাওলানা ওয়াসিফুল ইসলামের নেতৃত্বে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ৩ দিনব্যাপী দ্বিতীয় দফার ইজতেমা। রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে দ্বিতীয় দফা তথা এবারের বিশ্ব ইজতেমা।

 

এ পর্বের ইজতেমায়ও আগত মুসল্লিদের উদ্দেশে ঈমান-আমলের ওপর তাবলীগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় দেশি-বিদেশি আলেম-মাওলানাগণ গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করবেন।

 

মাগরিবে ইজতেমার দ্বিতীয় দফা গণমাধ্যম সমন্বয়কারী মো. সায়েম জানান, মাওলানা সাদ আহমদ কান্ধলভী মনোনীত দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের ৩২ সদস্যবিশিষ্ট একটি জামাত বুধবার বাদ মাগরিব টঙ্গী ইজতেমা ময়দানে এসে পৌঁছেছেন। এ জামাতের নেতৃত্বে রয়েছেন দিল্লির নিজামুদ্দিন মারকাযের শূরা সদস্য মাওলানা আবদুস সাত্তার।

 

জামাতের অপর সদস্যরা হলেন মাওলানা শামীম আহমেদ, মাওলানা জামশেদ, মাওলানা মিয়াজী আজমত উল্লাহ, মাওলানা মুফতি শেহজাদ, মাওলানা রিয়াজুর রহমান, মাওলানা ইকবাল হাফিজ প্রমুখ। মুরুব্বীদের জামাতকে এস্তেকবাল (অভ্যর্থনা) জানান বাংলাদেশের শূরা সদস্য সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম।

 

বিশ্ব ইজতেমার এ দফায়ও দেশের ৬৪টি জেলার কয়েক লাখ মুসল্লিসহ বিশ্বের প্রায় শতাধিক দেশের ১০ সহস্রাধিক মেহমান ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটি।

 

ইতিমধ্যে কনকনে শীত, ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে বুধবার থেকেই মুসল্লিরা দলে দলে জামাতবন্দি হয়ে তুরাগ তীরে সমবেত হচ্ছেন।

 

বিশ্ব ইজতেমার নিয়ম অনুসারে শুক্রবার বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিক বয়ান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বুধবার ইজতেমার দায়িত্বে নিয়োজিত মুসল্লিদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান (নজমের বয়ান) করেন ভারতের মাওলানা মুফতি রিয়াজুর রহমান।

 

তিনি তার বয়ানে, আগত মুসল্লিরা যাতে কষ্ট না পায়, তাদের যাতে কোনো প্রকার সমস্যা না হয় সে দিকে নজর রাখার জন্য তিনি ইজতেমার দায়িত্বে নিয়োজিত সাথীদের আহ্বান জানান।

 

দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমা সফল করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন জামাত তৈরি করে দেয়া হয়েছে। তারা তাদের জন্য নির্ধারিত কর্মসূচি সুচারুরূপে পালন করছেন।

 

ময়দানের নজমের দায়িত্বে রয়েছে প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিব্বুল্লাহসহ ১৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি। পানি ও গ্যাসের জামাতে রয়েছেন মো. আসাদুজ্জামানসহ ৯ জন, বিদ্যুতের জামাতে রয়েছেন প্রকৌশলী সুজাত আলীসহ ১৬ জন, মাইকের জামাতে রয়েছেন আফজাল হোসেন মোল্লাসহ ৭ জন, নিজামুদ্দিনের মুরুব্বীদের জামাতে রয়েছেন ডা. নাফিজসহ ৫ জন।

 

বিদেশি খিমার নজমের জামাতে রয়েছেন মাওলানা বোরহানসহ ৬ জন, আন্তর্জাতিক শূরার জামাতে রয়েছেন প্রফেসর আবদুল হান্নানসহ ৩ জন এবং বিদেশি মেহমানদের খেদমতের জামাতে মাওলানা সাইফুল্লাহসহ ৫ জন নিয়োজিত রয়েছেন।

 

এ বছর দ্বিতীয় পর্বের বিশ্ব ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা যে সমস্ত খিত্তায় অবস্থান করবেন তা হল- মিরপুর (খিত্তা-১, ২), সাভার (খিত্তা-৩ ও ৪), টঙ্গী (খিত্তা-৫), উত্তরা (খিত্তা-৬ ও ৭), কাকরাইল (খিত্তা-৮, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩ ও ১৪), মোহাম্মদপুর (খিত্তা-১৫), যাত্রাবাড়ী (খিত্তা-১৬), ডেমরা (খিত্তা-১৭), কেরানীগঞ্জ (খিত্তা-১৮ ও ১৯), ধামরাই (খিত্তা-২০), নবাবগঞ্জ/দোহার (খিত্তা-২১), মানিকগঞ্জ (খিত্তা-২২), টাঙ্গাইল (খিত্তা-২৩), নারায়ণগঞ্জ (খিত্তা-২৪), নেত্রকোনা (খিত্তা-২৫), জামালপুর (খিত্তা-২৬), ময়মনসিংহ (খিত্তা-২৭), কিশোরগঞ্জ (খিত্তা-২৮), শেরপুর (খিত্তা-২৯), গাজীপুর (খিত্তা-৩০), বগুড়া (খিত্তা-৩১), নরসিংদী (খিত্তা-৩২), নওগাঁ (খিত্তা-৩৩), রাজশাহী (খিত্তা-৩৪), নাটোর (খিত্তা-৩৫), সিলেট (খিত্তা-৩৮), সুনামগঞ্জ (খিত্তা-৩৯), হবিগঞ্জ (খিত্তা-৪০), মৌলভীবাজার (খিত্তা-৪১), চাঁপাইনবাবগঞ্জ (খিত্তা-৪২), জয়পুরহাট (খিত্তা-৪৩), মুন্সিগঞ্জ (খিত্তা-৪৪), মাদারীপুর (খিত্তা-৪৫), শরীয়তপুর (খিত্তা-৪৬), রাজবাড়ী (খিত্তা-৪৭), ফরিদপুর (খিত্তা-৪৮), গোপালগঞ্জ (খিত্তা-৪৯), পঞ্চগড় (খিত্তা-৫০), নীলফামারী (খিত্তা-৫১), লালমনিরহাট (খিত্তা-৫২), গাইবান্ধা (খিত্তা-৫৩), কুড়িগ্রাম (খিত্তা-৫৪), ঠাকুরগাঁও (খিত্তা-৫৫), রংপুর (খিত্তা-৫৬), দিনাজপুর (খিত্তা-৫৭), ব্রাহ্মণবাড়িয়া (খিত্তা-৫৮), চাঁদপুর (খিত্তা-৫৯), খাগড়াছড়ি (খিত্তা-৬০), ফেনী (খিত্তা-৬১), রাঙ্গামাটি (খিত্তা-৬২), বান্দরবন (খিত্তা-৬৩), লক্ষ্মীপুর (খিত্তা-৬৪), নোয়াখালী (খিত্তা-৬৫), কুমিল্লা (খিত্তা-৬৬), কক্সবাজার (খিত্তা-৬৭), চট্টগ্রাম (খিত্তা-৬৮), চুয়াডাঙ্গা (খিত্তা-৬৯), কুষ্টিয়া (খিত্তা-৭০), খুলনা (খিত্তা-৭১), যশোর (খিত্তা-৭২), ঝালকাঠি (খিত্তা-৭৩), পটুয়াখালী (খিত্তা-৭৪), বরিশাল (খিত্তা-৭৫), ভোলা (খিত্তা-৭৬), বরগুনা (খিত্তা-৭৭) ও পিরোজপুর (খিত্তা-৭৮)।

 

তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত খিত্তাগুলো হল- পাবনা (খিত্তা-৩৬), সিরাজগঞ্জ (খিত্তা-৩৭), মাগুরা (খিত্তা-৭৯), সাতক্ষীরা (খিত্তা-৮০), নড়াইল (খিত্তা-৮১), ঝিনাইদহ (খিত্তা-৮২), বাগেরহাট (খিত্তা-৮৩) ও মেহেরপুর (খিত্তা-৮৪)।

 

এ ছাড়াও ৮৫, ৮৬ নং খিত্তা ও তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত ৮৭ নং খিত্তাগুলো সংরক্ষিত খিত্তা হিসেবে রাখা হয়েছে। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়ে ইবাদত-বন্দেগী, আল্লাহুর জিকিরে মশগুল থাকবেন।

 

যাত্রাবাড়ী থেকে আসা আবুল হোসেন (৬৫) বলেন, জামাতবন্দি হয়ে ইজতেমায় এসেছি আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের আশায়। আখেরি মোনাজাত শেষে আবার চিল্লার জামাতে বের হয়ে যাব, ইনশাআল্লাহ।

 

গাজীপুর থেকে আসা আবদুর রশীদ (৬০) বলেন, ইজতেমায় অংশগ্রহণ করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে হয়, তাই যতদিন বেঁচে থাকব ততদিনই ইজতেমায় অংশগ্রহণ করব।

 

ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা বিদেশি মুসল্লি মো. সামসুল আরেফিন (৫৫) জানান, প্রথম চিল্লা (নির্দিষ্ট সময়) বাংলাদেশ ও ২য় চিল্লা ভারতে তাবলীগের দাওয়াতের কাজ করে ইজতেমায় এসেছি। আল্লাহকে রাজি-খুশি করতে পারলে জিন্দেগি ও আখিরাত সহজ হবে। আখেরি মোনাজাতের পর আবার তৃতীয় চিল্লায় দাওয়াতি কাজে বেরিয়ে যাব।

 

ইজতেমা আয়োজক কমিটির শীর্ষ মুরুব্বী প্রকৌশলী শাহ মো. মুহিবুল্লাহ জানান, ইতিমধ্যে ইজতেমা ময়দানের প্রস্তুতির কাজ প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাকি টুকিটাকি যা আছে তা বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। ইজতেমার আয়োজক তাবলীগ জামাতের স্বেচ্ছাসেবীদের প্রস্তুতি ছাড়াও ডেসকো, তিতাস, ওয়াসাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সেবাদানকারী সংস্থাগুলো তাদের প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন।

 

১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে মাওলানা সাদ অনুসারীদের তিনদিনের বিশ্ব ইজতেমা।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর