• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ঘাটাইলে জৈব কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে কৃষকের ভালবাসা খুঁজছেন শরীফ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার পোড়াবাড়িতে সোনার বাংলা ট্রাইকো ডারমা কম্পোস্ট (জৈব ও কেঁচো) সার তৈরি করে কৃষকের মনে আশার সঞ্চার করেছেন মোঃ ছানোয়ার হোসেন শরীফ।

চারদিকে অতিমাত্রার রাসায়নিক সার ও কেমিক্যাল প্রয়োগ করে বিভিন্ন সবজি, ফলমুল ও ফসল উৎপাদন করে অজান্তেই সরাসরি বিষ গ্রহণ করাতে বাধ্য করা হচ্ছে মানুষকে। ঠিক সেই সময়ে কৃষক পরিবারের সন্তান ছানোয়ার হোসেন শরীফ সোনার বাংলা ট্রাইকো ডারমা নামে কম্পোস্ট সার তৈরি করে কৃষকের মাঝে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।

জৈব কম্পোস্ট সার উৎপাদনের এই প্রজেক্টের সাথেই বিশাল এলাকা জুড়ে তিনি গড়ে তুলেছেন বিষ মুক্ত বিভিন্ন কুড়ি ফসল, সবজি ও ফলের বাগান। এতে বর্তমানে দৈনিক ৩০ থেকে ৩৫ জন শ্রমিক রাতদিন কাজ করে চলছেন বলে আজ মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারী)  এক একান্ত আলাপচারিতায় জানান ছানোয়ার হোসেন শরীফ। 

বিভিন্ন জৈব পদার্থ, চা পাতা, হাড়ের গুড়া, গবর, কাঠের গুঁড়া, নালি, চিনির গাদ, সয়াবিন ডাষ্ট, ককো ডাস্টসহ, নিমপাতা, কচুরিপানা, ধানের চিটা, মুরগীর বিষ্ঠা, পৌরসভার সবজির উচ্ছিষ্ট, গবাদিপশুর শিংয়ের গুঁড়া শামুক-ঝিনুকের গুঁড়া এবং কেঁচোর মাধ্যমে সম্পুর্ন প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে জৈব কম্পোস্ট সার আমাদের এখানে উৎপাদন করা হয়ে থাকে বলে তিনি জানান। ইতোমধ্যে আমাদের উৎপাদিত এই জৈব কম্পোস্ট সার ভালো রকমের সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

ব্যাক্তি জীবনে তিন কন্যা সন্তানের জনক শরীফ আলাপচারিতায় বলেন, বর্তমানে অতিমাত্রায় রাসায়নিক সার ও কীটনাশক প্রয়োগে ফসল ফলিয়ে মানুষের দেহে সরাসরি বিষ ঢেলে দিচ্ছেন এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে মাটি হারাচ্ছে তার ফসল উৎপাদনের কার্যকর ক্ষমতা। মানুষ এসব রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণ করে নানা ধরনের জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। অথচ জৈব কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত।

তিনি জানান, জৈব কম্পোস্ট সারে উৎপাদিত ফসল হয় অবাক করা অংকুরোদগমে। শিকড়ের বর্ধন বৃদ্ধি সহ পুষ্টি গুনে ভরপুর থাকে ফসল। এ সার ফসলের শেকড় ও এতে অক্সিজেন চলাচল বৃদ্ধি করে। মাটির গঠন ও কাঠামো উন্নত করে পানির ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উদ্ভিদকে ঘন থেকে ঘনতর করে। ফলস হয় সতেজ, তরতাজা, আকারে বড় ও সম্পূর্ণ বিষ মুক্ত।

শরীফ আরও বলেন, কৃষি অফিসের সহায়তায় এই জৈব বা কেঁচো সার তৈরি করতে গিয়ে কৃষকদের নিয়ে সভা, সেমিনার, উঠান বৈঠক সহ ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে কৃষকের মাঝে এই সারের গুনাগুন ও ক্রমবর্ধমান ফসল ফলিয়ে তাদের ভেতরে আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। এছাড়াও প্রথমদিকে শত শত কৃষকের মাঝে বিনামুল্যে এই সার বিতরণ করেছি এবং এখনো করছি। আমি কৃষকের সন্তান। কৃষকের দুঃখ বেদনা আমি অতি সহজেই অনুভব করতে পারি। 

কৃষক যেখানে জমিতে ফসল ফলাতে সারের পিছনে ছুটাছুটি করে উচ্চ মুল্য দিয়ে সার ক্রয় করে সর্বশান্ত হয়ে তাদের কষ্টার্জিত ফসলের ন্যায্য মুল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। সেখানে আমি নাম মাত্র মুল্যে তাদের সার ও বীজ দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি বলে তিনি জানান।

'তার এই কর্মযজ্ঞর পেছনে কি লাভ' এমন প্রশ্নে শরীফ বলেন, ছোটবেলায় আমি কৃষকের ঘরে জন্ম নিয়ে খুব কাছ থেকে তাদের দুঃখ কষ্টগুলো অনুভব করেছি। বাবা-মার সাথে মাঠে ফসল ফলাতে গিয়ে রোদে পুড়েছি, বৃষ্টিতে ভিজেছি। দুই হাতে কোদাল মেরেছি, লাঙ্গল টেনেছি। খুব ছোট বেলা থেকেই আমার স্বাদ ও ইচ্ছা ছিল কৃষকের জন্য কিছু করার। তাদের সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেয়ার। আজ আমি অনেকটা সফল হয়েছি। কাজেই আমার অদম্য ইচ্ছা থেকেই এটাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি, যাতে আমি মরে গেলেও কৃষকের হৃদয়ে আমার জন্য একটু ভালবাসা থাকে। এটাই আমার লাভ, এখানেই আমার স্বার্থকতা। 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর