• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৫ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ঘুরে দাঁড়াবে দেশের আবাসন শিল্প

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৫ জুলাই ২০২০  

মানুষের মাথা গোঁজার ঠাঁই করে দেয় দেশের আবাসন শিল্প। তবে নানা কারণে সঙ্কটে পড়েছিল শিল্পটি, কিন্তু যখনই একটু ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল ঠিক তখনই মহামারি করোনার আঘাত।

 

দেশের অন্যান্য শিল্পের মতো আবাসন শিল্পের অপূরণীয় ক্ষতি করে দিয়েছে করোনা। এ খাতের উদ্যোক্তারা যখন একেবারে দিশেহারা ঠিক তখনই করোনার মহামারির মধ্যেও পরপর দুটি সুখবর আসে আবাসন শিল্পের উদ্যোক্তাদের জন্য। প্রথমটি আসে সদ্য পথচলা ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে কোনো রকম প্রশ্ন ব্যতিরেকে অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন শিল্পে বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার মাধ্যমে। দ্বিতীয় সুখবরটি আসে গত সপ্তাহে, ফ্ল্যাট ও প্লটে রেজিস্ট্রেশন ফি বা নিবন্ধন ফি কমানোর মাধ্যমে। এ খাতের উদ্যোক্তারা মনে করছেন, এই দুই সুখবরে ভর করে শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে দেশের আবাসন শিল্প। করোনার ভয়াবহতা কমলে চাঙ্গা হবে এ খাত।

 

আবাসন খাতের উদ্যোক্তারা আরও জানিয়েছেন, এ শিল্পের জন্য কেবল এ দুটি সুখবরই নয়, নতুন বাজেটের আগে-পরে মিলিয়ে গত ছয়-সাত মাসে আরও বেশ কিছু কর ছাড়সহ নানা সুবিধা দিয়েছে সরকার। যেমন স্ট্যাম্প ফি আগে ছিল ৩ শতাংশ, সেটি অর্ধেক কমিয়ে দেড় শতাংশ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার ফি আগে ছিল ২ শতাংশ, সেটি কমিয়ে এখন দেড় শতাংশ করা হয়েছে। জমি উন্নয়ন কর ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়েছে। এভাবে সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও দফতরের ভ্যাট-ট্যাক্স বাবদ আগে যেখানে সর্বনিম্ন নিবন্ধন ফি ছিল ১৩ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ছিল সাড়ে ১৫ শতাংশ, সেখানে এখন কমে সর্বনিম্ন নিবন্ধন ফি দাঁড়িয়েছে ১০ শতাংশ, আর সর্বোচ্চ দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। যা আবাসন ও কনস্ট্রাকশন শিল্পের জন্য বড় সুখবর।

 

সার্বিক বিষয় সম্পর্কে আবাসন শিল্প মালিকদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব) সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন সময়ের আলোকে বলেন, নতুন বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার পাশাপাশি গত কয়েক মাসে যেসব ক্ষেত্রে আবাসন শিল্পের জন্য ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে খুবই ভালো দিক। আমি মনে করি এই করোনা মহামারির মধ্যে এ ধরনের ছাড় কেবল শিল্পেরই উন্নতি ঘটাবে তা নয়, শিল্প মালিক সর্বোপরি ক্রেতারা এ খাতে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ হবেন। আমি মনে করি এসব সুযোগ-সুবিধা এ শিল্পের জন্য আশার আলো হয়ে দেখা যাবে। এই দুর্যোগকালীন সময়ে আবাসন শিল্পের উন্নয়নের জন্য এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার যে উপলব্ধি সরকারের হয়েছে, তার জন্য আবাসন শিল্প পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারকে আমি ধন্যবাদ জানাই।

 

রিহ্যাব সভাপতি আরও বলেন, আসলে শুধু আমাদের দেশে নয়, বিশে^র যেকোনো দেশ এ ধরনের যেকোনো সঙ্কটে পড়লে সবার আগে আবাসন ও কনস্ট্রাকশন শিল্পের উন্নয়নের দিকে নজর দেয় এবং প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কারণ এই খাতের উন্নয়নের মাধ্যমেই ভঙ্গুর অর্থনীতি দ্রæত চাঙ্গা করা যায়। বর্তমানেও ঠিক একই অবস্থা। ভয়াবহ করোনার কারণে দেশের অর্থনীতির যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে তা থেকে দ্রæত উত্তরণের জন্য বা অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে আবাসন ও কনস্ট্রাকশন শিল্পকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার ছিল। সরকারও সেটি করেছে। সে জন্য আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।

 

আবাসন খাতে যারা বিনিয়োগে আগ্রহী তাদের উদ্দেশে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, এখনও আবাসন শিল্পে বিনিয়োগই সবচেয়ে লাভবান বিনিয়োগ। এ বিনিয়োগ শুধু দেশের অর্থনীতিকেই রক্ষা করবে তা নয়, বিনিয়োগকারীদের নিজেদের ভাগ্যেরও উন্নয়ন ঘটবে। তাই সরকার যেসব ছাড় ও সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে আবাসন শিল্পের জন্য সেটি গ্রহণ করার এখন সময় এসেছে।

 

শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবাসন শিল্পে দেড় হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান আছে। এর মধ্যে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর সদস্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে ১ হাজার ৫০টি। তা ছাড়া রিহ্যাব সদস্যের বাইরেও অনেক আবাসন প্রতিষ্ঠান আছে। আবাসন শিল্পে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকার বিনিয়োগ আছে। এ শিল্প এখন কেবল রাজধানী ঢাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই, সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে। বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ায় এবং নিবন্ধন ফি কমানোয় সারা দেশে আবাসন শিল্পের আরও বিস্তার ঘটবে, সৃষ্টি হবে ব্যাপক কর্মসংস্থানের।

 

গত ১১ জুন জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের যে বাজেট পেশ করা হয় তাতে অপ্রদর্শিত অর্থ আবাসন খাতে কোনো রকম প্রশ্ন ছাড়াই বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এতে আবাসন শিল্পের উপকারের পাশাপাশি সবার আগে উপকৃত হবে দেশ। কারণ প্রতিবছর দেশ থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। বাজেটে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়ার কারণে বন্ধ হবে পাচার, দেশের টাকা দেশেই থেকে যাবে। এ ছাড়া বাজেটে অ্যাডভান্স ট্যাক্স ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে এবং করপোরেট ট্যাক্স কমানো হয়েছে। এগুলোও আবাসন শিল্প ও এ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য অনেক সহায়ক হবে। আবাসন শিল্প থেকে আমদানি শুল্ক এবং ট্যাক্স বাবদ সরকার প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা রাজস্ব পেয়ে থাকে। তা ছাড়া কেবল রেজিস্ট্রেশন খরচ বাবদই সরকার বছরে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পেয়ে থাকে আবাসন শিল্প থেকে। সুতরাং এই খাত যত সমৃদ্ধ হবে সরকারের রাজস্ব তত বাড়বে বলে জানান উদ্যোক্তারা।

 

এ অবস্থায় গত সপ্তাহে জমি ও ফ্ল্যাটের নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) ফি কমিয়েছে সরকার। নিবন্ধন ফি দলিলে লেখা জমি ও ফ্ল্যাটের দামের ২ শতাংশ ছিল, যা ১ শতাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে। এজন্য সরকারের আইন ও বিচার বিভাগ কর্তৃক রেজিস্ট্রেশন ফি সংক্রান্ত ২০১৪ সালের ২ ডিসেম্বর জারি করা প্রজ্ঞাপন সংশোধন করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। গত ৫ জুলাই থেকে এই নতুন নিবন্ধন ফি কার্যকর হয়েছে বলে জানিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জমি ও ফ্ল্যাটের দলিলে লেখা মূল্য ১০ হাজার টাকার বেশি না হলে এর দামের ১ শতাংশ নিবন্ধন ফি দিতে হবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০ টাকা। জমি ও ফ্ল্যাটের দলিলে লেখা মূল্য ১০ হাজার টাকার বেশি হলেও নিবন্ধন ফি এক শতাংশই থাকবে। তবে সেক্ষেত্রে কোনো ন্যূনতম ফি নির্ধারণ করা হয়নি। এতদিন জমি ও ফ্ল্যাটের দলিলে লেখা মূল্যের ২ শতাংশ হারে নিবন্ধন ফি দিতে হতো। তবে দলিলে লেখা মূল্য পাঁচ হাজার টাকার বেশি না হলে সর্বনিম্ন ফি ছিল ১০০ টাকা।

 

এ ছাড়া সম্পত্তি হস্তান্তর সংক্রান্ত দলিলে লেখা মূল্যের ওপর স্ট্যাম্প শুল্ক ৩ শতাংশ হারে পরিশোধ করতে হতো। সরকারের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর এক আইনের মাধ্যমে স্ট্যাম্প শুল্ক ৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ দশমিক ৫ শতাংশ করেছে। তবে গেইন ট্যাক্স এখনও ৪ শতাংশ রয়েছে। এটিও কমানোর দাবি জানিয়েছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর