• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

চা উৎপাদনের নতুন অঞ্চল হচ্ছে ময়মনসিংহ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২০  

বাংলাদেশে চা উৎপাদনকারী এলাকা বলতে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পঞ্চগড়কে ধরা হয়। এসব এলাকার পাশাপাশি গারো পাহাড়ের এলাকা বৃহত্তর ময়মনসিংহ এই অর্থকরী ফসল চা উৎপাদনের নতুন অঞ্চল হয়ে উঠছে। এ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় প্রায় ১৪ হাজার একর জমি রয়েছে, যেখানে চা চাষ সম্ভব। এসব জমিতে চা চাষ হলে বছরে এক কোটি ৬৩ লাখ কেজি চা উৎপাদন হবে। বাংলাদেশ চা বোর্ড এ তথ্য জানিয়েছে।

 

ময়মনসিংহ অঞ্চলে ছোট পরিসরে চা চাষ বাড়াতে নতুন একটি প্রকল্প নিয়েছে চা বোর্ড। এক হাজার ২৩৫ একর জমিতে চা চাষ সম্প্রসারণে ৭৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকার এ প্রকল্প এখন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীনের সভাপতিত্বে প্রকল্পটির যাচাই-বাছাই কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

 

চা বোর্ড জানায়, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নগরায়ণ ও সামাজিক উন্নয়নের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে চায়ের চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু বড় চা বাগান প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় জমি পাওয়া যাচ্ছে না। এ জন্য ছোট পরিসরে চা চাষ বাড়ানোর জন্য দীর্ঘদিন ধরে সরকার নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে। পঞ্চগড়ে প্রথম ছোট পরিসরে চা চাষ শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ চা বোর্ড ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট, নীলফামারী, দিনাজপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙামটি এবং বান্দরবান জেলায় ছোট চা চাষ প্রকল্প সম্প্রসারণ করে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চলে আট হাজার ৬৮০ একর জমিতে চা চাষ হচ্ছে। এ থেকে বছরে ৯৬ লাখ কেজি চা উৎপাদিত হয়।

 

চা বোর্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংস্থাটি সারাদেশে চা চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। এতে দেখা গেছে, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম, পঞ্চগড়সহ বাইরে রাঙামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, জামালপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুর, নেত্রকোনা, টাঙ্গাইল এবং কক্সবাজার জেলায় মোট এক লাখ এক হাজার ৭২ হেক্টর চা চাষযোগ্য জমি রয়েছে।

 

২০০৪ সালে বৃহত্তর ময়মনসিংহ এলাকার চা চাষের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়। এতে দেখা গেছে, এ অঞ্চলের মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া চা চাষাবাদের অত্যন্ত উপযোগী। ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট এলাকায় এক হাজার ১২০ একর, শেরপুর জেলার শ্রীবর্দীতে এক হাজার ১৫০ একর, ঝিনাইগাতীতে এক হাজার ৮৫৫ একর ও নালিতাবাড়ীতে আড়াই হাজার একর, জামালপুরের বকশীগঞ্জে ৬০০ একর ও নেত্রকোনার দুর্গাপুরে এক হাজার ৭৭০ একর ও কলমাকান্দায় এক হাজার ৫০ একরসহ মোট ১০ হাজার ৪৫ একর জমিতে চা আবাদ সম্ভব। এর পর চা বোর্ড আরও একটি প্রকল্পের অধীনে এ অঞ্চলে জরিপ করে। গত বছর সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া ওই জরিপে দেখা গেছে, ময়মসিংহের মুক্তাগাছায় ৩০০ একর, ফুলবাড়িয়ায় ৫০০ একর, ভালুকায় ৪০০ একর ও টাঙ্গাইলের মধুপুরে ৬০০ একর, ঘাটাইলে ৫০০ একর এবং সখীপুরে ৫০০ একর। এ এলাকায় আরও দুই হাজার ৮০০ একর জমিতে ছোট পরিসরে চা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। সব মিলিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের পাঁচ জেলার ১৫টি উপজেলায় মোট ১৩ হাজার ৬৪৫ একর জমিতে চা আবাদ সম্ভব।

 

 

চা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে ২৭ কৃষকের মধ্যে ২৭ হাজার উন্নত জাতের চা চারা বিতরণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ২৯ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে চারা রোপণ। ইতোমধ্যে শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলায় ছয়জন, নালিতাবাড়ী উপজেলায় তিনজন, ঝিনাইগাতী উপজেলায় ১৩ জন, নকলা উপজেলায় চারজন, ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলায় একজন কৃষক ৫ দশমিক ৩১ একর জমিতে চা চাষ শুরু করেছেন। নতুন করে আরও চাষিকে উদ্বুদ্ধ করতে কাজ করছে চা বোর্ড। চাষিদের কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। গত শনিবার চা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিটিআরআই) পরিচালক ড. মোহাম্মদ আলীসহ পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ টিম শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী, ঝিনাইগাতী, নকলা ও নালিতাবাড়ী এবং ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার ছোট ছোট চা বাগান সরেজমিন পরিদর্শন করেন ও চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেন।

 

শেরপুরে শুরু থেকে চা চাষ করছে 'গারো হিলস টি কোম্পানি'। এ কোম্পানির কর্ণধার আমজাদ হোসেন বলেন, এ অঞ্চলে চা চাষের সম্ভাবনা রয়েছে। মাটি ও আবহাওয়া চা চাষের উপযোগী। এখন দরকার ছোট ছোট চাষিদের চাষে উদ্বুদ্ধ করা এবং প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়া।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর