• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

চাংগা আওয়ামী লীগ, কোন্দলে পর্যদুস্ত বিএনপি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১০ মার্চ ২০২০  

টাঙ্গাইল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন। বৃহৎ পরিসরে পালন করছেন দলীয় সব কার্যক্রম। উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটিগুলোও রয়েছে অনেক শক্তিশালী। কিছুটা বিরোধ থাকলেও তা প্রকট রূপ নিতে পারছে না। ঝরে পড়ার ভয় ও বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা তাদের আছে। ফলে অনেকটা ‘বাধ্য’ নেতা-কর্মী হিসেবে সুন্দরভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

 

অন্যদিকে সারাদেশের ন্যয় বিএনপির কোন্দল প্রকাশ্য। দলের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে একাধিক গ্রুপ রয়েছে। রুটিন কর্মসূচি ছাড়া বড় ধরনের কোনো কার্যক্রম পালন করতে দেখা যাচ্ছে না। দলের কোনো কোনো অংশে নেতৃত্ব সংকটও রয়েছে। গত বছরের মাঝামাঝি টাঙ্গাইল জেলা বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিণে বিভক্ত করার খবরে পক্ষ-বিপক্ষের নেতারা খানিকটা সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। পরে সে খবর স্তিমিত হয়ে যায়। নেতারাও ‘ঘুমিয়ে’ পড়েন। 

 

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর অল্প দিনের মধ্যে টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের রাজনীতি খান পরিবারের দখলে চলে যায়। তখন প্রায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ হতো খান পরিবার থেকেই। ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ফারুক আহমেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। 

 

গোয়েন্দা পুলিশের তদন্তে এ হত্যায় প্রভাবশালী খান পরিবারের বড় সন্তান টাঙ্গাইল-৩ (ঘাটাইল) আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাই ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান কাঁকন, টাঙ্গাইল পৌরসভার সাবেক মেয়র সহিদুর রহমান খান মুক্তি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পার জড়িত থাকার তথ্য বেরিয়ে আসে। এক পর্যায়ে চার ভাই-ই আত্মগোপন করেন। পরে আমানুর রহমান খান রানা আত্মসমর্পণ করে দীর্ঘদিন কারাভোগের পর বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। তবে তার তিন ভাই এখনো আত্মগোপনে রয়েছেন।

 

 দেশ ছাড়লেও জেলা ও উপজেলা শহরের ব্যবসা-বাণিজ্যের বেশির ভাগের ভাগবাটোয়ারা এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। ২০১৫ সালের ১৬ অক্টোবর জেলা সম্মেলনে ফজলুর রহমান খান ফারুককে সভাপতি ও জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরকে সম্পাদক করে ১০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠিত হয়। বিগত সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলের ভিতরে অনেকের মধ্যে দেখা দেয় ‘প্রতিযোগিতা’র দ্বন্দ্ব। দলীয় মনোনয়নের পর সে দ্বন্দ্ব মিটেও যায়। 

 

তবে ‘গোপন’ দ্বন্দ্ব এখনো রয়েছে বলে কেউ কেউ মনে করেন। পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে এ দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে রূপ নিতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা। খান পরিবারের অনুসারীদের অনেকের প্রভাব এখনো জেলার বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে। খান পরিবারবিরোধী গ্রুপও শক্তিশালী। তবে দলের সিনিয়র নেতারা মনে করেন, দলে কোনো দ্বন্দ্ব-কোন্দল নেই। তবে উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগসহ অন্য সংগঠনগুলোয় প্রকাশ্যে কোন্দল রয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলা নিয়ে খান পরিবার একটু বেকায়দায় থাকায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মীই এখন ক্ষমতাবান বনে গেছেন। টাঙ্গাইল জেলা বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব-কোন্দল চলছে। 

 

দলের ‘বিদ্রোহী’ অংশ আলাদা কর্মসূচিও পালন করছে। ওই অংশের নেতাদের দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়। তবে বিগত সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হয়নি। বিভেদ কমেনি একটুও। জেলা শহরে বিএনপির কোনো দলীয় কার্যালয় নেই। বিএনপি অনেকটা ছিন্নমূল হয়ে পড়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। কেন্দ্রীয় কর্মসূচিগুলো পালনের জন্য তারা রাজপথে নামতে পারছেন না। 

 

দলের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালের বাসা পৌর শহরের বেপারীপাড়ায়। অনেক সময় বাসার সামনে নেতা-কর্মীরা জমায়েত হন দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য। পুলিশও তার বাসার সামনে গিয়েই নেতা-কর্মীদের শহরে প্রবেশে বাধা দেয়। পরে তারা এতিমখানার সামনে অথবা শান্তিকুঞ্জ মোড়েই দলীয় কর্মসূচি শেষ করেন। এ ছাড়া শহরের পৌর উদ্যান ও কয়েক দিন আগে বিশ্বাস বেতকা গোডাউন রোডের সামনে তাদেরকে দলীয় কর্মসূচি পালন করতে দেখা গেছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর