• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

ছেলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে মায়ের শিক্ষা গ্রহন

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

শিক্ষার কোন বয়স নেই, এটা আমরা সকলেই জানি। তাইতো মা ও ছেলে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়ছেন। একই রিকশায় চড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যান।

 

এদিকে ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে দিতে মা আসেন বলে প্রথমে অনেকে ভুল করেন। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে বিস্মিত না হওয়ার উপায় নেই তাদের।

 

ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের দশম ব্যাচের শিক্ষার্থী মা হুরে জান্নাত। আর ছেলে আবদুল্লাহ আহসান পড়ছেন বাণিজ্য অনুষদে। তিনি ১৮তম ব্যাচে ভর্তি হন।

 

জানা যায়, ১৯৯৮ সালে সোনাগাজীর বেলায়েত হোসেন উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন হুরে জান্নাত। ওই বছরই নূর হোসেন নামের এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। এরপর আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হন তিনি। কিন্তু সংসারের ঝামেলায় পড়াশোনা আর এগিয়ে নিতে পারেননি।

 

পরে সংসারে আসে দুই ছেলে আবদুল্লাহ আহসান ও আবদুর রহমান। ছেলেদের বড় করতে করতেই দিন কে'টে যাচ্ছিল তাঁর।

 

একটা সময় মনে হলো, আরেকটু পড়াশোনা করা উচিত। বিয়ের এক যুগ পর ভর্তি হন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০১২ সালে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ২০১৬ সালে চার বছর বিরতি দিয়ে ভর্তি হন ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগে।

 

অ'পরদিকে বড় ছেলে আবদুল্লাহ আহসান ঢাকার মোহাম্ম'দপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিকের পাঠ চুকিয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু মা চান, ছেলে তাঁর সঙ্গে একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করুন। ছেলেও সেটা মেনে এখানে ভর্তি হন।

 

ছেলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশ খুশি হুরে জন্নাত: তিনি বললেন, ‘বাসা ফেনী শহরেই। আম'রা মা-ছেলে প্রায়ই একসঙ্গে ভার্সিটিতে যাওয়া-আসা করি। এ নিয়ে আমা'র মধ্যে কখনো অস্বস্তি লাগে না। বরং আমা'র কাছে স্বস্তির বিষয় হলো যে আমি ওকে নিয়ে যাচ্ছি। চোখে চোখে রাখতে পারছি। সে যাতে ঠিকভাবে নিজের পড়ালেখা শেষ করতে পারে, সেই দোয়াই করছি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এসে দেখা যায় অনেক ছেলে বখে যায়। কিন্তু আমা'র ছেলের এমনটা হওয়ার সুযোগ নেই।’

 

মায়ের আন্তরিকতায় মুগ্ধ ছেলে: বর্তমানে আবদুল্লাহ আহসান বাণিজ্য অনুষদের তৃতীয় সেমিস্টারে পড়ছেন। মায়ের পড়ার প্রতি আন্তরিকতা মুগ্ধ করে আহসানকে। অনুপ্রাণিত হন তিনি। তিনি বলেন, ‘আম্মু সব সময় আমাদের দিকে খেয়াল রাখেন। এত বড় হয়েছি তারপরও মায়ের যত্ন–আত্তি এতটুকু কমেনি। আশা করছি জীবনে ভালো কিছু করতে পারব।’

 

সন্তানের বয়সী সহপাঠীদের সঙ্গে কেমন কে'টেছে চার বছর? হুরে জান্নাত বিশ্ববিদ্যালয়ে এলএলবি অনার্সের শেষ বর্ষে আছেন। একটি পরীক্ষা আর ভাইভা দিলেই শেষ, পেয়ে যাবেন স্নাতক ডিগ্রি।

 

কিন্তু নিজের সন্তানের বয়সী সহপাঠীদের সঙ্গে কেমন কে'টেছে চার বছর—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে আমি বেশ কিছু ভালো বন্ধু পেয়েছি। কখনো অস্বস্তি বোধ করিনি। তারা আমা'র ছোট, সেটা মনে হয়নি। বরং সবার থেকে অনেক সহযোগিতা পেয়েছি। শিক্ষকেরাও অনেক আন্তরিক।’

 

আইনজীবী হওয়ার ইচ্ছা: এখন অনলাইন ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আছেন হুরে জান্নাত। ভবিষ্যতে তিনি নিজেকে ভালো আইনজীবী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর