• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ঐতিহাসিক দিন

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২০  

স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর একটি অন্যতম ঐতিহাসিক দিন। ১৯৭৪ সালের আজকের এইদিনে বাংলাদেশ প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ১৩৬তম সদস্য হিসেবে জাতিসংঘে যোগদান করে।

আর এ যোগদানের এক সপ্তাহ পর একই মাসের ২৫ তারিখ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাঙ্গালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান করে বিশ্বসভায় বাংলাদেশকে নজিরবিহীন এক সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করেন।

তবে জাতিসংঘের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের সূচনা হয় কিন্তু ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়। সে সময় তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ এবং শরণার্থীদের সহায়তা দানকে কেন্দ্র করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সঙ্গে প্রথম যুক্ত হয় জাতিসংঘ।

সংগঠনটির এ সদস্যপদ প্রাপ্তির পথটি বাংলাদেশের জন্য মোটেই সহজ কোনো বিষয় ছিল না। কেবল মাত্র বঙ্গবন্ধুর প্রবল ব্যক্তিত্বর কারণেই বাংলাদেশের এ প্রাপ্তি খুব দ্রুত সম্ভব হয়ে ওঠে।

মূলত স্বাধীনতার পরপরই জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের জন্য নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা চালাতে থাকে বাংলাদেশ। পরে ১৯৭২ সালে জাতিসংঘ সদরদপ্তরের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশের সদস্যপদ প্রাপ্তির জন্য তৎপরতা চালায়।

তবে জুলফিকার আলী ভুট্রোর আমলে পাকিস্তান সরকারের প্ররোচনায় জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীনের ভেটো প্রদানের কারণে পরপর দুইবার বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ অর্জনে ব্যর্থ হয়।

অর্থাৎ সে সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে আরও বড় রাজনৈতিক লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হয়। পরে ১৯৭৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ওআইসি'র সদস্যপদ লাভ করে। মূলত এরপরে একই বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ এবং পরে ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এত অল্প সময়ে এতগুলো মৌলিক কাজ সম্পাদন করাই ছিল জাতির পিতার জন্য বিশাল এক অর্জন।

১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘে সদস্যপদ লাভ করলেও এর পূর্ব থেকেই জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থায় সদস্যপদ লাভ করতে শুরু করে দেশটি। প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশকে প্রথম জাতিসংঘ সংস্থায় সদস্যরূপে স্বাগত জানায় বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা (ডব্লিউএইচও)। মূলত এর পরপরই বাংলাদেশ জাতিসংঘের বেশিরভাগ বিশেষায়িত অঙ্গ সংস্থার সদস্যপদ লাভ করতে থাকে।

বর্তমানে বাংলাদেশে সংগঠনটির অধীনে থাকা বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রম ব্যাপক আকারে দেখা যায়। বাংলাদেশের জনগণের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির লক্ষ্যে জাতিসংঘের অন্তত ১০টির বেশি সংস্থা তাদের বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে সরকার এবং জনগণের সঙ্গে একত্রিত হয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

জাতিসংঘ অধীনে থাকা সংস্থাগুলোর কাজের ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে দেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, বিদ্যুৎ শক্তি, শিক্ষা, জরুরী সহায়তা, খাদ্য, দুর্যোগ, সুশাসন, স্বাস্থ্য, জেন্ডার ইস্যু, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, মানবাধিকার, অভিগমন, অংশীদারিত্ব, জনসংখ্যা, শরণার্থী, দারিদ্র, কর্মসংস্থান, পুষ্টি, শহরায়ন এবং জীবনধারণ।

বর্তমানে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্বে আরও সমুন্নত হয়েছে। দেশটি এখন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৪১তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেছে। তাছাড়া ইতোমধ্যে বাংলাদেশের দুইবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ ও মানবাধিকার পরিষদের সদস্য পদ লাভ করেছিল এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কমিশন ও নিরস্ত্রীকরণ সম্মেলনের চেয়ারম্যান পদেও দেশটি একবার ছিল।

অপরদিকে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করছে বাংলাদেশ। ইতোমধ্যে দেশটির লক্ষাধিক শান্তিরক্ষী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা অভিযানে ক্রমশ অবদান রেখে চলেছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর