• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

জামালপুরে কৃষিজমিতে ইট চাষ

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯  

কৃষি জমিকে অকৃষি জমি দেখিয়ে জামালপুরের ইসলামপুরে অবৈধ ভাবে ইটভাটা গড়ে তোলার অভিযোগ পাওয়া গেছে। পরিবেশ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই গড়ে তোলা এসব ইটভাটার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য এবং কৃষিকাজের ওপর। 

 

ইসলামপুরের বেনুয়ারচর ও বারারচরের একটি বিশাল উর্বর কৃষি জমি, যেটি তিন ফসলি হিসেবে পরিচিত। জমিটি ছিল আউশ, আমন, বুরো ইরি ছাড়াও রসুন, পিয়াজ, মরিচ, আলু ও রবিশস্যের জন্য উৎকৃষ্ট ভূমি। সেই আদর্শ, উর্বর কৃষিজমি নষ্ট করে, কৃষকের আপত্তির মুখেই গড়ে উঠছে অবৈধ ইটভাটা। দেখা দিয়েছে পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা। হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

 

বারারচর ও বেনুয়াচর দুই গ্রামের কমপক্ষে দশ কৃষক এ জমিতে চাষাবাদ করে জীবনযাপন করতেন। কৃষকের সে ফসলি জমি নষ্ট করে গড়ে তোলা হচ্ছে ইটভাটা। ভাটা মালিকরা, ওই এলাকার দরিদ্র কৃষকদের কৃষিকাজে নিরুৎসাহিত করে ও নানা প্রলোভনে দেখিয়ে নিজেদের স্বার্থে সেখানে গড়ে তুলছেন ভাটা।

 

যাদের কৃষি জমি নষ্ট করে ভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে তাদের একজন জানান, তিনি জমি দিতে রাজি ছিলেন না। কিন্তু ভাটা মালিকদের কৌশল ও চাপের মুখে তিনিও জমি দিতে বাধ্য হতে হয়েছেন। 

 

ভাটার ম্যানেজার মুজিবর রহমান জানান, প্রতি বিঘা জমি বছরে ২৮ হাজার টাকা করে ১০ বছরের জন্য ভাড়া নিয়ে সাড়ে সাত একর জায়গায় নির্মিত হচ্ছে এমএস ব্রিকস-৩।

 

শেরপুরের কয়েকজন ইটভাটা ব্যবসায়ী জানায়, শেরপুরে মোতালেবের আরো দুইটি ভাটা রয়েছে। এর কোনোটিতেই পরিবেশের অনুমতিপত্র নেই। 

 

তারা আরো জানায়, পরিবেশবাদী ও প্রশাসনের চাপের মুখে যেখানে আমাদের একটি ভাটা চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সেখানে কৃষিজমিতে আরেকটি নতুন ভাটা চালু করে মোতালেব দুঃসাহস দেখিয়েছেন।

 

বারারচর গ্রামের কৃষক আব্দুল মান্নান বলেন, ভাটার মালিকরা ভাটা করার জন্য দুই গ্রামের কমপক্ষে দশজন কৃষকের জমি নিয়েছে। তাদের ভাটার পাশে আমারো এক টুকরা জমি আছে। তারা আমার কাছেও জমিটি চেয়েছিল। আমি দেইনি। কারণ ভাটা মালিকরা বছরে আমাকে যে টাকা দিবে আমি চাষ করলে তার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি টাকা পাবো। এছাড়া যে জমিতে ইটভাটা হয় সে জমিতে পরবর্তি আট দশ বছর আর কোনো ফসল হয় না। তার উর্বরতা নষ্ট হয়ে পতিতভূমিতে পরিণত হয়।

 

ভাটার পাশের এলাকাবাসীরা জানায়, ভাটাটি শুরুতেই মোবারক নামে এক শ্রমিকের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। ভাটার মাটি আনতে গিয়ে গাড়িসহ ব্রিজ ভেঙ্গে নীচে পড়ে মারা যায় সে। এছাড়া লোকালয় ও হাইওয়ের পাশে ইটভাটা নির্মিত হওয়ায় এ থেকে সৃষ্ট ধুলা-বালি, ধোঁয়া ও কয়লার ময়লায় মানুষ এবং প্রকৃতির মারাত্মক ক্ষতির আশংকা দেখা দিয়েছে।

 

এ ব্যাপারে মেসার্স এমএস ব্রিকসের অংশীদার মালিক মোতালেব হোসেন বলেন, আমরা জমির মালিকদের বলে কয়েই ভাটা নির্মাণ করেছি। পরিবেশের ছাড়পত্রসহ অন্যান্য অনুমতিপত্রগুলো এখনো পাইনি। তবে, সে ব্যাপারে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে।

 

স্থানীয় আবুল কালাম জানান, প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সহযোগিতায় ভাটা মালিকদের সঙ্গে যোগসাজশে ফসলি জমি অকৃষি দেখিয়ে অনুমোদন নেন। এসব জমিতে ভাটা করার পর আশপাশের অনেক জমি পতিত হয়ে পড়ে। পরে বাধ্য হয়েই অসব জমি থেকে মাটির উপরের অংশ তুলে নেয়া হয়। এতে ওই জমিগুলোতে আর ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে কোনো ফসলাদি হয় না।\

 

জামালপুর পরিবেশ আন্দোলনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম জানান, পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়া এবং পরিবেশ সম্মত না হলে ইটভাটা নির্মাণ করা যায় না। যাতে জনবসতি ও কৃষির ক্ষতি না হয় সেভাবেই ইটভাটা নির্মাণ করা হবে। কিন্তু ভাটা মালিকরা আইনের কোনো তোয়াক্কা না করে ফসলি জমিতে ইটভাটা করছে।

 

তিনি আরো জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীরা কৃষি বিভাগ ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কৃষি জমিকে অকৃষি বা বন্যা কবলিত এলাকা এবং এক ফসলি জমি দেখিয়ে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই ইটভাটা গড়ে তুলেছেন। ইটভাটার কারণে ধান, সবজি, আম, কাঁঠাল ও নারিকেলসহ বিভিন্ন ফলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কৃষির ক্ষতির পাশপাশি এলাকার স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। নানা রকম রোগবালাই দেখা দিচ্ছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর