• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

টাঙ্গাইলে একই সাথে সরিষা ও মৌ চাষে লাভবান চাষিরা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৬ জানুয়ারি ২০২০  

গ্রামের মাঠজুড়ে এখন সরিষার হলুদ রঙের সমারোহ। সরিষার এসব জমির পাশেই মৌ চাষের বাক্স বসিয়েছেন মৌচাষিরা। এতে মৌমাছির মাধ্যমে সরিষা ফুলের পরাগায়নে সহায়তা হচ্ছে। ফলে একদিকে সরিষার উৎপাদন বাড়ছে, অপরদিকে মধু আহরণ করা যাচ্ছে। ফলে সমন্বিত এই চাষে লাভবান চাষিরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর টাঙ্গাইল জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলার এবছর ৪১ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এসব ক্ষেতের পাশে প্রায় তিন হাজার মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করা হয়েছে। এই বাক্স থেকে এবার একশ টন মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কৃষি বিভাগ।


 
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, উচ্চ ফলনশীল ও স্থানীয় উভয় জাতের সরিষা কৃষকরা চাষ করে। দুই জাতের সরিষা নভেম্বরের শুরু থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত আবাদ করতে হয়। ফসল ঘরে উঠতে সময় লাগে জাত ভেদে ৭০ থেকে ৯০ দিন।

টাঙ্গাইল জেলার বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন সরিষা ফুলের সমারহ। কৃষক যেমন এই মাঠে সরিষার পরিচর্যা করছে, তেমনি ক্ষেতের পাশেই মৌমাছির বাক্স বসিয়ে মধু সংগ্রহ করছেন মৌচাষিরা।


 
সরেজমিন নাগরপুরের গয়হাটা, ধুবড়িয়া, ভাদ্রা, মোকনা, দপ্তিয়র, মামুদনগর, বেকড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় মৌচাষি দিয়ে সরিষাক্ষেতের পাশে মৌ চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশির ভাগ মৌচাষি এসেছেন সাতক্ষীরা, ফরিদপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। কথা হয় সাতক্ষীরার মৌচাষি আব্দুর রহমানের সঙ্গে। তিনি উপজেলার মোকনা ইউনিয়নের বেটুয়াজানীতে তার মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করেছে। এসব মৌচাষিদের নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছেন স্থানীয় কৃষকরা।


 
স্থানীয় কৃষক রফিক মিয়া আক্ষেপের সূরে বলেন, আমাদের যদি কৃষি অফিস মৌ চাষের প্রশিক্ষণ দিতো তাহলে আমরা সরিষার সঙ্গে মৌ চাষ করে অধিক লাভবান হতে পারতাম। এছাড়া কালিহাতী উপজেলার মগড়া ইউনিয়নের জোগাপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, সরিষা ক্ষেতের পাশে একশ মৌচাষের বাক্স স্থাপন করেছেন মতিয়ার রহমান। সাতক্ষীর শ্যামনগর উপজেলা থেকে তিনি এসেছেন মধু সংগ্রহে। এই বাক্স থেকে পাঁচ থেকে সাত মণ মধু সংগ্রহ করতে পারবেন বলে আশা করছেন। সদর উপজেলার গালা গ্রামে একশ সাতটি বাক্স বসিয়েছেন সাতক্ষীরার মিলন সরদার ও মনিরুল ইসলাম। নাগরপুর উপজেলার ধলেশ্বরী শামছুল হক সেতুর পাশে একশ ২০টি বাক্স বসিয়ে মধু আহরন করছেন একই জেলার আব্দুর রহমান।

তারা জানান, সাতক্ষীরা থেকে টাঙ্গাইল অঞ্চলে সরিষা ফুলের মধু সংগ্রহে ১৫ থেকে ২০ জন মৌমাছি খামারি এসেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ের মৌচাষিরাও মধু সংগ্রহ করছেন। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার সন্তোষ গ্রামের আমিনুল ইসলাম ৮০টি বাক্স বসিয়েছেন যমুনার চরাঞ্চলের কাতুলী গ্রামে। সংগ্রহ করা মধু ঢাকার বিভিন্ন কোম্পানির কাছে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন মধু সংগ্রাহকরা।

আগে কৃষকের ফলন নষ্ট হবে ভেবে তাদের আবাদি জমিতে মৌ বাক্স বসাতে দেয়নি। অথচ মৌ চাষের ফলে সরিষার ২০ শতাংশ ফলন বাড়ে। শুধু সরিষাই নয়, মৌমাছিরা ফুলের পরাগায়ন ঘটিয়ে নানা ধরনের রবিশস্যের ফলন বাড়ায়। পরে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে আবাদি জমির পাশে মৌমাছির বাক্স স্থাপন করতে সহযোগিতা করছেন সাধারণ কৃষক। বর্তমানে মৌ চাষে প্রতি বাক্স থেকে সপ্তাহে ৪-৫ কেজি মধু সংগ্রহ করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ ও পৌষ মাসে মধু সংগ্রহ বেশি হয়। ৩০টি বাক্সে ১২০ থেকে ১৫০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়। যার বাজারমূল্য ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। মৌ চাষে অনেকের কর্মসংস্থান হয়েছে। মৌ চাষের কারণে একদিকে যেমন সরিষা উৎপাদন বাড়বে, অন্যদিকে অল্প খরচে মৌ চাষ করে দূর হচ্ছে বেকারত্ব। বাণিজ্যিক মৌ চাষে উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন নাগরপুর উপজেলার আরও অনেকে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আব্দুল রাজ্জাক জানান, মৌমাছি সরিষার ফুলে উড়ে উড়ে বসে মধু সংগ্রহ করে। এতে সরিষা ফুলে সহজে পরাগায়ন ঘটে। তাই দেখা গেছে সরিষাক্ষেতের পাশে মৌ চাষের বাক্স স্থাপন করলে সরিষার ফলন অন্তত ২০ শতাংশ বাড়ে। সঙ্গে মৌচাষিরা মধু আহরণ করেও লাভবান হতে পারেন।

বেরসকারি উন্নয়ন সংগঠন মৌ চাষ উন্নয়ন সংস্থার (মউস) নির্বাহী পরিচালক আবুল হোসেন জানান, টাঙ্গাইল অঞ্চলে ৭/৮শ প্রশিক্ষিত মৌচাষি রয়েছে। এরা সরিষাক্ষেত থেকে মধু সংগ্রহ করায় সরিষার উৎপাদন বাড়ছে। পাশাপাশি মধু আহরণ করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করতে পারছে। মৌচাষিদের মধু আহরণের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মধু সংরক্ষণের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। সংরক্ষণ করতে পারলে মৌচাষিরা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর