• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় যে দোয়া পড়বেন!

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২ জানুয়ারি ২০২০  

ইসতিনজা শেষ করে টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি আদব এবং একটি দোয়া শিক্ষা দিয়েছন।    আদবটি হলো টয়লেট থেকে বাম পা দিয়ে বের হওয়া এবং বেরিয়ে আসার পর এই দোয়া পড়া,    غفرانك الحمدلله الذى أذهب عنى الاذى وعافانى   উচ্চারণ : গুফরানাকাল হামদুলিল্লাহিল্লাজি আযহাবা আন্নিল আযা ওয়াফানি   অর্থ : আয় আল্লাহ, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার জন্য, যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করে দিয়েছেন এবং আমাকে দান করেছেন প্রশান্তি। (তিরমিযী, আবুদাউদ, ইবনে মাজাহ, আহমদ)।   غفرانك এর অর্থ হলো ক্ষমা চাওয়া: আয় আল্লাহ আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এখন প্রশ্ন হলো এখানে দৃশ্যত কোনো গুনাহ সঙ্গটিত হয়নি, তা হলে কোন অপরাধের জন্য এই ক্ষমা প্রার্থনা? এখানে দুটো বিষয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। এক. গুনাহর জন্য অনুকূল সময় ও স্থানে আমি এতক্ষন ছিলাম, হয়তো আমার অগোচরে কোনো গুনাহ সঙ্গটিত হয়ে গেছে, তা থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, দ্বিতীয়ত. আয় আল্লাহ আপনার দয়া ও অনুগ্রহে আমাকে অসংখ্য নেয়ামত দান করেছেন, আমি সে সবের শোকর ও কৃতজ্ঞতার হক আদায় করতে পারিনি। তারপরও এখন আর একটি নেয়ামত প্রদান করলেন, তাই আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি।   শরীর থেকে মলমূত্র বেরিয়ে যাওয়া একটি নেয়ামত: শরীর থেকে নাপাক বস্তু বেরিয়ে যাওয়া আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় নেয়ামত। মানবদেহের সুস্থতা নির্ভর করে এর ওপর। আয় আল্লাহ আপনি আমাকে এই মাত্র নেয়ামত দান করেছেন। অথচ আমি এই নেয়ামতের শোকর আদায় করতে পারিনি। তাই আগেভাগেই আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। ক্ষমা প্রার্থনা করার পর এই দোয়া পড়বে,   الحمدلله الذى اذهب عنى الا ذى وعافانى   সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার, যিনি আমার থেকে কষ্টদায়ক বস্তু দূর করে দিয়েছেন।এবং আমাকে দান করেছেন প্রশান্তি।   উল্লিখিত দোয়ার প্রতি গভীর ভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে, এই সংক্ষিপ্ত দোয়ার মধ্যে হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যাপক অর্থের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন।   টয়লেট থেকে বের হওয়ার আরেকটি দোয়া:   হাদিস শরীফে এসেছে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইসতিনজা থেকে বের হওয়ার আরেকটি দোয়া পড়তেন। সেই দোয়াটি পূর্বোক্ত দোয়ার চেয়ে কিছুটা বিস্তারিত, দোয়াটি নিম্মে উল্লেখ করা হলো,    الحمدلله الذى اذاقنى لذته وابقى قوته واذهب عنى اذاه   অর্থ: সকল শোকর ও প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার, যিনি আমাকে এই খাবারের স্বাদ আস্বাদন করিয়েছে আর শক্তি বর্ধক অংশ আমার মধ্যে রেখে দিয়েছেন এবং আমার শরীরের জন্য কষ্টদায়ক বস্তু ফেলে দিয়েছেন। (কানযুল উম্মাল)।   এই দোয়ার মধ্যে অত্যন্ত বিস্ময়কর বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে। এ জাতীয় অর্থবহ ও তাৎপর্যপূর্ণ দোয়া কেবল নবীদের জবানেই শোভা পায়, লক্ষনীয় বিষয় হলো, মানুষ প্রতিদিন বহুবার ইসতিনজা করছে। কিন্তু কখনোই এই নেয়ামতের প্রতি মনোযোগী হয় না।   মুখের স্বাদের জন্য খায়: আমরা যখন খানা খাই, আমাদের মনোযোগ থাকে স্বাদও মজার প্রতি। এই খাবার আমাদের ভেতরে গিয়ে কী সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, সে কথা আমরা ঘূনাক্ষরেও চিন্তা করি না। ফলে যা কিছু খেতে মন চায়, পেট ভরে খেয়ে নিই, কখনো গোশত রুটি কখনো ভাত মাছ, কখনো বা মিষ্টান্ন ফল। আবার কখনো আমাদের খাবার তালিকায় সবকিছুই থাকে। আর এই সবকিছুই খাই মুখের সাহয্যে। কিন্তু কখনোই একথা চিন্তা করি না যে, এই খাবার শরীরের ভেতরে গিয়ে কী সৃষ্টি করতে পারে। কোনো রূপ চিন্তা ভাবনা ছাড়াই আপনি যে সব খাবার খাচ্ছেন, এই খাবার শরীরে গিয়ে কোনো না কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবেই, তবে এক এক খাদ্যে এক এক প্রতিক্রিয়া লক্ষ করা যায়।   শরীরের ভিতরে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় মেশিন: এর কারণ হলো, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেকের শরীরের ভেতর একটি স্বয়ংক্রিয় মেশিন স্থাপন করে দিয়েছেন, সেই মেশিন আমাদের খাবারের প্রতিটি অংশ পরিশোধন করে। খাবারের যেই অংশটুকু শরীরের জন্য ক্ষতি কর হবে, তা আলাদা করে রাখে। মেশিনটি বিকল হয়ে গেলে, খাবারের কোন অংশ উপকারী আর কোন অংশ ক্ষতিকর, হাজার হাজার টাকা খরচ করে গবেষণাগারে পরীক্ষা নিরিক্ষার মাধ্যমেও নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। অথচ আল্লাহ তায়ালার দেয়া মেশিন স্বয়ংক্রিয় ভাবে নির্বোধ মানুষের সকল পানাহার নিরিক্ষন করে দিয়েছেন। আসলে মানুষ খায় মুখের স্বাদের কারণে। এই খাদ্যের কতটুকু দ্বারা রক্ত তৈরি হবে, কতটুকু হাড় সবল রাখবে, কতটুকু গোশত বাড়াবে, কতটুকু দৃষ্টিশক্তি বাড়াবে, কতটুকু চুলে পুষ্টি জোগাবে এবং চুল লম্ভা ও কালো করবে, এসবকিছুই সেই স্বয়ংক্রিয় মেশিন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যেমে নির্ধারণ করে দেবে।   অঙ্গ প্রত্যঙ্গের কাজ: আল্লাহ তায়ালা দেয়া মেশিন ক্ষতিকর খাদ্যকনা এ কারণে আলাদা করে ফেলে, যাতে এগুলো দেহের ভেতরে থেকে অসুখ বিসুখ বাঁধাতে না পারে। এই মেশিনের আবার বিভিন্ন পার্স রয়েছে, যে সব পার্সের স্বতন্ত্র কাজ ভাগ করা আছে। যেমন পাকস্থলী খাদ্য হজম করে। কলিজা রক্ত তৈরি করে, কিডনির কাজ হলো দেহের জন্য প্রয়োজন মাফিক পানি নিশ্চিত করা এবং অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় পানি প্রশাবের মাধ্যেমে বের করে ফেলা, নাড়ি ভুড়ি পরিত্যক্ত বিষ্ঠা একত্র করে ফেলা, প্রত্যেক মানুষের শরীরের ভেতর আল্লাহ তায়ালা এক বিস্ময়কর নিরীক্ষন ও নিষ্কাষন ব্যবস্থা সক্রিয় করে দিয়েছেন, আধুনিক জ্ঞান বিজ্ঞান যার কাছে ধারে পৌঁছাতে পারেনি। এই ব্যবস্থা আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক মানুষের ভেতরেই করে দিয়েছেন, কোনো রূপ প্রার্থনা, প্রচেষ্টা ও পয়সা খরচ ব্যতীতই।    যদি কিডনি বিকল হয়ে পড়ে: মানব দেহের স্থাপিত মেশিনের কোনো একটি পার্সও যদি নষ্ট ও বিকল হয়ে পড়ে তা হলে এই জীবনের ইতি ঘটবে। যেমন, কারো কিডনি বিকল হয়ে পড়ল, কিন্তু তার অন্যসকল পার্স সচল আছে, কলিজা সুস্থ, হৃদয় সুস্থ, পাকস্থলী সুস্থ, নাড়ি ভুড়ি সুস্থ, অসুস্থ কেবল কিডনি, এর অর্থ হলো, যেই মেশিন দেহের তরল পদার্থের মধ্যে উপকারী অংশ রেখে ক্ষতিকর অংশ ফেলে দেয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা বানিয়েছেন, সেই মেশিন আর স্বাভাবিক কাজ করছে না। ডাক্তার বলেছেন, প্রতি সপ্তায় তিন বার ডায়ালাইসিস করলে একে কিছুটা স্বাভাবিক রাখা যাবে। তবে এই রক্ত পরিশোধনের কাজ নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থের। এভাবে কিডনি সচল রাখতে পারলে রোগীকে জীবিত রাখা সম্ভাব, তবে প্রতি সপ্তাহে এর জন্য হাজার হাজার টাকা ব্যয় করতে হবে।   এই মেশিন আছে প্রত্যেকের: আল্লাহ তায়ালা ধনী দরিদ্র রাজা প্রজা, গ্রাম্য শহুরে, শিক্ষিত মূর্খ সকলকে এই মেশিন প্রদান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা প্রার্থনা ও পয়সা খরচ ছাড়াই সবাইকে এই স্বয়ংক্রিয় মেশিন দান করেছেন। এই মেশিনের প্রত্যেক অংশ নিজ নিজ কাজে সদা সক্রিয়, এসব মেশিনের সক্রিয় থাকার ফলে খাদ্যের উপকারী অংশ দেহের ভেতর সংরক্ষিত থাকছে। আর ক্ষতিকর অংশ পেশাব পায়খানার মাধ্যেমে বেরিয়ে যাচ্ছে।   ইসতিনজার পর শোকরিয়া আদায়: এ কারণেই ইসতিনজার যাবতীয় কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালার শোকর আদায় করা উচিত। এবং এই জন্যই নি¤œযুক্ত দোয়া পড়বে,    الحمدلله الذى اذهب عنى الا ذى وعافا نى   সকল প্রশংসা আল্লাহ তায়ালার যিনি আমার ভিতর থেকেক্ষতিকর ও কষ্টদায়ক বস্তুসমূহ বের করে ফেলেছেন। এবং আমাকে দান করেছেন প্রশান্তি।   দেখুন পায়খানা পেশাব কাফের মুসলিম নির্বিশেষ সকলেই করে কিন্তু একজন মুসলমানকে আল্লাহ তায়ালা এই নির্দেশ দিয়েছেন, যখন তোমরা টয়লেট থেকে বের হবে, তখন এনিয়ে এতটুকু চিন্তা কর যে, এই নাপাকি এই আবর্জনা ও কষ্টদায়ক বস্তুগুলি যদি শরীরের ভেতর থেকে বেরিয়ে না আসত, যদি ভেতরেই থেকে যেত তা হলে না জানি আমাকে কত কষ্ট পোহাতে হত। তাই আয় আল্লাহ সকল শোকর ও প্রশংসা কারণ আপনি আপনার দয়া ও অনুগ্রহ, ফজল ও করমে আমার ভেতর থেকে এসব নোংরা ও কষ্টদায়ক বস্তুসমূহ বের করে দিয়েছেন এবং আমাকে স্বস্তি ও প্রশান্তি দান করেছেন।   একটু খেয়াল করে দোয়া পড়া উচিত: প্রত্যেক মুসলমান প্রতিদিন যদি টয়লেটে প্রবেশ করার সময় এবং টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় এই খেয়াল করে দোয়া পড়ে যে, আল্লাহ তায়ালা আমাকে কত বড় নেয়ামত দান করেছেন, তা হলে তার অন্তরে আল্লাহ তায়ালার আজমত ও মহবক্ষত ও ভালবাসা সৃষ্টি হবে না? এর ফলে কি তার অন্তরে আল্লাহ তায়ালার ভয় ও তাকওয়া সৃষ্টি হবেন? যেই বেনিয়াজ ও অমুখাপেক্ষী সত্তা আমার দেহে আমার জন্য এই মহমূল্যবান মেশিন ফিট করে দিয়েছেন, আমি কি তার হুকুমের নাফরমানি করতে পারি? আমি কি তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জীবন পরিচালিত করতে পারি? মানুষ যদি এসব চিন্তা করে তা হলে সে কখনোই গুনাহ করতে পারে না । গুনাহর কাছে ধারেও ঘেষতে পারে না । একারণেই নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, টয়লেট থেকে বের হওয়ার সময় তোমরা এই দোয়াটি পড়ে নাও। এটি কোনো তন্ত্র মন্ত্র না। খোদ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। এর পেছনে লুকিয়ে আছে এক বিশাল দর্শন ও তাৎপর্য, অর্থ ও মর্মের এক বিস্তৃত জগত, যা আল্লাহ তায়ালা হজরত নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লমের মাধ্যেমে আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন। সুতরাং এসব দোয়া পড়ার অভ্যাস গড়ে তোল এবং এই খেয়াল করে পড় যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কত বড় নেয়ামত দান করেছেন। আল্লাহ তায়ালা আমাকে এবং আপনাদের সবাইকে এর ওপর আমল করার তাওফিক দান করুন, আমিন।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর