• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

জামালপুরে নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাধ্যের মধ্যে বাজার

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৩ মে ২০২১  

করোনা মহামারিতে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহায়তার করার জন্য ভর্তুকি দিয়ে সাধ্যের মধ্যে বাজার চালু করেছেন দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন।

সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা প্রাঙ্গনে গত ৬মে থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের সহায়তার জন্য সামাজিক দুরুত্ব বাজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ভর্তুকি দিয়ে সাধারণ মানুষের সাধ্যের মধ্যে জিনিসপত্র কেনার জন্য বাজার চালু করেছেন উপজেলা প্রশাসন।

প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ বাজার খোলা থাকে। উপজেলার প্রায় দেড় হাজার নিম্ন আয়ের গরিব, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধি মানুষ প্রতিদিন তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয় করতে এ বাজারে আসেন। বাজারের চেয়ে কম দাম ও ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে হওয়ায় এখানে ভীড় খুব বেশী।

এ বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ও সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে নিত্য প্রয়োজনী সামগ্রী মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে চাল, ডাল, মাছ, মাংস, পেয়াজ, মরিচ, লবন, তেল, শাক-সবজি, সেমাই-চিনিসহ প্রায় ১৫টি পন্য।

এ বাজারে ৫০টাকা কেজির চাল ৩০টাকা, ৭০টাকা কেজির ডাল ৫০টাকা, ১২০টাকা কেজির মাছ ৮০টাকা, ৪০টাকা কেজির পেয়াজ ২০টাকা, ১৩৮টাকা কেজির সয়াবিন তেল ১০০টাকা, ১৫টাকা কেজির আলু ১০টাকায় বিক্রি করা হয়।

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাধ্যের মধ্যে বাজার নামকরণ করা হলেও এখানে গরিব, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী যাদের টাকা নেই তাদের বিনা মুল্যে বাজার দেয়া হয়।দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য প্রতিদিন প্রায় ১লাখ টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে উপজেলা প্রশাসন।

এ বাজার পরিচালনা করতে উপজেলা প্রশাসনকে সহায়তা করছেন দেওয়ানগঞ্জ অফিসার্স ক্লাব ও স্থানীয় স্বচ্ছলব্যক্তিবর্গ। বাজারের সামাজিক দুরুত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় সার্বিকভাবে সহযোগিতা করছেন ফেইসবুক গ্রুপ প্রিয় দেওয়ানগঞ্জ এবং হ্যালো দেওয়ানগঞ্জ নামে দুইটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রায় ৫০জন স্বেচ্ছাসেবক।

এ ছাড়াও গত ৫মে থেকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রতিদিন প্রায় দেড় শতাধিক নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী মানুষের মাঝে বিনা মূল্যে ইফতার বিতরন করছে উপজেলা প্রশাসন। নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য সাধ্যের মধ্যে বাজারটি করোনা মহামারী শেষ না হওয়া পর্যন্ত খোলা রাখার প্রত্যয়ব্যক্ত করেছেন উপজেলা প্রশাসন।

নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষের সাধ্যে মধ্যে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে এসেছিলো পৌর শহরের কালিকাপুর এলাকার বৃদ্ধা ছলো ভান। তিনি স্বামী পরিত্যক্তা। কোন সন্তান না থাকায় ছোট ভাইয়ের আশ্রয়ে তিনি থাকেন।

বাজারের থেকে কম দামে এ বাজারে জিনিস বেচাকেনা হয় শুনে তিনি এখানে এসেছেন। কম দামে জিনিস কিনতে পেরে তিনি খুব খুশি। তিনি জানান, করোনার কারনে আমার ছোট ভাইয়ের আয় রোজগার কমে গেছে। এ বাজারটা চালু হওয়াতে কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারতেছি। এতে আমাদের খুব উপকার হচ্ছে। এ বাজারটি করোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চালু রাখলে খুব উপকার হতো।

পৌর শহরের কৈবর্তপাড়া বৃদ্ধা লিলি রানী দাস জানান, এ বাজারে জিনিসপত্রের দাম কম। তাই সংসারের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে এসেছিলাম। এখানে বাজারের চেয়ে অনেক কম দামে জিনিসপত্র কিনলাম।

অনেক টাকা বেচে গেলো। ছেলের সংসারে থাকি। এ সময় ছেলেটার উপার্জনও কম। তার দুই টাকা বাঁচলে ছেলে মেয়ে নিয়ে একটু ভালো চলতে পারবে। কম আয়ের মানুষের জন্য খুব উপকার হয়েছে।

দেওয়ানগঞ্জ পৌর শহরের বাদে শশারিয়া এলাকা থেকে মেশিনে চালিত হুইল চেয়ারে বাজারে এসেছেন মো.শাহজাহান আলী। তিনি ১মেয়ে ২ছেলের বাবা। জন্মের ১১মাস পরে টাইফয়েড জ্বরে তার দুটি পা অচল হয়ে যায়।

জমিজমা যা ছিলো তা অন্যের কাছে বন্ধক রেখে ও বিক্রি করে সংসারের খরচ এবং মেয়ে-ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ যোগিয়েছন। মেয়েটার বিয়ে হয়ে গেছে অনেক আগেই। এক মাত্র ছেলের উপার্জনে সংসার ও ছোট ছেলেটার লেখাপড়ার খরচ চলে। বড় ছেলেটা গার্মেন্টসে চাকরি করে।

তার উপার্জন দিয়ে কোন রকমে সংসার চলে। এ বাজারে কম দামে জিনিসপত্র কিনতে পারি। আর গরিব, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী যাদের টাকা নেই তাদের টাকা ছাড়াই বাজার দিয়ে দেয়। খুব ভাল কাজ করছে ইএনও সাহেব। আমরা খুবই উপকৃত হচ্ছি। করোনা ও রোজার সময় বউ-বাচ্চা নিয়ে ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারতেছি।

উপজেলা প্রাঙ্গন সংলগ্ন এলাকার মো.আজাহার আলী দেওয়ান জানান, কাজ কাম করে খাওয়া মানুষের জন্য এটা বিশাল উপকার হয়ছে। প্রতিটি জিনিষ প্রায় ২০-৩০টাকা কমে এ বাজার থেকে কেনা যায়। করোনার কারনে কাজ কমে গেছে। সাধারণ মানষের আয়ও কমে গেছে।

এ বাজারটা হওয়াতে খুব উপকার হয়েছে।করোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাজারটি চালু রাখার দাবী জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একেএম আব্দুল্লাহ বিন রশিদ জানান, করোনার প্রাদুর্ভাব মোকাবেলা সরকারের পাশাপাশি সাধারন মানুষের জন্য কিছু করতে হবে। এ মনোভাব থেকেই নিম্ন আয়ের মানুষদের সহায়তার জন্য ভর্তুকি দিয়ে তাদের সাধ্যের মধ্যে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের বাজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এ বাজারে গরীব, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী যাদের টাকা নেই তাদের বিনা মুল্যে বাজার দেয়া হয়। এখানে সামাজিক দুরুত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষেরা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাজারের চেয়ে কম দামে কিনতে পারে।

এতে তারা একদিকে আর্থিকভাবে উপকৃত হচ্ছে আর অন্যদিকে তারা করোনায় সামাজিক দূরুত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন হবে। বাজারটি করোনা মহামারী শেষ না হওয়া পর্যন্ত চালু রাখার চেষ্টা অব্যহত থাকবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর