• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যুদ্ধাপরাধের আপিল শুনানি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১  

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী আপরাধের দায়ে ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা ২৭ আপিল শুনানির জন্য অপেক্ষায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে। করোনাভাইরাসের কারণে দেশের আদালতের স্বাভাবিক বিচারকাজ না চলায় যুদ্ধাপরাধের দণ্ডপ্রাপ্তদের কোনো আপির শুনানি বা নিষ্পত্তি হয়নি। তবে এ পরিস্থিতি উত্তোরণের পর স্বাভাবিক বিচারকাজ শুরু হলে যুদ্ধাপরাধের আপিল শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষ।
যুদ্ধাপরাধ বিচারের সর্বশেষ আপিল শুনানি হয় ২০১৯ সালের বছর ৩ ডিসেম্বর। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আপিলের শুনানি হয় সেদিন। ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কায়সারের আপিল আবেদনের শুনানি করে আদালত রায় দেয়ার জন্য ২০২০ সালের ১৪ জানুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেন।

পরবর্তীতে গত ১৪ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের চার সদস্যের বেঞ্চ এরশাদ সরকারের সময়ের প্রতিমন্ত্রী ৭৮ বছর বয়সী কায়সারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন। রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে কায়সার একই বছরের ৩০ অক্টোবর আপিল বিভাগে একটি রিভিউ আবেদন করেন। রিভিউ আবেদনের শুনানি এখনো আদালতে মুলতবি রয়েছে। এছাড়া জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখায় গত বছরের ১৯ জুলাই রায় পূর্নবিবেচনা চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে তিনি রিভিউ আবেদন করেন। বর্তমানে সেটিও শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে ২৭টি আপিল আবেদন শুনানির অপেক্ষায় থাকলেও ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বরের পর থেকে গত একবছরে আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধ বিচারের কোনো আপিলের শুনানি হয়নি।

বর্তমানে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে- মোবারক হোসেন, মাহিদুর রহমান, ফোরকান মল্লিক, সিরাজ মাস্টার, খান আকরাম হোসেন, আতাউর রহমান, ওবায়দুল হক তাহের, শামসুদ্দিন আহম্মেদ, মহিবুর রহমান বড় মিয়া, মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া, মো. শামসুল হক ওরফে বদরভাই, এস এম ইউসুফ আলী, সাখাওয়াত হোসেন, মো. মোসলেম প্রধান, মো. আব্দুল লতিফ, ইউনুছ আহমেদ, মো. আমির আহম্মেদ ওরফে আমির আলী, মো. জয়নুল আবেদীন, মো. আব্দুল কুদ্দুস, মো. রিয়াজ উদ্দিন ফকির, মো. আকমল আলী তালুকদার এবং মো. ইসহাক শিকদার, আব্দুল জব্বারের আপিল আবেদন।

গত আট বছরে আপিল বিভাগ সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের আবেদনসহ এ পর্যন্ত মাত্র নয়টি আপিল নিষ্পত্তি করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম, বিএনপির সাবেক মন্ত্রী আবদুল আলীম ও জামায়াতে ইসলামীর আরেক নেতা আবদুস সোবহান মারা যাওয়ায় কারাদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে তাদের করা তিনটি আপিল বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্ট।

নয় যুদ্ধাপরাধীর আপিল এরই মধ্যে শীর্ষ আদালত নিষ্পত্তি করেছেন। তারা হলেন- জামায়াতে ইসলামীর আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আবদুল কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলী, এটিএম আজাহারুল ইসলাম এবং বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার।

এদের মধ্যে নিজামী, মুজাহিদ, কামারুজ্জামান, কাদের মোল্লা, মীর কাসেম আলী ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদণ্ডের রায় নিশ্চিত করে শীর্ষ আদালত তাদের রিভিউ আবেদন খারিজ করার পর তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়। দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত হয়ে এখন কারাগারে আছেন।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন ১৯৭৩ এর সংশোধনী আসে। সংশোধনীতে ৬০ দিনের মধ্যে সাজার বিরুদ্ধে আপিল নিষ্পত্তির বিধান রাখায় আশা করা হয়েছিল যে, সুপ্রিম কোর্ট মামলাগুলোর রায় দ্রুত দেবেন। কিন্তু তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদসহ আইনজীবীরা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, ৬০ দিনের মধ্যে আপিল নিষ্পত্তি করার বিধান কেবল একটি নির্দেশনা ছিল, বাধ্যতামূলক না।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনা হচ্ছে ভার্চ্যুয়াল পদ্ধতিতে। এখন শুধুমাত্র পুরানো মামলার শুনানি চলছে। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যুদ্ধাপরাধ মামলার আপিল নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেব। 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর