• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

নির্মিত হচ্ছে দোকানবাসী মাবিয়ার স্বপ্নের ঘর

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৬ মে ২০২০  

এক যুগ ধরে দোকানে বাসকরা বিধবা মাবিয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছে পাকা ঘর। প্রতিটি ইটের গাঁথুনির সাথে সাথে মাবিয়ার স্বপ্নের ঘোর কেটে গিয়ে বাস্তবতার এক চিলতে আলো তাকে অফুরান আনন্দের জোগান দিচ্ছে। দুই সপ্তাহ পূর্বেও যা ছিলো স্বপ্নের অতীত আজ তা বাস্তব হতে দেখে তার চোখে বেয়ে নেমে এলো আনন্দাশ্র।

 

মাবিয়ার বসবাস কাজিপুর উপজেলা মাইজবাড়ি ইউনিয়নের নতুন হাটখোলায় দোকান ঘরে। সেখানেই তার থাকা-খাওয়া। সরকারি জায়গায় ছোট্ট একটি ঝুুপড়ি ঘরে  চায়ের দোকানে পান, বিস্কুট, চানাচুর বিক্রি করেই চলছিলো তার সংগ্রামী জীবন। স্বামী মারা যাবার পর থেকেই চলছে তার দোকানবাস। এরইমধ্যে তিন মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তারা স্বামীর ঘরে।

 

সবশেষ গত বছর যৌতুকের দাবী মেটাতে না পারায় ছোট মেয়ে দশ বছরের এক নাতনীকে নিয়ে মাবিয়ার নিকট চলে এসেছে। কয়দিন প্রতিবেশির বাড়িতে থাকার পর সেই মেয়ে ঢাকায় পোশাক কারখানায় চলে গেছে। সেই থেকে নাতনীকে নিয়েই চলছে মাবিয়ার সংসার। মঙ্গলবার সকালে এই প্রতিবেদকের নিকট এসব বলতে গিয়ে বারবার  আচল দিয়ে চোখের জল সামলাচ্ছিলেন তিনি।

 

 এসময় তিনি জানান স্বপ্নের ঘর তৈরির ইতিকথা। দুই সপ্তাহ পূর্বে  হাট-বাজার উন্নয়ন প্রকল্প এবং দেশব্যাপী চলমান করোনার প্রাদুর্ভাব রোধে মাঠে নামেন উপজেলা প্রশাসন। মাবিয়া জানান, একদিন তার দোকানে এসে থামে পুলিশের গাড়ি। সাথে আরেকটি গাড়ি। পুলিশ নেমেই তার দোকানের চায়ের কাপ ফেলে দেয়। সরকারি জায়গায় না নিষেধ অমান্য করে দোকান খোলা রাখায় তাকে সতর্ক করেন কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। নিরুপায় মাবিয়া কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এই দোকানই যে তার বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। বন্ধ হলে থাকবেন কোথায়, খাবেন কি?

 

এসময় মাবিয়ার কান্না দেখে লোকজন জড়ো হয় সেখানে। তাদের নিকট থেকে ইউএনও জানতে পারেন দোকানবাসী মাবিয়ার অজানা কথা। সাথে সাথে তিনি মাবিয়াকে ঘর করে দেবার আশ্বাস দেন এবং তার খাবারের ব্যবস্থা করে দেন।

 

 গত এক সপ্তাহ পূর্বে মাবিয়ার পৈত্রিকসূত্রে পাওয়া দেড়শতক জমির মধ্যে শুরু হয় ঘর নির্মাণকাজ। নির্মানাধীন ঘরের নিকট বসেই মাবিয়া জানান এসব কথা। ইতোমধ্যে ঘরের ইটের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাবিয়া জানান, ‘আমি স্বপ্নেও ভাবি নাই এই বয়সে মাথা গোঁজার ঠাঁই পামু। ইউএনও স্যার আমারে ঘর দিচে। আল্লাহ ইউএনও স্যার ও আমগোর পোরধান মন্ত্রিকে বাইচা রাখুক।’

 

 কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্তকর্তা (ইউএনও) জাহিদ হাসান সিদ্দিকী জানান, ‘ সরেজমিনে গিয়ে দোকানবাসি মাবিয়ার কথা শুনেছি। এরপর মাননীয় প্রধানমন্ত্রির জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের আওতায় মাবিয়ার জন্যে ঘর নির্মাণের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর