• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

নেপালের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২৯ জানুয়ারি ২০২১  

শুল্কমুক্ত সুবিধায় রফতানি বাড়াতে এবার নেপালের সঙ্গে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস মহান ২১ ফেব্রুয়ারির আগে বাংলাদেশ- নেপাল অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি (প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট-পিটিএ) করতে সম্মত হয়েছে। চুক্তি সংক্রান্ত সারসংক্ষেপে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত অনুমোদন দিয়ে সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। ঢাকায় নেপালী দূতাবাসে নিয়োজিত কর্মকর্তারাও দ্রুত চুক্তি সম্পন্ন করার বিষয়ে তাদের আগ্রহের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে নেপালের সঙ্গে পিটিএ করতে আর কোন বাধা থাকল না। বাংলাদেশ থেকে পোশাক, ওষুধ, সিরামিকস, ইলেক্ট্রনিক্স, ব্যাটারি ও টয়লেট্রিজ পণ্যের রফতানি বাড়াতে সবচেয়ে বেশি জোর দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে নেপাল বাংলাদেশে মসুর ডালের বাজার আরও সম্প্রসারণ করতে চায়। এর পাশাপাশি, চা-কফি, জুয়েলারি পণ্য এবং বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী রফতানিতে নেপালের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি।

জানা গেছে, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন ও করোনা পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বিশ্বের ১১টি দেশের সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র ভুটানের সঙ্গে গত ডিসেম্বর মাসে প্রথম পিটিএ করে বাংলাদেশ। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নেপালের সঙ্গে পিটিএ করার পর শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তৃতীয় পিটিএ চুক্তি করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। নেপালের সঙ্গে পিটিএ চুক্তি দ্রুত সম্পন্ন এবং এ সংক্রান্ত বিষয়ে পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করতে নেপালের বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত সালাউদ্দিন নোমান চৌধুরী সম্প্রতি ঢাকায় এসেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত অনুমোদন পাওয়ার পর তিনি আবার কর্মস্থলে ফিরে গিয়ে চুক্তি সংক্রান্ত বিষয়ে নেপাল সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কাজ করছেন। ঢাকা ছাড়ার আগে তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসে নেপালের সঙ্গে পিটিএ করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নীতিগত অনুমোদন দিয়েছেন। ফলে এখন চুক্তির অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য বরাবরই অনুকূলে। এ কারণে আমাদের তালিকাটাও বড়। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৪২টি পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা চাওয়া হয়েছে। অন্যদিকে নেপাল ২০টি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় বাংলাদেশে রফতানি করতে চায়।

জানা গেছে, নেপালী মোটা দানার মসুর ডালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে বাংলাদেশে। কৃষিজাত এ পণ্যটির সিংহভাগ নেপাল থেকে আনা হয়। এরপরই তুরস্কের মসুর ডাল দেশে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। ছোলা আসে অস্ট্রেলিয়া ও ভারত থেকে। নেপাল শুল্কমুক্ত সুবিধায় মসুর ডাল বিক্রি বাড়াতে সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেপালের ডাল বেশি আনা গেলে রোজার সময় ডাল নিয়ে তেমন কোন সঙ্কট তৈরি হবে না। এ কারণে মসুর ডাল আমদানি সহজ হওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে নেপালে গার্মেন্টস পণ্য, পাটজাত পণ্য, ব্যাটারি, টয়লেট্রিজ পণ্য, ওষুধ, সিরামিকস ও ইলেক্ট্রনিক্স ও খাদ্যপণ্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চেয়েছে বাংলাদেশ। এসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশটিতে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব ড. মোঃ জাফর উদ্দীন বলেন, বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্য বাড়াতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে পিটিএ এবং এফটিএ করতে কাজ করা হচ্ছে। বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র নেপালের সঙ্গে পিটিএ করা গেলে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন গতি আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন হয়ে যাওয়ায় এখন আর চুক্তি করতে সমস্যা থাকল না। যত দ্রুত সম্ভব বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চুক্তি সম্পন্ন করবে।

প্রসঙ্গত, বিশ্বের আরও ১১টি দেশের সঙ্গে দ্রুত পিটিএ এবং এফটিএ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ২০২৪ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত (এলডিসি) দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীলের মর্যাদায় যাচ্ছে। এলডিসি হিসেবে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে যেসব শুল্কমুক্ত সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে তা উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর আর থাকবে না। তবে এফটিএ এবং পিটিএর মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া সম্ভব। এছাড়া ডব্লিউটিও বা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার রুলস অনুযায়ী কিছু সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। আর এ কারণে এলডিসি উত্তরণে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বেশি সংখ্যক দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য ও অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করা। বাংলাদেশ এখন সে পথেই হাঁটছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর