• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর
সর্বশেষ:
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তৎপর হওয়ার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বে আত্মমর্যাদাশীল একটি জাতি : স্পিকার ভারতের কাছে পাঁচটি খাদ্যপণ্যের নিশ্চিত সরবরাহ চায় বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে রাজনৈতিক-অফিসিয়াল যোগাযোগ বাড়াতে প্রস্তুত বাংলাদেশ হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্টের কাছে বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূতের পরিচয়পত্র পেশ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত অস্ট্রেলিয়া বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মানতে হবে ১৩ নির্দেশনা পদ্মাসেতুর নির্মাণশৈলী দেখে মুগ্ধ ভুটানের রাজা অ্যানেসথেসিয়াজনিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধে মন্ত্রণালয়ের ৬ দফা নির্দেশনা

পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের নতুন প্রযুক্তি ‘মলটেন সল্ট রিয়েক্টর’

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ৩০ জুলাই ২০২০  

প্রযুক্তির উৎকর্ষতায় পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদ’নের ধারণার পরির’বর্তন ঘটছে। বিশ্বে অপেক্ষা’কৃত ছোট আকা’রের এ ধরনের বিদ্যুৎ’কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হলেও দেশে বিষ’য়টি আলোচ’নার বাই’রে রয়ে গেছে। নতুন এই প্রযুক্তির নাম মল্টেন সল্ট নিউ’ক্লিয়ার রিয়েক্টর। সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়াতে কয়লা সমৃদ্ধ ‘মলটেন সল্ট রিয়েক্টর’ বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমাদের এখানেও ছোট আকারের এসব কেন্দ্র নির্মাণের কথা ভাবতে পারে সরকার। এতে বিনিয়োগ ও ঝুঁকি দুটোই নিয়ন্ত্রণে থাকে।

 

সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন নতুন নতুন অনেক রিয়েক্টর আসছে। যেগুলো এখনও গবেষণার পর্যায়ে থাকলেও কোনও কোনোটি এরমধ্যে সফল হয়েছে বলে জানা গেছে। এদের একটি হচ্ছে মলটেন সল্ট রিয়েক্টর। ইন্দোনেশিয়াতে এই রিয়েক্টর দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরুর উদ্যোগের কথা জানা গেছে। আবার জাপান একই রিয়েক্টর চালু করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে রিসার্স রিয়েক্টর এবং পাওয়ার রিয়েক্টরের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। রিসার্স রিয়েক্টর সাধারণত ছোট আকারের হয়। এটা দিয়ে গবেষণার জন্য কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। আর পাওয়ার রিয়েক্টরগুলো অনেক বড় আকারের হয়।

 

যুক্তরাষ্ট্রের জিএমই সায়েন্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এধরনের রিয়েক্টরে কঠিন জ্বালানির পরিবর্তে তরল জ্বালানি ব্যবহার করা হয়। মূলত তরল জ্বালানি ব্যবহারকে নিরাপদ বলে দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। রিয়েক্টর বা পারমাণবিক চুল্লিতে তাপ উৎপন্ন হয়। সেই তাপ দিয়ে বাষ্প বা স্টিম তৈরি করা হয়। স্টিমের শক্তি দিয়ে যেভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় এখানেও একইভাবে তা করা হয়।

 

জানতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে কিছু শুনিনি। অনেক জায়গায় অনেক গবেষণা হয়। সেসব গবেষণা আমরা দেখে কী করবো। আমরা তো আমাদের দেশে তা এক্সপেরিমেন্ট করতে দেবো না। একেবারে পরীক্ষা করা,  জানাশোনা প্রযুক্তি বলেই আমরা রূপপুরের বিদ্যুৎকেন্দ্রটি করছি। ছোট ছোট রিয়েক্টরের বিষয়ে আমরা চিন্তা করছি না।’

 

সম্প্রতি ইন্দোনেশিয়ার সরকারি কোম্পানি পিটি পিএএল ইন্দোনেশিয়া সে দেশের নিউক্লিয়ার কোম্পানি থরকন ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে নতুন এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াটের একটি নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর স্থাপনের চুক্তি করেছে। নতুন এই প্রযুক্তির নাম মল্টেন সল্ট নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর। ইন্দোনেশিয়ায় এটি একটি পানিতে ভাসমান জাহাজের ওপর স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ইন্দোনেশিয়ার একটি গণমাধ্যম নেক্সট বিজ ফিউচার তাদের ওই নিউজে এসব তথ্য জানায়। তাতে বলা হয়, এটি কয়লার চেয়ে অনেক বেশি সাশ্রয়ী।

 

থর ইন্টারন্যাশনাল নামক যুক্তরাষ্ট্রের ওই কোম্পানিটি জানায়, কয়লা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেখানে প্রতি কিলোওয়াটের দাম পড়ে ৫ সেন্ট, সেখানে এই রিয়েক্টরে দাম পড়বে ৩ সেন্ট। তারা এই রিয়েক্টর প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করবে।  এরপর এটি তারা ইন্দোনেশিয়ায় নিয়ে আসবে। ২০২৩-২০২৫ সালের মধ্যে তারা এই রিয়েক্টর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে বলে আশা করছে।

 

কয়লার চেয়ে সস্তা হওয়া বাংলাদেশ এই ধরনের ছোট ছোট রিয়েক্টর নিয়ে পরিকল্পনা করতে পারে কিনা জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ইজাজ হোসেইন জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনেক অনেক বড়। সেখানে তাই ঝুঁকিও অনেক বেশি। কেন্দ্রের কিছু হলে ব্যাপক এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই প্রথম থেকে বিশেষজ্ঞরা ছোট ছোট রিয়েক্টর স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা করেছিল। সেই সময় ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের মতামতও নেওয়া হয়েছিল। তারাও ছোট রিয়েক্টর স্থাপনের কথা আলোচনা করে। কিন্তু সরকার একবারে একটি বড় কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নেয়।

 

তিনি বলেন, ‘যেহেতু আমাদের অভিজ্ঞতা কম সেহেতু ছোট কেন্দ্র স্থাপন করে দেখা যেতে পারতো। এমন কী এখনও সেই সুযোগ আছে। চাইলে এখনও সরকার এই রিয়েক্টর স্থাপনের পরিকল্পনা করতে পারে।’

 

রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, মলটেন সল্ট রিয়েক্টর হচ্ছে এক ধরনের রিয়েক্টর। এখনও গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। অনেক দেশ চেষ্টা করছে। নানা ধরনের রিয়েক্টর তৈরি করতে এটাও সে ধরনের একটি রিয়েক্টর। তবে এটার সঙ্গে বড় পাওয়ার রিয়েক্টরের পার্থক্য রয়েছে।

 

তিনি বলেন, ‘এখনও এটি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে আছে। তাই এখনই এটা বাংলাদেশে আনা যাবে কিনা তা বলা সম্ভব নয়। জাপানে এই ধরনের রিয়েক্টর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত তা সফল হয়নি। ইন্দোনেশিয়াও সেই চেষ্টাই হয়তো করছে।’

 

এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন,  ‘আমাদের তো কোনও অভিজ্ঞতা নেই। একটি কেন্দ্র স্থাপনের কাজ চলছে। এটি শেষ হোক। দেখি আমরা কতদূর যেতে পারি। এছাড়া এসব কেন্দ্র স্থাপনে বিনিয়োগও অনেক বেশি। তাই আমরা ধীরে এগুচ্ছি। দক্ষিণাঞ্চলে আরও একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য আমরা জরিপ করছি। নতুন কোনও প্রযুক্তি এলে সেটি যদি ঝুঁকি ও বিনিয়োগ কম হয় তাহলে আমরা হয়তো ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ উৎপাদনে এই প্রযুক্তির ব্যবহার করবো। তবে প্রথম কেন্দ্রটির কাজের ওপর সবকিছু নির্ভর করছে।’ 

 

জানা যায়, গত কয়েক বছর আগে বাংলাদেশের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের অধীন আবাসিক এলাকায় এই ধরনের রিয়েক্টর স্থাপনের আগ্রহ দেখিয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল। কিন্তু তা অনুমোদন করা হয়নি।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ছোট হলেও শহরের মধ্যে এই ধরনের একটি কেন্দ্র খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই অনুমোদন করা হয়নি।

 

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ মাহবুবুর রহমান বলেন, এই ধরনের ছোট রিয়েক্টর বসানো গেলে খরচ এবং ঝুঁকি দুই-ই কমবে। তবে যেহেতু এখনও এটি পরীক্ষামূলক। তাই সবদিক বিবেচনা করেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর