• শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

পিঁপড়ার দুটো পাকস্থলী; একটি নিজস্ব আর অন্যটি সামাজিক

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১০ এপ্রিল ২০২০  

পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম প্রাণীর মধ্যে একটি হলো পিঁপড়া। দলবদ্ধভাবেই পিঁপড়ার চলাফেরা। তাছাড়া ভীষণ পরিশ্রমী ক্ষুদ্র এই প্রাণীগুলি। দিনের বেশিরভাগ সময় এরা খাদ্য সঞ্চয়ে ব্যস্ত থাকে।

 

পৃথিবীতে প্রায় ১২ হাজার প্রজাতির পিঁপড়া রয়েছে। জানলে অবাক হবেন, ক্ষুদ্র এই পিঁপড়ার জন্ম থেকেই রয়েছে বিস্ময়কর ক্ষমতা। প্রতিকূল পরিবেশে নিজেদের টিকিয়ে রাখার রয়েছে অকল্পনীয় দক্ষতা রয়েছে। অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার মাধ্যমে সাম্রাজ্যের বিস্তৃতিও ঘটায় এরা। চলুন জেনে নেয়া যাক পিঁপড়ার কিছু বিস্ময়কর ক্ষমতা-

 

পিঁপড়াদের রানিরা শুধু ডিম দেয়। আর পুরুষ পিঁপড়া রানি পিঁপড়ার সঙ্গে সঙ্গম করে মরে যায়। তাই সব কাজই সামলায় রানি পিঁপড়া। এদের কেউ ডিমের যত্ন নেয় আবার কেউ বাসা তৈরি করে। এদেরই একটি অংশ বিপদ-আপদের জন্য খাদ্য সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত থাকে।

 

পিঁপড়া সব সময় সংঘবদ্ধভাবে বাস করে এবং যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশে টিকে থাকার যোগ্যতা রাখে। তাই পিঁপড়ার সাম্রাজ্য শুধু অ্যান্টার্কটিকা বাদে সারা পৃথিবীব্যাপী বিস্তৃত।

 

পিঁপড়ার মাথায় একজোড়া অ্যান্টিনা আছে। যা দিয়ে গন্ধ শুকতে পারে, দিক নির্ণয় করতে পারে এবং গন্ধের তীব্রতা বুঝতে পারে। আছে শক্তিশালী দুটি চোয়ালও। এই চোয়াল এতই শক্তিশালী যে নিজের শরীরের চেয়ে ২০ থেকে ৫০ গুণ ওজনের বস্তু টানতে সক্ষম। এই চোয়াল দিয়ে শত্রুকে জখম করতে এবং ডিগবাজি দিয়ে অন্যত্র চলেও যেতে পারে।

 

পিঁপড়ারা একে অন্যের সঙ্গে গন্ধযুক্ত পদার্থ নিঃসরণ, শব্দ ও স্পর্শের মাধ্যমে যোগাযোগ সাধন করে। এছাড়াও শারীরিক অঙ্গভঙ্গি, পাখার স্পন্দন, শ্বাসনালীর শব্দ ও অ্যান্টিনার মাধ্যমে যোগাযোগের কাজ সারে।

 

পিঁপড়া যে ঘর করে তাতে বিভিন্ন কুঠুরি থাকে। কোনটি ডিম রাখার, কোনটি খাদ্য সংরক্ষণের জন্য আবার কোনটিতে আবর্জনা রাখে এরা। কিছু পিঁপড়া বাসা ও ডিম সংরক্ষণের কাজে ব্যস্ত থাকে আবার কিছু পিঁপড়া ময়লা আবর্জনা সরানোর কাজ করে। 

 

গন্ধযুক্ত পথ ধরে উল্টো পথে খাবারের উৎসস্থলে পৌঁছে যায় পিঁপড়ারা। যতবার পিঁপড়া খাবার নিয়ে আসে ততবারই গন্ধযুক্ত পদার্থ ছড়াতে থাকে। এভাবে যে কোনো পিঁপড়া কোন পথে এগুলে খাবার পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি তা বুঝতে পারে। আবার খাবারের উৎস শেষ হয়ে গেলে গন্ধ ছড়ানো বন্ধ করে দেয়। যার ফলে অন্য পিঁপড়ারা খাদ্যের জন্য নতুন উৎস খুঁজে।

 

পিঁপড়া কতটুকু দূরত্ব অতিক্রম করলো তা নিজের পদক্ষেপ গণনার মাধ্যমে বুঝতে পারে এবং কোন দিকে অগ্রসর হলো তা সূর্যের অবস্থান দেখে ও আশপাশের বস্তুর অবস্থান দেখে নির্ণয় করতে পারে। বিপদে পড়লে পিঁপড়া মুখের গ্রন্থি থেকে বিপদ বার্তা পাঠায়।

 

দুটো পাকস্থলী রয়েছে পিঁপড়ার। একটি নিজস্ব আর অন্যটি সামাজিক। এই সামাজিক পাকস্থলীর খাবার অন্য পিঁপড়াকে দিয়ে সাহায্য করে। যে পিঁপড়াগুলো বাসা ও ডিম সংরক্ষণের কাজে ব্যস্ত থাকে তারা সামাজিক পাকস্থলী থেকে খাদ্য পেয়ে থাকে।

 

পিঁপড়ারা এতই বুদ্ধিমান যে, যখন বন্যা হয় তখন রানিকে মাঝখানে রেখে সবাই একে অপরকে জাপটে ধরে। তারপর একটা বড় কুণ্ডলী বা ভেলা তৈরি করে পানির উপরে ভাসতে ভাসতে বেঁচে থাকে। যখন পানি কমে আসে তখন আবার স্থলভাগে নতুন বাসা বাঁধে।

 

গ্রীষ্মকালে পিঁপড়ারা বেশি বেশি খেয়ে পেটে চর্বি জমিয়ে রাখে, যাতে করে শীতকালে কোথাও বের না হয়ে মাসের পর মাস বেঁচে থাকতে পারে। এভাবে শীত প্রধান দেশে পিঁপড়া বেঁচে থাকে। 

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর