• মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ৫ ১৪৩০

  • || ০৮ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

পুরোনো রূপে ফিরছে বুড়িগঙ্গা

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৮ নভেম্বর ২০২০  

বুড়িগঙ্গা নদীকে ১০০ বছর আগের রূপে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ১৯২৬ থেকে ১৯৪০ সালের ক্যাডেসট্রাল সার্ভে (cadestral survey) ম্যাপ অনুসরণ করে বুড়িগঙ্গার প্রায় সাড়ে সাত কিলোমিটার অংশ পুরোনো চেহারায় ফিরিয়ে আনার এই উদ্যোগ নিচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি)।

নদীর দুইপাড়ের প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় প্রশস্ত সড়ক নির্মাণ এবং আধুনিকভাবে সজ্জিত করা হবে। করা হবে দৃষ্টিনন্দন। বুড়িগঙ্গা নদীর এই আদি চ্যানেলকে ফিরিয়ে এনে প্রকল্পটা বাস্তবায়িত হলে ইসলামবাগ থেকে শুরু করে রায়েরবাজার এলাকার চেহারা পুরোপুরি বদলে যাবে। পুরো এলাকা আধুনিক বাসযোগ্য হিসেবে পরিণত হবে।

 

বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেলের দুই পাশের এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামবাগ, কামরাঙ্গীরচর, লালবাগ শ্মশানঘাট, শহীদ নগর, ঝাউচর, হাজারীবাগ সেকশন, কালুনগর, বউবাজার, সিকদার রিয়েল এস্টেট ও সিকদার মেডিকেল কলেজ। এ এলাকাগুলো খুবই অবহেলিত। আর আদি চ্যানেলের নোংরা পরিবেশ, আবর্জনায় পূর্ণ থাকায় দুইপাড়ের বসবাসের পরিবেশ দূষিত হয়ে পড়েছে।

 

কামরাঙ্গীরচরের বাসিন্দারা জানান, ১৯৮৭-৮৮ সালে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল হয়ে তারা নৌকায় করে টঙ্গীর ইজতেমায় যেতেন। ১৯৯০ সালে বেড়িবাঁধ হওয়ার পর দ্রুতগতিতে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল দখল শুরু হয়। 

 

ডিএসসিসির ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের (কামরাঙ্গীরচর এলাকা) কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন বলেন, বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধারে আমরা বহু আগে থেকেই সরকারের কাছে দাবি জানিয়ে আসছি। মেয়র এলাকাটি পরিদর্শন করে গেছেন। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থানীয় পর্যায় থেকে আমরা সব ধরনের সহযোগিতা দেব।

 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিপ্রায় অনুযায়ী এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। তিনি বলেন, আমরা আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছি। সেজন্য মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে (এমআইএসটি) পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমআইএসটি এরই মধ্যে একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। আমরা সেই প্রতিবেদনের ওপর আরো কাজ করছি।

 

প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ডিএসসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী খায়রুল বাকের বলেন, এ প্রকল্পটি হাতিরঝিলের চেয়ে তিনগুণ বেশি এলাকা নিয়ে হবে। কাজেই কাজটা বাস্তবায়ন করা বেশ কঠিন। এই জায়গাটির প্রায় পুরোটাই দখল হয়ে গেছে। এজন্যই এখানে চ্যালেঞ্জ বেশি। মেয়র মহোদয় নির্দেশ দিয়েছেন সিএস ম্যাপ অনুসরণ করে নদীর সীমানা চিহ্নিত করতে। এতে করে কাজটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। বর্তমানে সেই সীমানা চিহ্নিত করার কাজই চলছে। ডিএসসিসি চায় কাজটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাতিরঝিলের চেয়ে আরো পরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন করতে।

 

বর্তমান মেয়র ব্যারিস্টার তাপস দায়িত্ব নেয়ার পর এমআইএসটিকে কনসালট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। এমআইএসটি ড্রোন ব্যবহার করে ভরাট হওয়া বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল শনাক্তের চেষ্টা করে। তারা দেখতে পায়, ওই সাড়ে সাত কিলোমিটার এলাকার মাত্র এক কিলোমিটার এলাকায় ফাঁকে ফাঁকে সরু খালের মতো বুড়িগঙ্গার অস্তিত্ব রয়েছে। বাকি অংশ সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে গেছে।

 

ভরাট অংশে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের ঘরবাড়ি, কলকারখানা, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট প্রভৃতি। ফলে আদি চ্যানেল শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার একটি জায়গায় প্রশস্ত জলাশয় থাকলেও তার মাঝখানে একটি ছোট কালভার্ট তৈরি করা হয়েছে। কী উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল, তাও স্পষ্টভাবে বোঝা যায়নি।

 

এসব নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তারা ইসলামবাগ থেকে রায়েরবাজার পর্যন্ত একটি সোজা নদী তৈরির প্রস্তাব দেয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় জমি অধিগ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়। পাশাপাশি যেখানে নদীর জমি আছে, সেটাও ব্যবহারের কথা বলা হয়। মেয়র তাপস প্রতিবেদনটি পর্যবেক্ষণ করে এমআইএসটিকে জানিয়ে দেন, এতে করে নদীর মূল গতিপথ উদ্ধার করা যাবে না। অনেকে মামলা-মোকদ্দমাও ফাঁদতে পারেন, তাহলে কাজ আর এগোবে না।

 

তাই নদীর মূল গতিপথ চিহ্নিত করে পুরোনো আঙ্গিকেই নদীকে ফিরিয়ে আনতে হবে। কোথাও নদীর প্রশস্ততা বাড়াতে হলে প্রয়োজনে জমি অধিগ্রহণ করা যাবে। এতে করে অনেক কম পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ফলে প্রকল্প ব্যয় অনেক কমবে।

 

মেয়র নির্দেশ দেন, সিএস ম্যাপ অনুসরণ করেই আদি বুড়িগঙ্গা উদ্ধার করতে হবে। এভাবে ইসলামবাগ থেকে রায়েরবাজার বেড়িবাঁধের পশ্চিম পাশের কালুনগর খাল দিয়ে বুড়িগঙ্গাকে যুক্ত করা হবে। এটা ফিরিয়ে আনা গেলে নৌ চলাচলও করতে পারবে। বর্তমানে ডিএসসিসি ও এমআইএসটি মিলে জোরেশোরে এ কাজটিই করছে।

 

এমআইএসটির খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, নদীর দুইপাশে দৃষ্টিনন্দন সবুজবেষ্টনী, উন্মুক্ত স্থান, বিনোদন স্পট তৈরি করা হবে। একই সঙ্গে চ্যানেলের দুইপাশের যোগাযোগ রক্ষা করতে পর্যাপ্ত সংখ্যক সেতু বা ওভারপাস তৈরি করা হবে। পুরো চ্যানেলটি উদ্ধার হলে রাজধানীর একটি বড় অংশের জলাবদ্ধতারও নিরসন হবে। এ জন্য প্রাথমিক ব্যয় ধরা হচ্ছে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা।

 

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা প্রকল্পের (ড্যাপ) পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, সংশোধিত ড্যাপে বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধারে সুপারিশ করা হয়েছে। ডিএসসিসির বুড়িগঙ্গার আদি চ্যানেল পুনরুদ্ধারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে রাজউক সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর