• বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

বাঁশখালীতে শিমের বাম্পার ফলন! চড়া দাম পেয়ে খুশিতে কৃষক

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯  

শিমের বাম্পার ফলনে খুশিতে কৃষক। ফুরফুরে মেজাজে শিম উত্তোলন। ছবি- দক্ষিণ জলদী, বাঁশখালী।

শিমের বাম্পার ফলনে খুশিতে কৃষক। ফুরফুরে মেজাজে শিম উত্তোলন। ছবি- দক্ষিণ জলদী, বাঁশখালী।

এ বছরও বাঁশখালীতে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। বিগত কয়েক বছর ধরে বাঁশখালীর বিভিন্ন এলাকায় শিমের আবাদ করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। শীতকালিন শিমের পাশাপাশি আগাম চাষাবাদ হওয়ায় শিমের কদর দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। শিমের কদর বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষকদের শিম চাষে আগ্রহ বাড়ছে বলে জানা যায়। ভৌগলিক কারণে বাঁশখালীর অবাদী জমি সহ পাহাড়ি এলাকা চাষাবাদের উপযোগী, থাকায় বিভিন্ন সবজির চাষবাদ হয় এই এলাকাটিতে। এবার উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শিমের চাষ করা হয়েছে। খালি জমি, রাস্তার আশে পাশে হতে শুরু করে পাহাড়েও শিমের আবাদ করা হয়েছে।

 

উপজেলা কৃষি কার্যালয় সূত্র থেকে জানা যায়, বাঁশখালীতে এবার ২৫০ হেক্টর জমিতে দেশী শিম, ৬০ হেক্টর জমিতে ফরাস শিম চাষ হয়েছে। বাঁশখালী শিম চাষের উর্বর জমি হওয়ায় চাষীদেরকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে চাষাবাদে উদ্বুদ্ধকরণ করা হচ্ছে চলেও জানান কৃষি অফিস।আগাম শিম চাষাবাদে কৃষকরা প্রচুর লাভবান হচ্ছে। শীতকালীন শিম বাজারে আসায় ভোক্তাদের মধ্যে বেশ চাহিদা রয়েছে। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন উঁচু এলাকায় শিমের চাষাবাদ হয়ে থাকে। উপজেলার পুঁইছড়ি, নাপোড়া, চাম্বলের পাহাড়ি জমি, শিলকুপের পাহাড়ী ও আবাদী জমি, জঙ্গল জলদী, পুকুরিয়া, সাধনপুর, কালীপুর, বৈলছড়ি, সরল, খানখানাবাদ ও গন্ডামারা এলাকায় প্রচুর পরিমাণ শিম উৎপাদিত হয়েছে। প্রতিদিন চাষীরা ক্ষেত থেকে শিমগুলো তুলে এনে বিভিন্ন স্থানীয় বাজারে পাইকারী দরে বিক্রি করছেন।

উপজেলার শিলকুপ, পুঁইছড়ি, জঙ্গল চাম্বল, জঙ্গল জলদী, কালীপুর এলাকায় এই শিমের আবাদ হয়েছে প্রচুর। দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারী ব্যবসায়ীরা বাঁশখালীর বিভিন্ন হাট বাজারগুলোতে ভীড় করছে। পাইকার এই সকল শিম বিভিন্ন দামে কিনে নিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন এলাকায়। 

 

এবার বাঁশখালীতে ২০০ হেক্টর জমিতে টমেটো, যা সরল, গন্ডামারা, বৈলছড়ি, চাম্বল, পুইছড়ি ও শীলকূপে বেশির ভাগ হয়ে থাকে । ২০ হেক্টর জমিতে বাঁধা কপি, ২০০ হেক্টর জমিতে বেগুন, যা শীলকূপ, সাধনপুর, সরল, বৈলছড়ি, চাম্বল, পুঁইছড়িতে বেশি উৎপাদন হয়। ২০ হেক্টর জমিতে ফুলকপি, ১২০ হেক্টর জমিতে মূলা, ৫০ হেক্টর জমিতে মূলা শাক, ৫০ হেক্টর জমিতে লাল শাক, ১৫০ হেক্টর জমিতে বরবটি, ২৫০ হেক্টর জমিতে দেশী শিম, ৬০ হেক্টর জমিতে ফরাস শিম, ১২০ হেক্টর জমিতে লাউ এবং ৮০ হেক্টর জমিতে তীত করলা, ৩৫ হেক্টর জমিতে মিষ্টি কুমড়া মিলে শীতকালীন সবজি, ২৫০ হেক্টর জমিতে মসলা ফসলও ৩৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ ও বাংগী উৎপাদন হচ্ছে বলে জানান উপজেলা কৃষি অফিস।

 

শীতের আগাম সবজিতে ভরপুর বাঁশখালীর হাঁটবাজারগুলো। শহুরে পাইকারের ভীড় জমাতে দেখা যায় শীতকালীন সবজির বাজারগুলোতে।বর্তমানে বাঁশখালীর প্রতিটি হাট বাজারে শীতের সবজি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও এবার কিন্তু সবজির দাম চড়া হওয়ায় আগের মত সহজে সকল ধরনের সবজি কিনতে পারছেনা সাধারণ ক্রেতারা। পাইকারী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তা আরো কম দামে ক্রয় করলেও চড়াদামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে এমনটি জানান খুচরা ক্রেতাসাধারণ। বাঁশখালীর প্রধান সড়কের সাহেবের হাট, গুনাগরী, বৈলছড়ি বাজার, শিলকুপের টাইম বাজার, নাপোড়া বাজার ও চাম্বল বাজার এলাকায় প্রতিদিন সকালে প্রচুর পরিমাণ শীতের সবজি বিক্রি হয় পাইকারিভাবে। পাইকারি ক্রেতারা তা চাষীদের কাছ থেকে কিনে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিপুল মুনাফার মাধ্যমে রপ্তানি করে থাকে।

 

শিলকুপের পূর্ব-মনকিচর এলাকার কৃষক মো. হোছেন বলেন- ‘আমি ১ কানি মতো শিমের চাষ করেছি। আমার ক্ষেতে এবার প্রচুর পরিমাণ শিম উৎপাদন হয়েছে। আমরা পাইকারিভাবে প্রতি কেজি ৫০/৬০ টাকা বিক্রি করলেও ব্যবসায়ীরা তা আরো চড়া দামে ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে। আমরা পাইকারীভাবে বিক্রি করতে গিয়ে সেই দাম পাই না। অথচ হাতবদলের পর নানাভাবে দাম বাড়তে থাকে।’

 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু ছালেহ বলেন, ‘এবার বাঁশখালীতে প্রচুর পরিমাণ শীতকালীন সবজি উৎপাদিত হয়েছে। স্থানীয় হাট-বাজার গুলোতে সবজির যথেষ্ট সয়লাভ হয়েছে। সাধারণ চাষীরা আগাম সবজির চাষ করে সন্তুষ্টজনক দাম পেয়ে খুশি। তিনি আরো বলেন- 'চট্টগ্রামের অধিকাংশ সবজির চাহিদা যোগান দেয় বাঁশখালী। বাঁশখালী থেকে প্রতিদিন শতাধিক ট্রাকবোঝাই সবজি শহরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে যায়। দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিমের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাঁশখালীর কৃষকদের শিমের আবাদের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বলেও জানান তিনি।'

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর