• শনিবার ৩০ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৬ ১৪৩০

  • || ১৯ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

“বাউল শিল্পী গ্রেফতারের সঙ্গে বাউল সঙ্গীতের সম্পর্ক নেই”

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২০  

বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাউল সঙ্গীতশিল্পীকে গ্রেফতারের সঙ্গে বাউল সঙ্গীতের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, বাউল গানেরতো কোনো দোষ নেই। কিন্তু যারা বাউল গান করেন সে ধরনের ব্যক্তি বিশেষ যদি কোনো অপরাধে সম্পৃক্ত হন তাহলে আইন তার আপন গতিতে চলবে। আইন সে ব্যবস্থা নেবে, যার সঙ্গে গানের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

 

প্রধানমন্ত্রী এবং সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বুধবার জাতীয় সংসদে তার জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল’র (জাসদ) এমপি হাসানুল হক ইনুর এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন।

 

ড. শিরীন শারমীন চৌধুরী এ সময়ে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করছিলেন।

 

শরিয়ত বাউলকে (শরিয়ত সরকার) আইসিটি আইনে গ্রেফতার করে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়ার প্রসঙ্গ টেনে ইনু বিশ্ব ঐতিহ্যের বাউল সম্প্রদায়কে রক্ষায় শেখ হাসিনার সরকারের উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চান এবং পূর্ববর্তী সরকারের সময় বাউলদের চুল কেটে দেয়া থেকে শুরু করে বাউল গান ও জারিগানের ওপর আক্রমণ সংঘটিত হয়েছিল বলেও স্মরণ করিয়ে দেন।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাউল গানকে বিশ্ব ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি এবং সফল হয়েছি।

 

শেখ হাসিনা বলেন, বাউল গান যারা করেন তারা যে সব অপরাধের উর্ধ্বে এমন গ্যারান্টি নিশ্চই কেউ দিতে পারবে না।

 

যেহেতু গ্রেফতার করা হয়েছে সেহেতু সে ধরনের অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাকতে পারে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, এরসঙ্গে ঐতিহ্যের বিষয়টি মেলানো উচিত নয়।

 

তিনি বাউলদের উদ্দেশে বলেন, এমন কোনো কাজ তারা যেন না করেন, আজকে বাউল গান যে, বিশ্ব ঐতিহ্যে স্থান করে নিয়েছে তা যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। সে বিষয়ে আমাদের যেমন সচেতন থাকা দরকার তেমনি তাদেরও (বাউল) সচেতন করা দরকার।

 

তার এক অনুষ্ঠানে (শরিয়ত সরকার) ‘ইসলামী মূল্যবোধকে’ তিনি আঘাত করেছেন মর্মে একজন ইসলামী চিন্তাবিদের করা ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে’ মামলার পরিপ্রেক্ষিতে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা পুলিশ গত ৯ জানুয়ারি বাউল শরিয়ত সরকারকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার করে।

 

শেখ হাসিনা বলেন, ’৭৫ এর জাতির পিতাকে হত্যার পর একের পর এক ক্যু’তে সংবিধান লঙ্ঘন করে অনেকেই অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন। সেখানে কোনো গণতান্ত্রিক ধারা ছিল না। আর সামরিক শাসকরা ক্ষমতায় এসেই রেডিও, টিভিতে ঘোষণা দেয়- ‘আজকের থেকে আমি রাষ্ট্রপতি হলাম।’ হলাম বলেই তাদের কাজ হচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। সুইপারের কাজটাই তারা আগে শুরু করে। এটা আমরা সবসময় দেখেছি-আইয়ুব খান, জেনারেল জিয়া এবং এরশাদের আমলেও তা দেখেছি, বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

 

তিনি আরো বলেন, চার চারটি মিলিটারি ডিক্টেটর শাসন দেখেছি। তারা আগে রাস্তার পাশের কচু, ঘেচু যা পায় তা কেটে-কুটে সাফ করে, দেয়ালগুলো মুছে সব পরিষ্কার করায়। আবার কেউ সাইকেল চালিয়ে দেখায় সাশ্রয় করছি। অথচ পরে দেখা যায়- পৃথিবীর সবথেকে দামি গাড়ি নিয়ে আসছে।

 

তিনি জিয়া এবং খালেদা জিয়ার নাম উল্লেখ না করে তাদের প্রতি ইঙ্গিতে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ বলছে কৃচ্ছতা সাধন করছি-একেবারে টি-শার্ট পড়ে নেমে গেল (মাঠে কাজে)। অথচ দেখা গেল প্যারিসের থেকে স্যুট আসে, ফ্রেন্চ শিফন শাড়ি আসে, তখনকার সবথেকে দামি সানগ্লাস রেব্যান পড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। 

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কাজেই শুধু চুল কাটা নয়, আরো অনেক কাজই তারা করেছে। এরকম বহুকিছু আমাদের জীবদ্দশায় দেখেছি। কারণ এগুলো করে তারা ক্ষমতার ভিতটা একটু পোক্ত করা বা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো যায় সেজন্য।

 

তিনি বলেন, এ ধরনের উদ্যোগ মাস ছয়েক টেকে এবং তারপরেই মানুষের কাছে আসল চেহারা প্রকাশ পেয়ে যায়। কাজেই এখানেও যদি কোনো ধরনের অপরাধ কেউ করে থাকেন, আমরা সেটা দেখবো এবং কারা করছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেব। 

 

‘কারণ অহেতুক কারো চুল কাটা বা গানের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাটা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়’ উল্লেখ করে কুষ্টিয়ার বাউলদের এলাকাটার উন্নয়ন স্থানীয়দের বাধা অতিক্রম করে আওয়ামী সরকারই করে দিয়েছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী। 

 

সরকার প্রধান বলেন, সে সময় সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা ওবায়দুল কাদের বাউল এবং স্থানীয়দের বুঝিয়ে তাদের জন্য একটি সুন্দর পরিবেশ গড়ে দেন বাউল গানের ঐতিহ্যকে রক্ষা করার জন্য। যে উদ্যোগের ফলেই আজকে আমরা এ ঐতিহ্য পেয়েছি (ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যে অন্তর্ভুক্তি)।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর