• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

বিএনপি-জামাত শাসনামলে এমপিওভুক্তিতে লাগামহীন দুর্নীতি

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৯ জানুয়ারি ২০২১  

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি নিয়ে কোটি টাকার দুর্নীতি ধরা পড়েছে। বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিওভুক্তিকরণের নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করতে ব্যর্থ হওয়া অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেও নিয়ম ভেঙে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এতে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের ঘটনা ঘটেছে। জনসংখ্যা ও প্রাপ্যতাকে বিবেচনায় না এনে ওই সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিরা নিজ নামে, পিতা-মাতা, স্ত্রী এমনকি শিশুকন্যার নামেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে তা এমপিওভুক্ত করেছেন।
বাংলাদেশ শিক্ষা তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস) থেকে বিভাগওয়ারি এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি তালিকা দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, গত ১০ বছরে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে তাতে ১৯৯৭ সালের জারিকৃত নীতিমালাটি মানা হয়নি। এছাড়া সব শর্ত পূরণ করা সত্ত্বেও ঢাকা বিভাগেই এক হাজার ৩২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হতে পারেনি।
অন্যদিকে রাজশাহী বিভাগে দুই হাজার ৮৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বেশি এমপিও পেয়েছে। এমপিও প্রাপ্তির দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি বঞ্চিত হয়েছে সিলেট বিভাগ। এই অনিয়মের কারণে এমপিও বাবদ বরাদ্দকৃত টাকা ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে এক বিভাগে বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও পেলেও অন্য বিভাগে কম পেয়েছে। ব্যানবেইসের তথ্য মতে, রাজশাহী বিভাগে বর্তমানে এত বেশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিও পেয়েছে যে, এখানে আপাতত আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রয়োজন নেই।
সূত্র জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া, তার পুত্র তারেক রহমানের নামেও বেশকিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে নীতিমালা ভেঙে এমপিও দেওয়া হয়। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সে সময়ের প্রতিমন্ত্রী আ ন ম এহছানুল হক মিলন চাঁদপুরের কচুয়ায় নিজ নির্বাচনী এলাকায় জোটের ৫ বছরে প্রায় ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিজ ও আত্মীয়-স্বজনের নামে নামকরণ করেছেন। সরকারের মেয়াদের শেষ কর্মদিবসে ২০০৬ সালের ২৩ অক্টোবর জোট সরকার সাড়ে সাত হাজার আবেদনকে ফেলে দিয়ে মাত্র আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গোপনে এমপিওভুক্ত করে।
জানা গেছে, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে প্রধানত রাজনৈতিক বিবেচনায়। স্থানীয় সংসদ সদস্য কিংবা প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের ইচ্ছা অনুযায়ীই খোলা হয়েছে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান। প্রভাব খাটিয়ে অনেকেই নিজের নামে অথবা পিতা-মাতার নামে হাইস্কুল অথবা আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। এ ক্ষেত্রে স্থান নির্বাচনের বেলায় বাস্তব প্রয়োজনীয়তার চেয়ে ব্যক্তির ইচ্ছা-অনিচ্ছাই প্রাধান্য পেয়েছে। ফলে বিগত এক দশকে এমন বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে যেসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অস্বাভাবিক কম।
ব্যানবেইস প্রতিবেদন মতে, দেশে বর্তমানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৫ হাজার ৫৯০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন প্রয়োজনের তুলনায় বেশি। ১৫ কোটি জনসংখ্যার জন্য বিদ্যমান নীতিমালা অনুসারে (প্রতি ১০ হাজার জনসংখ্যার জন্য ১টি স্কুল) দেশে ১৫ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্যতা হয়। বর্তমানে স্কুলের সংখ্যা ১৭ হাজার ৭৩৭টি। রয়েছে অতিরিক্ত জনবল। এ লক্ষ্যে চিহ্নিত অতিরিক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আশপাশের সমজাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত করে অতিরিক্ত জনবল দেশের অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শূন্য পদে সমন্বয়ের ব্যবস্থা করার সুপারিশ করা হয়। চারদলীয় জোট সরকারের সময় দাখিল করা ওই প্রতিবেদনের সুপারিশ বাস্তবায়ন হয়নি।
বিপুল সংখ্যক অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান : রাজশাহীর ১টি উপজেলায় ২১টি কলেজ রয়েছে। যশোরের ১টি ইউনিয়নে ২টি গার্লস কলেজ রয়েছে। অথচ বান্দরবান জেলার চারটি উপজেলায় ৮টি নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন থাকলেও সেগুলো স্থাপনের কোনো উদ্যোগ নেই। অপ্রয়োজনীয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে বান্দরবানে ৩টি স্কুল, চট্টগ্রামে ২০টি স্কুল, ৯টি মাদ্রাসা ও ১৩টি কলেজ, কক্সবাজারে ১৩টি স্কুল ও ২টি মাদ্রাসা, রাঙ্গামাটিতে ৫টি স্কুল ও ১টি কলেজ, খাগড়াছড়িতে ৫টি স্কুল, বি.বাড়িয়ায় ১২টি স্কুল, ৩টি মাদ্রাসা ও ৭টি কলেজ, চাঁদপুরে ১১টি স্কুল, ৪৬টি মাদ্রাসা, ৯টি কলেজসহ ৬৬টি অতিরিক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। একইভাবে কুমিলায় বিভিন্ন ধরনের ১৮৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ফেনীতে ৩৯, লক্ষ্মীপুরে ১২৮, নোয়াখালীতে ১৩, ঢাকায় ২২, গাজীপুরে ১২৯, মানিকগঞ্জে ১১, মুন্সীগঞ্জে ৯, নরসিংদীতে ৪৩, ফরিদপুরে ১৩, রাজবাড়ীতে ৩০, মাদারীপুরে ৩৪, গোপালগঞ্জে ২৫, জামালপুরে ৫০, শেরপুরে ১৫, কিশোরগঞ্জে ৪২, ময়মনসিংহে ২০৩, টাঙ্গাইলে ২৭৩, নেত্রকোনায় ২০, খুলনায় ১১৯, সাতক্ষীরায় ১০১, বাগেরহাটে ১৭৩, কুষ্টিয়ায় ৭, মেহেরপুরে ২, যশোরে ৩২৯, নড়াইলে ৩৬, ঝিনাইদহে ৪২, মাগুরায় ৬৩, বরিশালে ১৩৪, পটুয়াখালীতে ২৮৯, বরগুনায় ১৩৮, পিরোজপুরে ২৫৫, ঝালকাঠিতে ১৯৪, ভোলায় ৯৯, পঞ্চগড়ে ১১৭, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৮৪, দিনাজপুরে ৩৬৬, নীলফামারীতে ৮৪, রংপুরে ২১৯, গাইবান্ধায় ১৭৮, লালমনিরহাটে ৩৮, কুড়িগ্রামে ১৬৪, বগুড়ায় ১৫৩, জয়পুরহাটে ৮০, নওগাঁয় ১৯২, রাজশাহীতে ৩০১, চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১০৮, নাটোরে ১১৭, সিরাজগঞ্জে ১০১, পাবনায় ৫০ এবং সিলেটে ১৭টি অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ওই হিসাব অনুযায়ী দেশে সর্বোচ্চ ৩৬৬টি অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে দিনাজপুরে। সংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যশোর জেলা। এ জেলায় অপ্রয়োজনীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩২৯টি।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর