• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

যে কারণে সংস্কার করা হলো হাজরে আসওয়াদের

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল ২০২০  

জান্নাত থেকে অবতীর্ণ হাজরে আসওয়াদ। কালো রঙের প্রাচীন পাথর। যা পবিত্র কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মাতাফ থেকে দেড় মিটার (চার ফুট) উঁচুতে অবস্থিত। 

 

৬০৫ খ্রিস্টাব্দে মক্কার সব গোত্রের দ্বন্ধ নিরসন করে এটি প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে কাবা ঘরে স্থাপন করেন। কাবা শরিফ তাওয়াফের সময় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ এ পবিত্র পাথরটিকে চুম্বন করেন।

 

হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘হাজরে আসওয়াদ’ প্রথমে দুধ বা বরফের চেয়েও সাদা ও মসৃণ অবস্থায় জান্নাত থেকে অবতীর্ণ করা হয়। অতঃপর আদম সন্তানের পাপে তা কলো হয়ে যায়।’ (তিরমিজি, মিশকাত)।

 

সম্প্রতি এটির টুকরো টুকরো খণ্ডগুলোর সংস্কার কাজ করা হয়। এ সংস্কার কাজ ১৮ এপ্রিল শেষ হয়। সংস্কার কাজ শেষে মেরামতকারীরা এটিকে চুম্বন করেন। যার একাধিক ভিডিও প্রকাশ করে হারামইন কর্তৃপক্ষ।

 

বৈশ্বিক মহামারি প্রাণঘাতী করানার কারণে বিগত দুই মাস ধরে কাবা শরিফের তাওয়াফ ও হাজরে আসওয়াদ চুম্বন বন্ধ রয়েছে। এ সময়ে হারামাইন কর্তৃপক্ষ হাজরে আসওয়াদের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছেন। প্রতি বছরই এ সংস্কার কাজ করতে হয়। এর বেশ কিছু কারণ রয়েছে-

 

হাজরে আসওয়াদ ভাঙা :

 

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে, কাবা ঘরে স্থাপিত হাজরে আসওয়াদটি ভাঙা। এটি প্রায় ৩ খণ্ডে বিভক্ত। সময়ের ব্যবধানে বিভিন্ন কারণে এটি আরোও অনেক টুকরো হয়ে যায়। হাজরে আসওয়াদের এ ভাঙা টুকরোগুলোকে রূপার ফ্রেম দিয়ে বিশেষভাবে বাঁধাই করে কাবা শরিফে স্থাপন করে রাখা হয়েছে। যার ফলে প্রায় এটি সংস্কার করার প্রয়োজন হয়।

 

ঐতিহাসিক বর্ণনা থেকে জানা যায়-

 

৬০৫ খ্রিস্টাব্দে কাবা শরিফ সংস্কার করার পর হাজরে আসওয়াদকে আগের জায়গায় কে স্হাপন করবেন এ নিয়ে মক্কার গোত্রপতিদের মধ্যে বিরাট দ্বন্দ্ব বেধে যায়। এ দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে গিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) নিজের গায়ের চাদর খুলে তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে চাদর ধরতে বলেন। আর সব গোত্রপতিরা চাদর ধরে তা বহন করে কাবা শরিফের কাছে নিয়ে যান। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সা.) সে পাথর কাবা শরিফে স্থাপন করার মাধ্যমে এ দ্বন্ধের অবসান ঘটান।

 

 হাজরে আসওয়াদ রূপা দিয়ে বাঁধানের মূল কারণ :

হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে গিয়ে তা রূপা দিয়ে বাধাই অবস্থায় দেখে অনেকের মনে এ প্রশ্ন জাগে যে হাজরে আসওয়াদ বাঁধানো কেন? আবার হাজরে আসওয়াদে এত ফাটলই বা কিসের? বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়-

 

> ৬৪ হিজরিতে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে কাবা ঘরে আগুন লাগলে হাজরে আসওয়াদটি ভেঙে একাধিক খণ্ড হয়ে যায়। কেউ কেউ বলেন এটি ৩ খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যায়। পরে হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের এটিকে রুপার ফ্রেমে বাধাই করে পুনরায় কাবা চত্বরে স্থাপন করেন।

 

> ৩১৭ হিজরীতে পূর্ব আরবের কারামতি সম্প্রদায় কাবা ঘর আক্রমণ করে ভাংচুর ও লুন্ঠন চালায়। কাবা ঘরের বিভিন্ন জিনিসের সঙ্গে হাজরে আসওয়াদও লুণ্ঠন করে নিয়ে যায় তারা। সে সময় দীর্ঘ ২২ বছর কাবা ঘরে হাজরে আসওয়াদ ছিল না।

 

> ২২ বছর পর ৩৩৯ হিজরিতে কারামতি সম্প্রদায়ের কাছ থেকে পাথরটি উদ্ধার করা হয়। লুণ্ঠনের সময় পাথরটি ব্যাপক ক্ষতি ও টুকরো টুকরো হয়ে যায়। হাজরে আসওয়াদের ভাঙা অংশগুলোর মধ্যে এখনো কয়েকটি খণ্ড নিখোঁজ রয়েছে। কেউ কেউ বলেন এখনো পাথরের ৮ খণ্ডাংশ নিখোঁজ রয়েছে।

 

হাজরে আসওয়াদের ভাঙা অংশগুলো কাদামাটি, মোম, অম্বর ইত্যাদি দিয়ে অত্যাধুনিক ব্যবস্থাপনায় মেরামতপূর্বক বাধাই করে রাখা হয়েছে।

 

যখনই পাথরটিতে কোনো সমস্যা বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া চিহ্ন দেখা যায় তখনই হারামাইন কর্তৃপক্ষ তা সংস্কার করে থাকেন। এরই অংশ হিসেবে ১৮ এপ্রিল এটি পুনরায় সংস্কার করা হয়। সংস্কারের পর এর মেরামতকারীরা তাতে চুম্বন করেন।

 

উল্লেখ্য, হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বর্ণনা করেন, ‘হাজরে আসওয়াদ’ প্রথমে দুধ বা বরফের চেয়েও সাদা ও মসৃণ অবস্থায় জান্নাত থেকে অবতীর্ণ করা হয়। অতঃপর আদম সন্তানের পাপে তা কলো হয়ে যায়।’ (তিরমিজি, মিশকাত)।

 

মানুষের গোনাহ গ্রহণে কালো হয়ে যাওয়া পাথরের কোনো গুণ নয় কিংবা পাথরের কোনো ক্ষমতাও নেই। তবে বিশ্বনবী (সা.) এ পাথর স্পর্শ করেছেন, চুমু দিয়েছেন। তাই তাওয়াফের সময় কিংবা অন্য সময় এ পাথরে স্পর্শ বা চুমু খাওয়া বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি সুন্নত।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর