• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

যেভাবে ছড়াচ্ছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২০  

জনবহুল দেশ চীনসহ এশিয়ার কয়েকটি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে রহস্যজনক প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী এতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া সংক্রমিত হয়েছে প্রায় সাড়ে চারশোজন।

 

কিন্তু ভাইরাসটির প্রকৃতি এবং কিভাবেই বা তা প্রতিরোধ করা যেতে পারে এ সম্পর্কে এখনো বিজ্ঞানীরা বিশদভাবে জানার চেষ্টা করছেন।

 

করোনা ভাইরাস কী এবং কীভাবে ছড়ায়?

করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায় নি।

 

এটি অত্যন্ত দ্রুত ছড়াতে পারে এবং সোমবারই বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত করেছেন যে এ ভাইরাস একজন মানুষের দেহ থেকে আরেকজন মানুষের দেহে ছড়াতে পারে।

 

এই ভাইরাস মানুষের ফুসফুসে সংক্রমণ ঘটায় এবং শ্বাসতন্ত্রের মাধ্যমেই এটি একজনের দেহ থেকে আরেক জনের দেহে ছড়ায়। সাধারণ ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায় হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ।

 

ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটি করোনাভাইরাসের একটি নতুন প্রজাতি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি হয়তো ইতিমধ্যেই ‘মিউটেট করছে’ অর্থাৎ নিজে থেকেই জিনগত গঠন পরিবর্তন করে নতুন রূপ নিচ্ছে, যার ফলে এটি আরো বেশি করে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

 

এক দশক আগে সার্স নামে যে ভাইরাসের সংক্রমণে পৃথিবীতে ৮০০ লোকের মৃত্যু হয়েছিল সেটিও ছিল এক ধরণের করোনাভাইরাস।

 

করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর এবং কাশি। কিন্তু এর পরিণামে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটতে পারে।

 

যেহেতু এই ভাইরাসটি নতুন, তাই এর কোন টিকা বা ভ্যাকসিন এখনো নেই, এবং এমন কোন চিকিৎসা নেই যা এ রোগ ঠেকাতে পারে।

 

প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের হাত থেকে রক্ষা পাবার একমাত্র উপায় হলো, যারা ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছে বা এ ভাইরাস বহন করছে তাদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। এছাড়া বার বার হাত ধোয়া, হাত দিয়ে নাক-মুখ স্পর্শ না করা, ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরা ইত্যাদি করলেও এর থেকে দূরে থাকা যায়।

 

এ সম্পর্কে হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গ্যাব্রিয়েল লিউং এক নির্দেশনায় বলেছেন, হাত সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে, বার বার হাত ধুতে হবে। হাত দিয়ে নাক বা মুখ ঘষবেন না, ঘরের বাইরে গেলে মুখোশ পরতে হবে।

 

‘আপনি যদি অসুস্থ হয়ে থাকেন তাহলে মুখোশ পরুন, আর নিজে অসুস্থ না হলেও, অন্যের সংস্পর্শ এড়াতে মুখোশ পরুন’ - বলেন তিনি।

 

উহান শহরে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে কমপক্ষে ১৫ জন চিকিৎসাকর্মী নিজেরাই এতে আক্রান্ত হয়েছেন।

 

এ রোগের উৎপত্তি কোথায়, কীভাবে?

মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। ৩১শে ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে।

 

এর পর ১১ই জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসজনিত রোগে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৪৪০ জন আক্রান্ত বলে চিহ্নিত হয়েছে।

 

তবে বিশেষজ্ঞরা অনেকে বলছেন, আক্রান্তের প্রকৃত সংখ্যা আরো অনেক বেশি, এমনকি এক হাজারেরও বেশি লোক এ ভাইরাস সংক্রমণের শিকার হয়ে থাকতে পারে।

 

সাধারণত ভাইরাস মানুষের শরীরে ঢোকার পর তার দেহে সংক্রমণের লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে কয়েকদিন সময় লাগে।

 

ঠিক কীভাবে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তা এখনও নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে পারেন নি বিশেষজ্ঞরা।

 

তবে তারা বলছেন, সম্ভবত কোন প্রাণী এর উৎস ছিল। প্রাণী থেকে প্রথমে ভাইরাসটি কোন মানুষের দেহে ঢুকেছে, এবং তারপর মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়েছে।

 

এর সাথে উহান শহরে সামুদ্রিক খাবারের একটি বাজারে গিয়েছিল এমন লোকদের সম্পর্ক আছে এবং ওই বাজারটিতে অবৈধভাবে বন্যপ্রাণী বেচাকেনা হতো বলে বলা হচ্ছে।

 

ভাইরাসটি এখন চীনের অন্যান্য শহর এবং চীনের বাইরে থাইল্যান্ড, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম এক ব্যক্তির দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। এই ব্যক্তি উহানে গিয়েছিলেন বলেও জানানো হয়।

 

এ ভাইরাস যেন আরো না ছড়ায় সে জন্য অনেক বিমানবন্দরেই যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

 

এর আগে সোয়াইন ফ্লু বা ইবোলার ক্ষেত্রে যেমন হয়েছিল - তেমনি এই করোনাভাইরাস সংক্রমণের জন্য আন্তর্জাতিক জরুরি সতর্কতা জারি করা হবে কিনা - সে ব্যাপারে আজই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর