• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় ব্যাপক ছাড়

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ১৮ জুন ২০২০  

প্রাণঘাতি নভেল করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে দেশের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনর্গঠনে প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রাখা এবং যথাযথ রাজস্ব আহরণের স্বার্থে আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে শুল্ক কর কাঠামোকে আরও উদার ও যৌক্তিকীকরণ করা হয়েছে। সেখানে দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নজর দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে দেশীয় শিল্প খাতের সুরক্ষায় বহুমুখী উদ্যোগের কথা বলেছেন। এর মধ্যে শিল্প খাতে বেশকিছু কর-ছাড়ও দেওয়া হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে বিনিয়োগের সুযোগ। বলা হচ্ছে, এসব সিদ্ধান্তের ফলে দেশে বিনিয়োগের সঙ্গে বাড়বে কর্মসংস্থান। একই সঙ্গে বিকশিত হবে দেশীয় শিল্প।

 

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘দেশের বিনিয়োগ ও ব্যবসাবাণিজ্যের প্রসার, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং রপ্তানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বহুদিন ধরে কর অব্যাহতি সুবিধা দিয়ে আসছে। বর্তমানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাত সম্পূর্ণ কর অব্যাহতি সুবিধা ভোগ করছে। অনেক খাত অত্যন্ত হ্রাসকৃত হারে কর প্রদান করছে। এর ফলে ভিত্তি সংকুচিত হলেও বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। কর অবকাশ সুবিধা বহাল রাখার পাশাপাশি আগামী অর্থবছরে নতুন কয়েকটি খাতে এই সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি শুল্ক কর আরও উদার ও যৌক্তিক করা হয়েছে। এতে দেশীয় শিল্প সুরক্ষা পাবে।’

 

জানা গেছে, প্রস্তাবিত বাজেটে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমানো হয়েছে। নতুন শিল্পকে কর অবকাশের সুযোগ দেওয়া, আবাসন ও পুঁজিবাজারে বিনাশর্তে কালো টাকা বিনিয়োগের সুযোগ এবং কমানো হয়েছে স্থানীয় শিল্পে আগাম কর। একই সঙ্গে দেশীয় বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল, উৎপাদিত পণ্য ও মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানির ওপর শুল্ক ও ভ্যাট কমানো হয়েছে। যদিও বাড়ানো হয়েছে একই ধরনের পণ্য বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে ভ্যাট ও শুল্ক। ফলে দেশীয় শিল্পপণ্যের প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

 

কিছু ক্ষেত্রে ভ্যাট ছাড়ের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে বিদ্যমান সুবিধার মেয়াদ। কৃষি খাতের বিকাশেও সরকার বেশকিছু ছাড় দিয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত সরিষার তেলে মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কৃষি খাতে প্রণোদনা দিতে পাওয়ার রিপার, পাওয়ার টিলার, অপারেটেড সিডার, কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার, রোটারি টিলারে ব্যবসায়ী পর্যায়ে মূসক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। মৎস্য, পোলট্রি ও ডেইরি খাতের টেকসই উন্নয়নে ইতোমধ্যে যেসব রেয়াতি সুবিধা আছে, সেগুলোও অব্যাহত রাখার পাশাপাশি দেওয়া হয়েছে দুটি নতুন উপকরণে রেয়াতি সুবিধা। এর মধ্যে আছে সয়াবিন অয়েল কেক ও সয়া প্রোটিন কনসেনট্রেট। এতে পোলট্রি খাদ্যসামগ্রীর আমদানি ব্যয় কমবে। এ ছাড়া পোলট্রি খাতের সুরক্ষায় প্রক্রিয়াজাত মুরগির অংশবিশেষ আমদানিতে শুল্কহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।

 

দেশে উৎপাদিত আলু দিয়ে পটেটো ফ্লেক্স তৈরির ওপর ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ, ভুট্টা দিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে মেইজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পেঁয়াজচাষিদের সুরক্ষা দিতে এবং আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে পেঁয়াজ আমদানিতে কিছুটা শুল্ক আরোপ এবং দেশে উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে লবণ আমদানিতে শুল্কহার বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়। এসএমই খাতের উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে এই খাতের উৎপাদিত পণ্য যেমনÑ পেরেক, স্ক্রু, ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ককর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। দেশি মধুচাষিদের স্বার্থ সংরক্ষণে বলা হয়েছে মধু আমদানিতে বিদ্যমান শুল্কহার বাড়ানোর কথা।

 

 

রপ্তানি বহুমুখীকরণে পাদুকাশিল্পের প্রসার ঘটাতে এই শিল্পের তিনটি কাঁচামাল আমদানিতেও রেয়াতি সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। রেফ্রিজারেটর ও এয়ার কন্ডিশনারের কম্প্রেশার উৎপাদনকারী দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় কাঁচামাল আমদানিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা সম্প্রসারণের। তবে দেশীয় জাহাজশিল্পের বিকাশে ড্রেজার আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রত্যাহার করে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

 

ডিটারজেন্ট শিল্পের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল লিনিয়ার অ্যালকাইল বেনজিন সালফোনিক অ্যাসিডের শুল্কহার কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়পারের কাঁচামাল আমদানিতে বিদ্যমান রেয়াতি সুবিধা সম্প্রসারণের। ইস্পাতশিল্পের বিকাশে কাঁচামাল রিফ্র্যাকটরি সিমেন্ট আমদানিতে শুল্কহার কমানো, এই শিল্পের কাঁচামাল উৎপাদনকারী শিল্পের সুরক্ষায় ফেরো ম্যাংগানিজ, ফেরো সিলিকন ও ফেরো সিলিকা-ম্যাংগানিজের আমদানি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে রেগুলেটরি ডিউটি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্লাস্টিক ও প্যাকেজিং শিল্পের বিকাশে প্রয়োজনীয় ফটোগ্রাফিক প্লেটস অব প্লাস্টিক আমদানিতে শুল্কহার কমানো, কাগজ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ওয়াশিং অ্যান্ড ক্লিনিং এজেন্ট আমদানিতে প্রস্তাব করা হয়েছে বিদ্যমান শুল্কহার কমানোর।

 

পরিবেশবান্ধব সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার উৎসাহিত করতে ইডকলের অংশীদার প্রতিষ্ঠানগুলোর ৬০ এএমপি পর্যন্ত সোলার ব্যাটারি কেনার ক্ষেত্রে উৎপাদন পর্যায়ে মূসক অব্যাহতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পর্যায়ে মোবাইল ফোন সেট উৎপাদনে ভ্যাট অব্যাহতি এবং সংযোজন খাতে ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপিত আছে। ভ্যাট অব্যাহতির মেয়াদ এ বছরের ৩০ জুন শেষ হবে। এ খাতকে দ্রুত বর্ধনশীল বলে মূসক অব্যাহতি আরও এক বছর অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাত বিকাশের লক্ষ্যে ভ্যাট কমানো হয়েছে দেশে উৎপাদিত লোডেড পিসিবি, আনলোডেড পিসিবি ও রাউটারে। একই সঙ্গে এসব পণ্য আমদানির ওপর ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।

 

দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের বিকাশে পলিস্টার, রেয়ন ও অন্য সব কৃত্রিম সুতার ওপর ভ্যাট মূল্যভিত্তিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সুনির্দিষ্ট কর আরোপের কথা হয়েছে, যার পরিমাণ কেজিপ্রতি ৬ টাকা। অন্যদিকে সব ধরনের কটন সুতার ওপর সুনির্দিষ্ট কর কেজিপ্রতি ৪ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এবারের বাজেটে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর কমানো হয়েছে করপোরেট ট্যাক্স। করপোরেট ট্যাক্স ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ৩২ শতাংশ করা হয়েছে। তবে অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ব্যাংক, বীমা, মোবাইল অপারেটর ও সিগারেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের করপোরেট ট্যাক্সের হার।

 

পাশাপাশি বাজেটে নতুন ৬ শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছেÑ ইলেকট্রিক্যাল ট্রান্সফরমার, আর্টিফিসিয়াল ফাইবার অথবা ম্যান মেড ফাইবার উৎপাদন, অটোমোবাইল পার্টস এবং যন্ত্রাংশ উৎপাদন, অটোমেশন অ্যান্ড রোবোটিক ডিজাইন অ্যান্ড ম্যানুফেকচারিং, আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সভিত্তিক সিস্টেম ডিজাইন ও উৎপাদন, ন্যানো টেকনোলজি বেইজড প্রোডাক্ট ম্যানুফ্যাকচারিং, এয়ারক্রাফট হেভি মেইনটেন্যান্স সার্ভিস অ্যান্ড পার্টস ম্যানুফেকচারিং। এর আগে ২৬টি শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা রয়েছে।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর