• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

দৈনিক জামালপুর

শখের কবুতর পালন যখন রাজিবের বাণিজ্যিক খামার

দৈনিক জামালপুর

প্রকাশিত: ২২ জানুয়ারি ২০২০  

৮ কিংবা ১০ বছর বয়সী রাজিব মাহমুদ। কবুতর পালনের খুব ইচ্ছে তার। মা বাবা বাঁধা দিত। একবার ঈদ সালামির টাকা জমালেন। এক প্রতিবেশিকে নিয়ে গেলেন পাড়ার কবুতর পালকের কাছে। ১০০ টাকা দিয়ে এক জোড়া বাচ্চা নিলেন। নানান অসুস্থতার কারনে তা মারা যায়। তবুও আশাহত হননি রাজিব মাহমুদ। দিন যাওয়ার সাথে সাথে তিনি আরো বেশি কবুতরের নেশার আশক্তিতে পড়েন। অন্যদিকে পড়ালেখার চাপ আর বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখবাল করাটা ছিল অত্যন্ত জরুরী। তবুও কবুতরের নেশা তাকে দূরে রাখতে পারেনি।

 

একবন্ধুকে নিয়ে গেলেন ঢাকা মিরপুর কবুতরের হাটে। সেদিন পাঁচ জোড়া ফেঞ্চি কবুতর কিনলেন। শুরুটা পাঁচ জোড়া দিয়ে হলেও এখন তার কবুতরের সংখ্যা প্রায় ১৫০ জোড়া। প্রথমে দেশের বিভিন্ন জেলার বড় বড় খামারিদের কাছ থেকে বাচ্চা সংগ্রহ করেন। প্রায় ১০ বছর আগে শুরু করা শখের কবুতর পালন এখন আর শুধু শখই নয়, পরিণত হয়েছে পেশায়। রাজিব এখন একটি বাণিজ্যিক ফেঞ্চি কবুতরের খামারের মালিক। সব খরচ বাদে তার মাসিক আয় প্রায় ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা।

 

টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘির নিজ বাড়িতে তার কবুতরের খামার। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ কবুতর কিনতে আসেন। তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে কবুতরের দাম কম নিয়ে থাকেন। অনলাইনেও (রাজিব পিজন টাঙ্গাইল) ফেসবুক আইডিতে বেশ ভালো কবুতর ক্রেতার চাহিদা আছে।

 

বাণিজ্যিকভাবে সফল একজন কবুতর খামারি রাজিব। কবুতর প্রেমিদের কাছে তিনি পরিচিত এক মুখ।

 

কবুতর হচ্ছে শান্তির প্রতিক। কবুতর বিভিন্ন প্রজাতির হয়ে থাকে । রাজিব পালন করেন ফেঞ্চি কবুতর। যা একদিকে সাইজে বড়। অন্যদিকে দেখতে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। বাহারি রং। লাইফস্টাইলও ভিন্ন। চমকপ্রদ। উৎপাদন ক্ষমতা অনেক ভালো। খাঁচার মধ্যে এই কবুতর পালন করা যায়।

 

ফেঞ্চি কবুতর পালন করার কারণ হিসেবে তিনি জানান, এই কবুতরগুলোর চাহিদা বাংলাদেশে অনেক বেশি। এরা খুব ভাল ডিম বাচ্চা করে। ২ মাসের বাচ্চা বিক্রি করার উপযোগি হয়। অবশ্য অনেকে একমাসের বাচ্চাও বিক্রি করে থাকেন।

 

তার কাছে ২ হাজার থেকে ২৫ – ৩০ হাজার টাকা দামের কবুতর আছে বলে রাজিব জানান। তিনি বলেন, এর মধ্যে- ডেনিশ, কুবার্গ লার্ক, কালো বিউটি হুমা, মুর হেড, লাহোর সিরাজি, বারানবার টাম্বপিটার, ব্লু পটার, বুখারা, এরাবিয়ান টাম্বপিটার, বাশিরাজ কোকা, হলেন্ড জেকোবিন, আমেরিকান সো কিং, লাল বোম্বাই,করমনা, ইন্ডিয়ান লোটন, রেন, সাদা বিউটি হুমা, সাদা লক্ষা, সাদা ফ্রিলবেক, আমেরিকান লক্ষা, রেছার, ইষ্টেচার, ঝর্না সার্ডিং, ছোয়া চন্দন সহ আরও কয়েক প্রজাতির কবুতর রয়েছে।

 

রাজিব মাহমুদের কবুতরের খামারের নাম রাজিব পিজন টাঙ্গাইল। তিনি আলাদা ঘরে খাচাঁয় কবুতর পালন করেন। তিনি বলেন, দেশের গ্রামগঞ্জের বাড়ির আঙিনায় বহু জায়গা খালি পড়ে আছে। এসব জায়গায় ঘর তুলে যে কেউ অনায়াসে কবুতর পালন করতে পারেন। তার মতে, বিদেশ ফেরত অনেকেই হতাশ হয়ে মাদক নেশায় জরিয়ে পড়ে। তারা দু এক জোড়া কবুতর দিয়ে শুরু করতে পারেন।

 

সৎ ভাবে ইনকামের জন্য সবাই রাজিবকে বাহবা দেয় বলে জানান। তার মতে, কবুতর বিনোদনের অন্যতম উৎস। খুব শান্ত,মায়াবী পাখি। মানুষের সহচার্য পছন্দ করে। ছেলে মেয়েদের গ্যাজেট আসক্তি কবুতর পালনে দূর হতে পারে। অবসর সময়ে বাজে নেশায় যুব সমাজ না জড়িয়ে কবুতর পালন করতে পারে।

 

রাজিব কবুতরের খামারের আয় দিয়ে ভবিষ্যতে গরুর খামার করবেন বলে জানান। রাজিব জানান, বাণিজ্যিক ভাবে এই কবুতর পালন করা সম্ভব। বেকার যুবকরা কবুতর পালন করে স্বনির্ভর হতে পারে। তবে এজন্য একটু জেনে শুনে নেয়া ভালো।

 

তিনি বলেন, ভাল কোয়ালিটির লাহোর বা ফান্টেল কবুতর বেশ লাভজনক। কারণ এরা খুব ভালো ডিম বাচ্চা করে। সবসময় এই সব প্রজাতিগুলোর চাহিদা বেশি থাকে। বর্তমানেও একজোড়া ভালো কোয়ালিটির ফেঞ্চি কবুতরের দাম প্রায় ১ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আছে।

 

কবুতর অসুস্থ হলে নিজেই চিকিৎসা করেন বলে তিনি জানান। তবে নতুন যখন ছিলেন কবুতরের ঠান্ডা-জ্বর পাতলা পায়খানা হতো, তখন বেশ ঝামেলায় পড়তেন তিনি। তার পরিচিত চাচা ঔষধ কোম্পানির মার্কেটিং অফিসার মোঃ মনির হোসেন তাকে কবুতর পালনে বিভিন্ন পরামর্শ দিতেন। কবুতরের সবচেয়ে মারাত্মক রোগ হলো পক্স, ব্যাকটেরিয়া, রাণীক্ষেত ও সাল্মুনেল্লা।

 

কবুতর খামারিদের মতে বাংলাদেশে ফেঞ্চি কবুতর পালনে অমৃত সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের কথার সত্যতা মিলেছে কবুতর রফতানির চিত্র থেকে। কিছুদিন আগে বাংলাদেশ থেকে জর্দানে ফ্রিলবেক রফতানি করা হয়েছে।

 

আরো জানা যায়, বাংলাদেশে অনেক কবুতর ব্রিডার আছেন। যারা নির্দিষ্ট প্রজাতির কবুতরের ব্রিড নিয়ে কাজ করেন।

 

ভবিষ্যতে খামার আরো বড় করবেন বলে রাজিবের পরিকল্পনা আছে। তিনি জানান, এই সেক্টরে সরকারী সহযোগিতা পেলে কবুতর রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে এই কবুতরের প্রচুর চাহিদা রয়েছে বলে তার কাছে জানা যায়।

দৈনিক জামালপুর
দৈনিক জামালপুর